পড়তে চাইলে ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
বস্তু ও ধাতব কৌশল একটি আন্তঃশাস্ত্রীয় ক্ষেত্র যাতে বিভিন্ন পদার্থের ধর্ম এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই বিজ্ঞান পদার্থের গঠন এবং তাদের ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক অনুসন্ধান করে থাকে। ফলিত পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নের মত বিশুদ্ধ জ্ঞানের প্রয়োগের পাশাপাশি এই ক্ষেত্রে রাসায়নিক, যন্ত্র, পুর এবং তড়িৎ প্রকৌশলের বিভিন্ন তত্ত্বের প্রয়োগও পরিলক্ষিত হয়। তবে সিভিল বা মেকানিকালের মত এটিও অনেক পুরাতন ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা। মানুষ যখন থেকে তামা আবিষ্কার করে তখন থেকেই মূল যাত্রা শুরু। ন্যানো বিজ্ঞান এবং ন্যানো প্রযুক্তির বিকাশের কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বস্তু বিজ্ঞান গুরুত্বের সাথে পড়ানো হচ্ছে।
কি কি বিষয়ে পড়ানো হয়
আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে সব কিছু কোন না কোন উপাদান দিয়ে তৈরি। আর এই ‘উপাদান’ নিয়েই এমএম ই। নামে ধাতবকৌশল দেখে ভাবার দরকার নেই শুধু ধাতু এবং সংকর ধাতু নিয়ে এমএম ই। বরং আমাদের বাড়ির চামচ থেকে যুদ্ধের ময়দানের ট্যাঙ্ক, পানির নিচের সাবমেরিন থেকে মহাকাশযান- সব কিছুর সাথেই এমএমই এর সম্পর্ক। সকল বস্তুকে ৫টি প্রধান ভাগ (মেটাল, সিরামিক, সেমিকন্ডাক্টার, পলিমার, কম্পোজিট) করে কাজ করে এমএমই।
মেটাল: কিভাবে খনি থেকে আকরিক আহরণ করা হয়, কিভাবে তা থেকে ধাতু নিষ্কাশন করা হয়, সংকর ধাতু কিভাবে তৈরি করলে তা মানুষের বেশি কাজে আসবে কিন্তু খরচ হবে কম, কিভাবে রিসাইকেল করে কোন ধাতব বস্তুক কাজে লাগানো যায়, জাহাজ, প্লেন, মহাকাশযান, গাড়ির বডি,ইঞ্জিনের উপাদান কি হবে যেন তা সহজে নস্ট না হয়, পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এরকম হাজারো ব্যাপার।
সিরামিক: বাসার নিত্য প্রয়োজনীয় থালা-বাসন,মেঝের টাইলস ছাড়াও সিরামিকের বিশাল একটা ক্ষেত্র আছে। উচ্চতাপমাত্রায় কাজ করার যন্ত্র, অপটিক্যাল ফাইবার, ইনসুলেটর, সিমেন্ট, কৃত্তিম অঙ্গ তৈরি এরকম অনেক জায়গায় সিরামিক লাগে।
সেমিকন্ডাক্টার: ইলেক্ট্রিক চিপ এখন সব যায়গায়। আর এমএমই এর কাজের একটা বড় ক্ষেত্র এখানে।কিভাবে কোন ইলেক্ট্রনিক ম্যাটেরিয়াল কাজ করবে, কত ভোল্টেজ, তাপমাত্রা পর্যন্ত সহ্য করতে পারবে এসবই নির্ভর করে উপাদানের উপর। আর উপাদান মানেই এমএমই। কিভাবে ইলেক্ট্রনিক স্ট্র্যাকচার চেঞ্জ হয়, ব্যান্ড থিওরি, কোয়ান্টাম স্ট্র্যাকচার যেমন quantum well , quantum dot এসব নিয়েও কাজ হয় এমএমইতে।
পলিমার: পলিমার কি তা আলাদা করে বলার দরকার পড়বে না। পলিমারের প্রচুর জিনিস আমরা ব্যবহার করি। এসবের প্রস্তুতি,গুনগত মান রক্ষা সবই এম এমইর আওতায় পড়ে।
কম্পোজিট: উপরের ৪ প্রকার ম্যাটেরিয়ালের সমন্বয়ে যেসব বস্তু বানানো হয় তারাই এর অন্তর্ভুক্ত। শুধু ধাতু বা সিরামিকের তৈরি কোন কিছুর মান উন্নয়নে অন্য কিছু যোগ করে তৈরি হয় কম্পোজিট। খেলার র্যাকেট,আধুনিক উচ্চ গতির প্লেনের বডি, বুলেটপ্রুফ ভেস্ট বা গ্লাসসহ আরো অনেক কিছুই কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালসের আওতায় পড়ে। এসবই পড়ার মূল বিষয়। আগামি ৪ বছর এসবেরই বিভিন্ন ধর্ম, কিভাবে কাজ করে, কিভাবে ডিজাইন করে এসব নিয়ে পড়তে হবে।
কাজের ক্ষেত্র
১. যদি কারো গবেষণার ইচ্ছা থাকে তবে নিয়ে নিতে পার চিন্তা ছাড়াই। বাংলাদেশে খুব বেশি গবেষণার সুযোগ না থাকলেও বিশ্বে যত গবেষণা হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি শাখা ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স। তাই ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়ে বিদেশে চলে যেতে পার আর নিজের মত নতুন একটি ম্যাটেরিয়াল আবিষ্কার করে পৃথিবীকে চমকে দিতে পারেন।
২. যাদের বিদেশে যাবার ইচ্ছা নেই বা ৯-৫টা অফিস করার ইচ্ছা তারাও হতাশ হবেন না। দেশে মূলত স্টিল ফ্যাক্টরিতে সুযোগ আছে। সেই সাথে সিরামিক, গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি, গ্যাস ফিল্ড ছাড়াও প্রায় সকল প্রকার ইন্ডাস্ট্রিতে এখন সুযোগ তৈরি হয়েছে।
৩.এমএমই এর কাজের ক্ষেত্র আরো বড়। ন্যানোটেক,বায়ো মেডিকেল, ইলেকট্রিক্স এরকম বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল, ইচ্ছা ছিল ইইই পড়ে ওসব করবেন কিন্তু ইইই পাননি, তাদের বলছি আপনাদের আশা এখনো আছে কারণ এমএমই থেকেই এসব এসেছে। তাই ভবিষ্যতে এসবের পড়ার ভালো সুযোগ এখনো আপনার আছে। আমাদের বড় ভাইয়াদের অনেকেই এখন Intel,IBM এর মত প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।
৪.ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগের গবেষণায় এমএমই এখন অনেক ভুমিকা রাখছে। হাড়,দাঁত প্রতিস্থাপন, কৃত্তিম পা, হাত সবই ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্টিস্টরা করছে। কারণ মানুষের দেহে এসব প্রতিস্থাপন করতে হলে এমন উপাদান হতে হবে যা শরীরের কোন ক্ষতি করবে না। আর উপাদান মানেই তো এমএমই। হয়তো আপনাদের মধ্যেই কেউ কম খরচে কৃত্তিম কিডনি বা সেরকম কিছু বানাবে, ক্যান্সারকে নির্মূল করবে- বাঁচাবে হাজার হাজার প্রান।
কোথায় পড়া যাবে
দেশে একমাত্র বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বস্তু ও ধাতব কৌশলে অনার্স ও মাস্টার্স করা সম্ভব।