আড্ডার ছলে ইংরেজি শিখি
- শাহজাহান নবীন, কুষ্টিয়া
হাতে হাতে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার নানা ধরণের লেকচার শিট নিয়ে সবাই খুব ব্যস্ত। মনোযোগের সঙ্গে যে যার হাতের শিট নিয়ে পড়ছেন একমনে। নিজের পড়া শেষ হলে পাশের জনকে পড়ে শোনাচ্ছেন। এরপর একে অন্যের পড়া শুনছেন। ভুল হলে শুধরে দিচ্ছেন। তবে অধ্যয়ণরত সবার উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে পর্যবেক্ষণ করছেন আব্দুল মান্নান। বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কোরআন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হয়েও তিনি শিখিয়ে চলেছেন ইংরেজি। এমনই দৃশ্যের দেখা মিলবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়ন্ত বিকেলের গোধূলী লগ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের পেয়ারা বাগান সংলগ্ন সবুজ চত্ত্বরে বসে শিক্ষার্থীদের আড্ডা। ইংরেজি শিখতে দলে দলে ভাগ হয়ে সবাই মত্ত ইংরেজি নিয়ে। ঠিক ধরেছেন, ওরা সবাই ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাবের সদস্য।
ক্লাবের পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়ায় ইংরেজির গুরুত্ব অনেক। আমরা যারা ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশুনার সুযোগ পাইনি, ইংরেজিতে তাদের দক্ষতা ও যোগ্য করে তোলার জন্য এই ল্যাংগুয়েজ ক্লাব খুলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখানে এসে ইংরেজি শিখছেন।’
কেমন শিখছেন তারা? কতটা অগ্রগতি হয়েছে তাদের ইংরেজি অধ্যয়নে, সে বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী রুমা আক্তার, ‘ইংরেজিতে নিজের মতো করে কথা বলার স্বাধ ছিল অনেক। আর সেই প্রয়োজনের তাগিদেই বান্ধবীকে নিয়ে এই ক্লাবের সদস্য হয়ে যাই। গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে ইংরেজি ভাষা শেখার কৌশলের কারণে আমরা সহজেই আমাদের ভুলগুলো ধরতে পারি। তাই ইংরেজি শেখার জন্য গ্রæপ করে পড়ার কোনো বিকল্প নেই। এই পদ্ধতি একা একা ঘরে বসে পড়ার থেকে অনেক কার্যকর।’
ক্লাবের আরেক সদস্য সামছুন্নাহার সীমা বলেন, ‘ক্যারিয়ারে ভালো কিছু করার জন্য ইংরেজির কোনো বিকল্প নেই। ইংরেজি শেখার তাগাদা অনেক আগে থেকেই ছিল। তবে সময়-সুযোগের অভাবে তা হয়ে উঠেনি। কিন্তু দু সপ্তাহ আগে এই ইংরেজি ল্যাংগুয়েজ ক্লাবের নাম শুনে এখানে সদস্য হই। ক্লাবের সবাই খুব সহযোগী মনোভাবাপন্ন। যে কারণে এখানে মজায় মজায় ইংরেজি শেখা হচ্ছে।’
তবে রুমা আক্তার ও সামছুন্নাহার সীমার সাথে সুর মেলান ক্লাবের সদস্য শবনম শারমীন ও মাথীন বিনতে সারোয়ার। রসায়ন বিভাগের ছাত্র সাইদুল ইসলাম, আরবী বিভাগের ছাত্র নাজমুল হাসান, আইন বিভাগের ছাত্র আবু জার গিফারী তাদের কথা বললেন একসাথে।
ইংরেজি ভাষা শেখার কৌশলের ব্যাপারে ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিদেশী ভাষা শেখার ক্ষেত্রে প্রথম অন্তরায় হচ্ছে ভীতি ও জড়তা। সবাই মিলে ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য গ্রুপ স্টাডি করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়। যে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি শেখার এই সম্মিলিত উদ্যোগ নিয়েছে তাদের জন্য শুভকামনা। এভাবে নিজেরা চর্চা করতে করতে এক সময় ওদের জড়তা কেটে যাবে, ভয়-ভীতি দুর হয়ে যাবে। বিদেশী ভাষা শেখার জন্য গ্রুপ স্টাডি বা এরকম ক্লাব মডেল হতে পারে।’