কর্মকর্তাদের আন্দোলনে স্থবির ইবি
- শাহজাহান নবীন, কুষ্টিয়া
কর্মকর্তাদের আন্দোলনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রশাসনিক কাজে নেমে এসেছে ভয়াবহ স্থবিরতা। ফলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলনসহ নানা কাজে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি কাগজপত্র উত্তোলন করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়ে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে শিক্ষকদের কটুক্তিকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে শিক্ষকরা। ফলে পরীক্ষা চললেও অনেক সিডিউল ক্লাস বাতিল হচ্ছে প্রতিদিন। এতে সেশন জটের শঙ্কা আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুত সংকট ও সমস্যা সমাধান করে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কর্মকর্তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখা ও শিক্ষকদের বিষোদগার করার ঘটনার তদন্তের লক্ষ্যে কমিটি গঠনের দাবি পাশ হয়। তদন্তে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন শিক্ষকরা। যথাসময়ে দাবি আদায় না হলে কর্মবিরতি পালনে সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষকদের দাবি যথাসময়ে পূরণ না হওয়ায় গত রোববার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকরা। সব ধরণের পরীক্ষা শিক্ষকদের কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকলেও ঘোষিত সময়ের মধ্যে কোনো ক্লাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এতে সব বিভাগেই সেশন জটের ব্যাপ্তী বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া উপ-রেজিষ্ট্রার পদের বেতন বৃদ্ধি ও চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে গত ১৩ মার্চ থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে নেমে এসেছে ভয়াবহ স্থবিরতা। বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞপ্তির পর শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলন করতে গিয়ে প্রশাসন ভবনে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। শামছুর রহমান, আবু জাফর, নারগিছ আরা, তমা খাতুন সহ কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন-‘চাকরির সার্কুলার দেয়ার পর মার্কসীট, সনদপত্র উত্তোলন করতে এসে কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে। তারা বলছে মার্কসীট, সনদপত্র উত্তোলন করতে হলে শিক্ষকদের কাছে যেতে। কর্মকর্তারা আমাদের কোনো কাজ করবে না বলে জানিয়ে দিচ্ছে। এভাবে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বের জের আমরা কেন ভোগ করবো?’ এমনকি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মুখোমুখি আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে সাধারণ পড়েছে শিক্ষার্থীরা। যে কারণে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকট সমাধান ও শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে মানবন্ধন করেছে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এসময় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন-‘কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়মিত অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে। তারা কর্মবিরতি নাম ভাঙিয়ে অফিস ফাঁকির ধুম চালাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা তাদের কাজ নিয়ে কর্মকর্তাদের কাছে গেলেই উচ্চবাচ্য করে তারা। নানা রকম ভাবে কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করে।’
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন-‘কর্মকর্তাদের দাবির ব্যাপারে শিক্ষকদের আপত্তি থাকতে পারে। শিক্ষকদের উচিত বিবাদমান বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সমাধানে আসা। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও কর্মবিরতি করে শিক্ষার্থীদের জিম্মী করার কোনো অধিকার কারো নেই। এভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না।’
এব্যাপারে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মো. সোহেলের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমান বলেন-‘শিক্ষার্থীদের দাবি যথাযথ। কোনো শিক্ষার্থী প্রশাসনিক কাজে গিয়ে হেনস্থার শিকার হলে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এমতাজ হোসেন বলেন-‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের জিম্মী করে কোনো কর্মসূচী দেয়ার পক্ষে আমরা নই। শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করলেও তা অনেক শিথীল করা হয়েছে। সব ধরণের পরীক্ষা অনুষ্টিত হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো শিক্ষক প্রয়োজন মনে করলে ক্লাসও নিচ্ছেন। আমাদের কর্মসূচীতে কাউকে বাধ্য করার সুযোগ নেই।