ছাত্র-শিক্ষক মিলনমেলা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
টিএসসি। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সংক্ষিপ্ত রূপ এটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক, সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ কেন্দ্র এই টিএসসি। ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যাকাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন এবং সুকুমারবৃত্তি চর্চার জন্য ১৯৬১ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। মনোরম পরিবেশের এ জায়গাটি শিক্ষার্থীদের মিলনমেলার কেন্দ্রস্থল।
টিএসসি’র অভ্যন্তরে ৪টি ভবন রয়েছে। প্রবেশপথে ঢুকতেই প্রধান ভবনের দেখা মিলে। তিনতলা এই ভবনের নীচের তলায় রয়েছে জনতা ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয় কর্পোরেট শাখা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন। দ্বিতীয়তলায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা), ডিবেটিং সোসাইটি (ডিইউডিএস), টুরিস্ট সোসাইটি, আইটি সোসাইটি, চলচ্চিত্র সংসদ, জয়োধ্বনি সাংস্কৃতিক সংগঠন, রোভার স্কাউট গ্রুপ, স্লোগান ৭১ সহ অন্যান্য সংগঠন। আর তৃতীয় তলায় টিএসসির কর্মকর্তা, পরিচালকদের কক্ষ এবং ছাত্র নির্দেশনা কেন্দ্র। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যার পরামার্শ দেওয়া হয়।
সকাল ১০টা থেকে টিএসসিতে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়। দুপুর এবং পড়ন্ত বিকালে ছাত্র-ছাত্রীদের কোলাহলপূর্ণ পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। এখানে বসে শিক্ষার্থীরা গ্রুপ স্টাডি, সঙ্গীত চর্চা, হাসি-তামাশা, আড্ডা, গান, জন্মদিন পালনসহ বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক সব আলোচনা করে। ক্ষুধা লাগলে আছে টিএসসির ক্যাফেটেরিয়া। সপ্তাহে দুই দিন শুক্রবার আর শানিবার বাদে বাকি পাঁচ দিন এই ক্যাফেটেরিয়া খোলা থাকে। প্রতি বার বিশ টাকার বিনিময়ে এখানে পাওয়া যায় ডাল, আলুভর্তা, সাদাভাত পোলাও-বিরিয়ানির মতো অভিজাত খাবার। এছাড়া বিকাল এবং সকালের নাস্তার পাশাপাশি রয়েছে কোমল পানীয়’র ব্যবস্থা।
ক্যাফেটেরিয়ার বিপরীত দিকে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া কক্ষ। ক্যারাম, দাবা, টেবিল টেনিস খেলার সুব্যবস্থা রয়েছে এখানে। ক্রীড়াকক্ষের দক্ষিণপার্শ্বে অবস্থিত মিলনায়তন কক্ষ। বিভিন্ন কারণে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কলা অনুষদ, আইন অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও চারুকলা অনুষদের ৪০টিরও অধিক বিভাগের বাত্সরিক নবীনবরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এসব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর বিভিন্ন অনুষ্ঠানও পালিত হয়। বাংলাদেশের জাতীয় উত্সবের দিনগুলোতে টিএসসিতে বিভিন্ন সংগঠন নিজস্ব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ হিসেবে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সব সময় জমজমাট থাকে।
টিএসসিতে নৃত্য অনুশীলনরত সাঈদ আহমেদ নামে অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, টিএসসিতে আমরা সংস্কৃতি চর্চা করার সুযোগ পাই। এতে আমাদের মন সতেজ থাকে। ফলে কোনো রকম অপকর্ম করার চিন্তা মাথায় আসে না।
এ বিষয়ে টিএসসির পরিচালক মহিউজ্জামান চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা এখানে সুকুমারবৃত্তি চর্চার সুযোগ পায়। এটি তাদের মনন গঠনে সহায়ক হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা উদারমনা হতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে টিএসসির প্রসার বাড়ানো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, টিএসসিতে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষকদের কুশলাদি, মতামত, শিক্ষা আদান-প্রদান হয়। একে অপরকে ঘনিষ্ঠভাবে জানার ফলে উভয়ই উপকৃত হয়। এটি পুরো বাংলাদেশের সংস্কৃতি চর্চার বড় ক্ষেত্র।