বৈশাখে বর্ণিল ইবি
- শাহজাহান নবীন, কুষ্টিয়া
পান্তা-ইলিশ খাওয়া হোক আর নাই হোক আজ পহেলা বৈশাখ। কয়েকদিন ধরেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে সে কি আয়োজন! আঁল্পনা, মুখোশ, পাপেট, নাটক, যাত্রা পালার মহড়া তো ছিলই। গলায় গলায় গানের ঐকতান। সব মিলিয়ে এক অন্যরকম উৎসবের প্রস্তুতি। আজ (১৪ এপ্রিল) প্রত্যুষে সূর্যমামার প্রভা বিতরণের পর থেকেই শুরু হয় মুল আয়োজন। চিরচেনা শিক্ষার্থীরা দলে দলে পাঞ্জাবী, শাড়ি, ধূতি, লুঙ্গি পরে ছুটে চলেছে যার যার বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগে বর্ষবরণের আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা, বাঙালী খাবার পরিবেশন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মহুলা পালা, পান্তা-ইলিশ উৎসব সহ নানা কর্মসূচী রয়েছে এবারের বর্ষবরণে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪২৩ বাংলা নববর্ষ বরণে প্রকৃতই নতুনত্বের ছোঁয়া লেগেছে। বর্ষবরণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠান ঘুরে ঘুরে জানা গেছে নানা অনুভূতির কথা।
‘আজ পহেলা বৈশাখ জানেন না? আমাদের হিসাববিজ্ঞান বিভাগে বর্ষবরণের জমকালো অনুষ্ঠান রয়েছে। তাই সকাল সকাল বের হয়েছি। ইশ! প্রতিটি দিন যদি এমন হতো’-একথা বলে আক্ষেপ করলেন বিভাগের পথে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলা খাঁটি বাঙালী পোশাকে জাহাঙ্গীর হোসেন নামে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
জাহাঙ্গীরকে পাশ কাটাতেই শাড়ি পরা একঝাঁক তরুণীর আগমন। গালে মুখে আঁল্পনা পরনে লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি। কারো কারো চুলের খোঁপায় ফুলের সমাহার। অনেকের হাতেও শোভা পেয়েছে ফুলের মালা। অনেকের হাতে ফুলের গোছা। দল বেঁধে বন্ধু-বান্ধবীরা একসাথে ঘুরছেন বাঁধন ছাড়া পাখির মত।
তবে বৈশাখের প্রথম দিবস যে শুধু কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী বা শিশুদের মাঝে সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়। বাইরে থেকে কেউ সস্ত্রীক, কেউ বা প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন উৎসবের এই ছুটির দিনটির সদব্যবহার করার তাগিদে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ গুলোর মধ্যে ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি, ইংরেজি, ফোকলোর সাহিত্য, অর্থনীতি, আইন, লোকপ্রশাসন, বাংলাসহ অন্যান্য বিভাগ হাতে নিয়েছে নানা আয়োজন।
এর মধ্যে বর্ষবরণের টাটকা আমেজ ছড়াতে সকাল থেকেই মেতে উঠে ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি, ইংরেজি, ফোকলোর ও বাংলা বিভাগ। ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের উদ্যোগে বেলা ১১টায় মঙ্গল ব্যবসায় প্রশাসন ভবন থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। বিভাগের সভাপতি মো. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের সড়ক সমূহ প্রদক্ষিণ শেষে জিমনেশিয়ামের সামনে গিয়ে সাংস্কৃতিক মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী খাবার খিচুরীর সাথে সরষে ইলিশ, ভর্তা, কাঁচা মরিচ, পিয়াঁজ দিয়ে সবাইকে আপ্যায়ন করে নেয় তারা। এরপর শুরু হয় মন মাতানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চলে বিকেল পর্যন্ত।
এছাড়া হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, ব্যবস্থাপনা ও ইংরেজি, ফোকলোর স্টাডিস বিভাগ একই রকম আয়োজন করে। শোভাযাত্রা শেষ করে সাংস্কৃতিক পর্বের মাধ্যমেই পুরো দিন সাজিয়ে নেন তারা। বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়।
তবে সব থেকে আকর্ষণীয় ছিল ‘বাংলা মঞ্চে’ বাংলা বিভাগের আয়োজন। ‘আজি এ ঊষার পুন্য লগনে…উদিছে নবীন সূর্য গগনে’ পঙক্তিটি বাংলা বিভাগের ব্যানারের শোভা বাড়িয়ে দেয়। পরে একের পর এক চোখ ধাঁধানো উপস্থাপনায় মাত করে দেয় দর্শক হৃদয়। হ্যাংলা পাতলা পিচ্চি বাবু সুমনের উচ্ছঁল নৃত্যের মুর্চ্ছনায় দর্শক সারির বাঁধভাঙা উল্লাস দেখেই বোঝা গেল তার নৃত্যের তাল কতটা শক্ত। এরপর জাতীয় পর্যায়ের নৃত্যশিল্পী আলমগীরের ক্ল্যাসিক নৃত্যের বিচার করতে নারাজ উপস্থিত সবাই। শুধু হাততালিতেই ক্ষান্ত থাকে দর্শক, শিক্ষক ও আরো যারা। তবে বাংলা বিভাগের আয়োজনের মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করে সাজ্জাদ হোসেনের নির্দেশনায় প্রদর্শিত মহুয়া পালা। নদের চাঁদের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া মহুয়া শেষমেষ দল ছেড়ে পালিয়ে জয়লাভ করে প্রেমের খেলায়। মহুয়া পালা, ফ্যাশন সো, কোরিওগ্রাফ, রজনী-সাইফুর জুটির কবিতা আবৃত্তি পুরো অনুষ্ঠানে যোগ করে নতুন মাত্রা। সব মিলিয়ে এবারের বৈশাখ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে উপহার দিয়েছে সাংস্কৃতিক চর্চার উত্তাল আবহ।
সহকারী অধ্যাপক তপন কুমার রায়ের সঞ্চালনায় বাংলা বিভাগের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধন করেন ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার। সাথে উপস্থিত ছিলেন প্রোভিসি অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার প্রমূখ।