দেশে দেশে কোরবানী ঈদ
- ফিচার ডেস্ক
প্রতিটি দেশে ধর্মীয় উৎসব পালনের উদ্দেশ্য এক রকম হলেও পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। সামনে কোরবানির ঈদ। বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মতো অন্যান্য দেশেও কোরবানির ঈদ পালিত হয়। বিভিন্ন অমুসলিম দেশগুলোর কোরবানির ঈদের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে এই লেখাটি—
চীনের মুসলিমরা বছরের শুরু ধরেন ঈদকে
শতকরা হারে কম হলেও অনেক মুসলিম দেশের চেয়ে চীনে মুসলিম সংখ্যা বেশি। এই দেশে প্রায় ১৬ কোটি মুসলিম বাস করে। দেশটির বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে মুসলিমরা। হুই, উইঘুর, কাজাক ও সালার জনগোষ্ঠী চন্দ্র বছরের পঞ্জিকা দেখে ঈদ উদযাপন করেন। ঈদ নিয়ে তাদের মাঝে নানা ধরনের প্রথা চালু রয়েছে। নিংঝিয়া প্রদেশের হুই মুসলমানরা বড় ঈদ বলে মনে করেন রোজার ঈদকে। অন্যদিকে, গানসু ও চিংহাইয়ের হুই মুসলিমরা রোজার ঈদকে বছরের শুরু বলে গণনা করেন।
আবার ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাকে বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হয়। চীনের মুসলমানরা যেখানেই কাজ করুক না কেন দুটি ঈদেই তারা বাড়িতে আসেন এবং পরিবারের সবাই একত্রে ঈদ উদযাপন করেন। ঈদুল আজহার মতো ঈদুল ফিতরও তারা ৩ দিনব্যাপী উদযাপন করেন। নারী-পুরুষ সবাই নতুন জামা-কাপড় পরেন। রঙিন কাগজ, বাণী সংবলিত ব্যানার ও পোস্টার ব্যবহার করে মসজিদ সাজানো হয়। ঈদের নামাজের আগে মসজিদে সাঁইরেন বা ঘণ্টা বাজানো হয়। তবে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মতো একা একটি পশু তারা কোরবানি দেন না। কয়েকজন একসাথে একটি পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন।
সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান থেকে কোরবানি দেওয়া হয় যুক্তরাজ্যে
যুক্তরাজ্যের মুসলিমরা নিয়মিত ধর্ম পালন করেন না। তবে ঈদগুলো অন্য সবার মতো তারাও বেশ আয়োজন করে পালন করেন। ৩০ লাখ মুসলিম রয়েছে যুক্তরাজ্যে। বছরের দুই ঈদে মুসলমানরা ট্রাফালগার স্কয়ারে মিলিত হন এবং ঈদ উদযাপন করেন। তবে সেখানকার ঈদ বাংলাদেশ বা উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের মতো তেমন আড়ম্বরপূর্ণ হয় না। যুক্তরাজ্যে প্রকাশ্যে পশু জবাই করা নিষিদ্ধ। তাই ঈদে নির্ধারিত এলাকায় সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান থেকে কোরবানি দেওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে অনেক এশিয়ান গ্রোসারি ঈদের সময় কোরবানির জন্য আগ্রহীদের নাম সংগ্রহ করে থাকে। ঈদের প্রায় ১ মাস আগে থেকে দোকানে দোকানে সাইনবোর্ড ঝোলানো থাকে ‘এখানে কোরবানির অর্ডার নেওয়া হচ্ছে।’ এখানে নাম লিখিয়ে প্রতি নামের বিপরীতে অর্থ দিয়ে যেতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোরবানির পর গরু বা ভেড়ার গোশত ঈদের পরের দিন গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করে তারা।
স্থানীয় মসজিদে পশু কোরবানি
মুসলিম প্রধান দেশ না হলেও পুরোপুরি ধর্মীয় নিয়ম মেনে ঈদ পালন করেন সুইডেনের মুসলিমরা। ওসা জিমনেশিয়ামে বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসী অনেক বাঙালি সেখানে নামাজের জন্য আসেন। বাংলাদেশের মতো সেখানেও নামাজের আগে কোরবানির তাৎপর্যের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর সুখ-সমৃদ্ধি কামনায় করা হয় বিশেষ মোনাজাত।
ঈদের দিনেও কর্মবিরতি নেই জার্মানির মুসলমানদের
জার্মানিতে প্রায় ৪৩ লাখের মুসলিমের মধ্যে ১৯ লাখ জার্মান নাগরিক। তবে জার্মানে যেসব মুসলিমরা বাস করেন তাদের বেশিরভাগ তুর্কি বংশোদ্ভুত। জার্মান মুসলমানরা দুই ঈদসহ কোনো ধর্মীয় উৎসবে সরকারি ছুটি পান না। যেসব মুসলমান সরকারি চাকরিজীবী তাদের খ্রিস্টান সহকর্মীদের ধর্মীয় উৎসবে ছুটি দেওয়া হলেও মুসলমানরা তা পান না। সেখানে কেবল খ্রিস্ট ধর্মীয় উৎসবেই জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়। তাই জার্মানিতে মুসলমানদের ঈদে ততোটা সমারোহ হয় না। তবে যেহেতু বেশিরভাগ মুসলমান বার্লিন বা শহরাঞ্চলে থাকেন তাই সেখানেই ঈদের নামাজ আদায় করেন।
কর্মব্যস্ত ঈদ কাটে অস্ট্রেলিয়াতেও
অস্ট্রেলিয়ায় মুসলিমদের জন্য ঈদের দিন আলাদাভাবে ছুটি থাকে না। তবে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও ইসলামিক স্কুলগুলো এই দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করে। এখানে আলাদা কোরবানির পশু কিনে লালনপালন করার সুযোগ না থাকায় কয়েকটি পরিবার মিলে একজনকে পশু কেনার এবং যত্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানরা এ দিন ‘বাকলাঙা’ এবং ‘লোকুম’ নামের দুটি তার্কিশ ডিম রান্না করেন। ঈদের দিন সকালে মুসলমানরা মসজিদে নামাজ আদায় করেন। তারপর কোরবানি দিয়ে গোশত এবং চামড়ার টাকা গরিবদের মাঝে দান করেন। মুসলমান ছাড়াও অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও এই গোশত উপহার হিসেবে দান করা হয়।
নিউইয়র্কে প্রবাসীদের ঈদ
নিউইয়র্কে যেসব মুসলিম বাস করেন এর বেশিরভাগ বাংলাদেশি। ঈদের দিন সবচেয়ে বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সেখানকার অন্যতম বাংলাদেশি প্রধান এলাকা জ্যামাইকায়। শহরের ম্যানহাটন, জ্যাকসন হাইটস, উডসাইড ও ব্রুকলিন এলাকায় বাংলাদেশিদের পরিচালিত জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি) হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় জামাতটি। ঈদে জেএমসিতে ৩টি জামাতের ব্যবস্থা হলেও বহু মুসল্লি জামাতে অংশ নিতে না পারায় জেএমসি গত ২ বছর ধরে ১০টি খোলা মাঠে নামাজের ব্যবস্থা করে আসছেন।