সোনালী সবুজ কৃষ্ণচুঁড়ার ক্যাম্পাস
- শাহজাহান নবীন, কুষ্টিয়া
কাঠফাঁটা চৈত্রের দাবদাহে পুড়ছে মানুষ। হাসফাঁস করা গরমে ঝলসে যাচ্ছে প্রকৃতি। গাছ-পালা, পাখ-পাখালী সব এখন খরতাপে বিবর্ণ। তবে প্রকৃতির এমন বৈরীতায় বেশ অন্যরকম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কৃষ্ণচুঁড়া, সোনালু আর ঘাঁসফুলে ছেয়ে গেছে সবুজ ক্যাম্পাস। ‘চৈত্রে হয়তো ফোঁটেনি কৃষ্ণচুঁড়া তাতে ক্ষতি নেই, তোমার ঠোটেই দেখেছি এসেছে কৃষ্ণচুঁড়ার ঋতু, তুমি আছো তাই অভাব বুঝিনি তার’। কৃষ্ণচুঁড়া নিয়ে মহাদেব সাহার এই কবিতার কোনো উপযোগীতা মিলবে না এখানে। এমনকি সোনালু ফুলের দেশের কবি খ্যাত অরুণ সেনও বোধহয় পদবীটা বাদ দিতে চাইবেন যদি দেখে যান এই প্রাঙ্গন। যেখানে কৃষ্ণচুঁড়ার রঙে নীল আকাশ রঙ হারিয়ে হয়েছে রক্তরাঙা টুকটুকে লাল। যেখানে দক্ষিণা বাতাসে বেলী ফুলের সুবাসের সাথে রয়েছে হলুদ বরণ সোনালু ফুলের হাতছানি। মাথার উপরে লাল আকাশ, হাতের নাগালে সোনালু ফুলের অভিবাদন, আর পদতলে ঘাঁসফুলে ছেয়ে যাওয়া সবুজ ঘাঁসের কার্পেট। এ যেন এক প্রকৃতির এক মনোরম উপহার। আর এমনই প্রাকৃতিক রূপের ছড়াছড়ি এখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এখন বিশাল এক কৃষ্ণচুঁড়ার গাছ। টুকটুকে লাল ফুলে ছেয়ে গেছে তার প্রতিটি শাখা প্রশাখা। দেখে মনে হতে পারে ‘লাল ফটকের সংবর্ধনা’। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে এক দোকানী জানালেন, ‘অনেক বছর ধরে এই জায়গায় দোকান দিয়ে ব্যবসা করছি। কৃষ্ণচুঁড়ার গাছটি দেখতে দেখতে অনেক বড় হয়ে গেছে। দুর-দুরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে এসে কৃষ্ণচুড়ার এই গাছটির সাথে ছবি তুলবেই। এই গাছের সাথে ছবি না তুললে যেন তাদের মন ভরে না।’
‘ভ্যাঁপসা গরমে একটু প্রশান্তির জন্য ডায়না চত্বরে গিয়ে বসে থাকি। ক্লাস না থাকলে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেই ওখানে। ঘাঁসের উপর সোনালু ফুলের পাপড়ী ছড়ানো থাকে। সবুজের উপর হলুদ হলুদ পাপড়ী দেখেই মনটা ভরে যায়।’ সোনালু ফুলের টানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বরের নিয়মিত আড্ডাবাজ তন্নি, জিনিয়া, সোহেল এভাবেই তাদের মনের কথা প্রকাশ করলেন।
শুধু প্রধান ফটক নয়, প্রশাসন ভবনের সামনে খালেদা জিয়া হলের প্রাণকেন্দ্র, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের সামনে, টিএসসিসির সামনে, মীর মশাররফ হোসেন ভবনের সামনে সহ নানা জায়গায় দেখা মিলবে কৃষ্ণচুঁড়া গাছ। ক্যাম্পাসের যেদিকেই তাকান, সেদিকেই রয়েছে কৃষ্ণচুড়ার লাল অভিবাদনের আঁকিবুকি।
এছাড়া পুরো ডায়না চত্বর ও ফ্রেন্ডশীপ চত্বর জুড়ে রয়েছে নয়নাভীরাম সোনালু ফুলের সমাহার।
শুধু কি কৃষ্ণচুঁড়া আর সোনালু ফুলেই শেষ সবুজ ক্যাম্পাসের চৈত্রের সৌন্দর্য? না, কৃষ্ণচুঁড়া, সোনালুর সাথে যোগ হয়েছে ঘাঁসফুল। তুলতুলে নরম সবুজ ঘাঁসের চাদরে আবৃত গোটা ক্যাম্পাস। ঘাঁসের আচ্ছাদনে মনে হবে এ যেন ঘাঁসের কার্পেট। তানিয়া ও নিয়ামুল বললেন, ‘তকতকে সবুজ ঘাঁসের উপর বসে গল্প করার অনুভুতি অন্যরকম। তবে এখন সে অনুভুতি ভিন্ন স্বাদ পাচ্ছে। কারণ ঘাঁসের উপর এখন ঘাঁসফুলের দোলাদুলি। সবুজ মাঠ এখন সাদা তুষার পাতে আবৃত হওয়ার মতো। এমন ক্যাম্পাস কোথায় আছে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্রিকেট মাঠ, ফুটবল মাঠ, স্মৃতিসৌধ চত্বর ও শহীদ মিনার চত্বরে গিয়ে তানিয়া ও নিয়ামুলের কথার সত্যতা মিলবে। সব মিলে পুরো ক্যাম্পাসে এখন চৈত্রের রঙ। তাই কৃষ্ণচুঁড়ার লাল আকাশ, সোনালু ফুলের অভিবাদন ও শুভ্র ঘাঁসফুলের গালিচায় আপনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। শেষ কথায় স্বরচনায় বলতেই হবে:
‘আমার প্রাঙ্গণে চৈত্রের খরতাপে, কৃষ্ণচুঁড়ার আকাশ দেব।