যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযেগ না হয়
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ওয়ালিদ বিন কাশেম। নটর ডেম কলেজ থেকে পাশ করে আট দশজন শিক্ষার্থীর মতো সে নিজেও স্বপ্ন দেখেছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবে। কিন্তু স্বপ্ন আর ইচ্ছে কোনটাই পূরণ হলো না তার। তবে তাই বলে কি থেমে থাকতে হবে? নিজের স্বপ্নকে আরো অধিকতর রূপ দিতে ভর্তি হয় আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বলছি ৩৪ বিসিএস এর মেধা তালিকায় সবার সেরা হওয়া শিক্ষার্থীর কথা। ওয়ালিদের মতো প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার। কিন্তু সীমিত আসন আর লক্ষ শিক্ষার্থীর কারণে হয়তো সে সুযোগটি সবার হয়ে ওঠে না। কিন্তু এই বলে হতাশ হলে চলবে না। নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে। ভাবতে হবে নিজের স্বপ্ন নিয়ে। বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর পাশাপাশি অনেক ভালো মানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চ শিক্ষার একটি বড় অংশ পড়াশোনা করছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সে দিক থেকে এখনই সময়, সময় নষ্ট না করে পছন্দমতো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাওয়া।
অনেকের আগ্রহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট, দিনের পর দিন বিভন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকার কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কিছুটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তাছাড়া পছন্দমতো বিষয় বেছে নিতে পাড়ায় অনেকেরই প্রথম পছন্দ এসব বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার একটি বড় অংশ ভর্তি হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা আর পড়াশোনার অনুকূল পরিবেশ থাকায় অনেকেরই প্রথম পছন্দ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যাল। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারই এখন ছেলেমেয়েদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করছেন। এতে খরচটা বেশি হলেও সময় লাগছে কম।
রয়েছে নানান সুবিধা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা অনেক ব্যয়বহুল। তারপরও এইসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে দরিদ্র ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা। আইন অনুযায়ী, মোট আসনের ৬ শতাংশ দরিদ্র ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট আসনের ৬ শতাংশ দরিদ্র ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সম্পূর্ণ বিনা বেতনে ভর্তি করানোর সুবিধা। এর মধ্যে ৩ শতাংশ থাকবে দরিদ্র পরিবারের ও বাকি ৩ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ভালো ফলাফলের বা সিজিপির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপর্ক্ষ বৃত্তি ও মোট কোর্স ফির মধ্যে একটি ছাড় দিয়ে থাকে।
ভর্তি হওয়ার আগে হতে হবে সচেতন
বাংলাদেশে ভালো ও নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও নামকাওয়াস্ত কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যারা শিক্ষার্থীদেরকে নিয়মিত ঠকাচ্ছে যার কারণে এতগুলো অর্থ নষ্ট না করার আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জেনে নেয়া ভালো। আবার বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে সরকার এই সেশন থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া একিবারি বন্ধ করে দিয়েছে সেগুলো সম্পর্কেও খোঁজখবর নিয়ে ভর্তি হলে পরে ঝামেলায় পড়তে হবে না। ভর্তির আগে খোঁজ নিতে হবে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়টি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন পেয়েছে কি না কিংবা কালো তালিকাভুক্ত কি না, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন থাকলেও তাদের পরিচালিত অনেক কোর্সের অনুমোদন থাকে না, এ বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঢাকার বাইরের শাখার অনুমোদন নেই কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই, নিশ্চিত হতে হবে পড়াশোনার মানের বিষয়ের দিকটিও। পছন্দেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতি কেমন, পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা আছে কি না। বিষয় নির্বাচনেও সতর্ক হতে হবে যে বিষয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে সে বিষয়ের চাহিদা আছে কি না এবং জানতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সে বিষয়ের যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক আছেন কি না। এই বিষয়গুলো সর্তক থাকলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েই উজ্জ্বল জীবনের হাতছানি দিবে। যার প্রমাণ ওয়ালিদ
ভর্তির যোগ্যতা
বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে নূন্যতম জিপিএ ৩.৫০ (চতুর্থ বিষয় বাদে) চাওয়া হয়। জিপিএ ২.৫০ থাকলেও আবেদন করা যায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সাধারণত ‘ও’ লেভেলে চারটি বিষয়ে জিপিএ ৩.০০ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় কমপক্ষে দুটি বিষয়ে জিপিএ ৩.০০ চাওয়া হয়। এই যোগ্যতাগুলো থাকার পরও মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার সম্মুখিন হতে হয়। ভর্তি পরীক্ষা এবং এসএসসি ও এইচএসসির ফল- এ দুটোর সমন্বয়ে মেধাতালিকা করা হয়। নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে প্রস্তুতিটা ভালো থাকতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার ভালো করেত হলে ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। সেই সঙ্গে গণিতেও ভালো করতে হবে।
বছরে রয়েছে তিনবার ভর্তির সুযোগ
বছরে তিনবার ভর্তির সুযোগ আছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্প্রিং, সামার ও ফল। সাধারণত এ তিন সেমিস্টারে দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি করে। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্প্রিং’-এর ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয় ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। এপ্রিল-মে মাসে ‘সামার’ ও আগস্ট-সেপ্টেম্বরে শুরু হয় ‘ফল’ সেশনে ভর্তি প্রক্রিয়া। এছাড়া ‘উইন্টার’ ও ‘অটাম’ সেশনেও ভর্তিও সুযোগ দেয় কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই চলছে ভর্তি কার্যক্রম। ভর্তি ফরম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও অ্যাডমিশন অফিস থেকে সংগ্রহ করা যাবে। ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে পাসপোর্ট আকারের ছবি যুক্ত করতে হবে। সঙ্গে জমা দিতে হবে এসএসসি ও এইচএসসির সব সনদ, নম্বরপত্রের সত্যায়িত কপি, প্রশংসা পত্র ও আবেদন ফি জমার রসিদ।
উচ্চ শিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ ১৯৯২ সালে। ৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও সময়ের প্রয়োজনে এই সংখ্যা এখন ৮৩টি। অনুমোদনে অপেক্ষায় আছে আরও কয়েক ডজন। ১৯৯২ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও এবং এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন আইন করা হয়।