ক্লাসের ফাঁকে আড্ডা চলে
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই/ আজ আর নেই/ কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই/ আজ আর নেই…’ আড্ডা দিতে ভালোবাসেন না এমন মানুষ কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। আবার সে যদি হয় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আবার যদি থাকেন আবাসিক হলে তাহলে আড্ডায় আরো নতুন মাত্রা যোগ হবে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুমেল বিপ্লব। সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় চলবে তার আড্ডাবাজি। হোক সেটা রুমে বা ক্যাম্পাস চত্বর বা ক্যাম্পাসের পাশের কোনো চায়ের ঝুপড়ি দোকান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ আজাদ। আড্ডায় মাতিয়ে রাখেন বন্ধুদের। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, টারজান পয়েন্ট, অমর একুশে, কাফেটারিয়া, মুক্তমঞ্চ, সপ্তম ছায়ামঞ্চ, টিএসসি, জহির রায়হান অডিটরিয়াম, ছবি চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, লাইব্রেরি, বটতলা, সুইজারল্যান্ড, ট্রান্সপোর্ট এলাকা, মুন্নী চত্বর, মুরাদ চত্বর, ডেইরি গেট থেকে প্রান্তিকের চায়ের দোকান, হলরুম থেকে ক্লাসরুম— কোথায় হয় না তার আড্ডাবাজি? ৬৯৭.৫৬ একরের এ ক্যাম্পাসের যে কোনো স্থানই শিক্ষার্থীদের কাছে হয়ে উঠতে পারে একটি জম্পেশ আড্ডার উপলক্ষ।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠে বন্ধুত্বের এক অকৃত্রিম মেলবন্ধন। আর এই বন্ধুত্বের গল্পগুলো জমে ওঠে আড্ডায় আড্ডায়। ফলে শত সমস্যা থাকলেও মুখ ভার করে থাকার অধিকার টুকুও হারিয়ে ফেলে জাবির শিক্ষার্থীরা!
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যবসায় ছাড়াও আড্ডাবাজি আর আনন্দ বিনোদনে জমজমাট থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তারুণ্যের এ আড্ডা থেকে বেরিয়ে আসে সৃজনশীল নানা কর্ম। আর এই আড্ডাপ্রবণ মানুষগুলোই এক সময় জীবনের প্রয়োজনে হারিয়ে যায়।
এদিকে, সন্ধ্যার একেকটা চত্বরে জমে উঠে জীবনের গল্প। হাকিম চত্বরে কড়ই গাছের নিচে মোহন বাঁশির সুর, গণতন্ত্রের সূতিকাগার মধুর ক্যান্টিন, ডাকসুতে এক টাকায় এক কাপ চা, ত্রিমোহনার কেন্দ্রস্থলে ভিসি চত্বর, মুক্তিযোদ্ধার আবক্ষ মূর্তি অপরাজেয় বাংলা, প্রাণবন্ত টিএসসি যেন ক্যাম্পাসের হাজারো স্মৃতির নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় সকাল-সন্ধ্যায় মুখরিত থাকে এ চত্বরগুলো।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার প্রিয় আড্ডাস্থল বিভিন্ন অনুষদের ঝুপড়ি। শিক্ষার্থীদের আনন্দ-বেদনার কাব্য বলা যায় এগুলোকে। প্রতিদিন বিকেলেই ঝুপড়িগুলোতে গানের জমজমাট আসর বসে। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, প্রচণ্ড গরমের দিনেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুপড়িগুলোতে একটুখানি শীতল পরশ পাওয়া যায়।
টুকিটাকি চত্বর, পুরাতন ফোকলোর চত্বর, লিচুতলা, কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনেই বেশি আড্ডা দেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী রেবেকা সুলতানা বলেন, আড্ডাবাজিতে পিছিয়ে নেই রাবির ছাত্রীরা। তারা রোকেয়া হল ও রহমতুন্নেসা হলের মাঝখানে মাঠে আড্ডা জমায়।
ক্লাস ও একাডেমিক কাজের ফাঁকে বা পড়ন্ত বিকেলে ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবন ‘বি’ ও ‘ই’ এর টং, ক্যাফেটেরিয়া, ফুডকোর্ট, মুক্তমঞ্চের পিছনে, একাডেমিক ভবন ‘ডি’ এর পিছনে বা ইউসি ভবনের দিকে আড্ডা জমায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া অর্জুন তলা, কদমতলা, ফুল গাছের ছায়ায় বা লাইব্রেরি ভবনের নিচে চলে দু’দন্ড জিরিয়ে নেয়ার কাজ আর চটপটি-ফুচকার পার্টি। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অরুন দাস বলেন, ছায়া শোভিত এই ক্যাম্পাসের স্থানগুলোতে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে আড্ডার ফুলঝুড়ি।
লাভ রোড, অক্সফোর্ড রোড, বৌ বাজার, সেকেন্ড গেইট, লাইব্রেরি, ওয়াইফাই জোন, ছয়েল মোড়, আম বাগান, এগ্রিবিজনেস চত্বরে চলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আড্ডা। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আহসান বলেন, প্রতিদিনের আড্ডায় কেটে যায় জীবন। আমি ভুলে গেলেও ক্যাম্পাস আড্ডার জায়গাগুলো হয়তো আমায় ভুলবে না। খুঁজে পাওয়া শুধু মুশকিলই নয় এক কথায় অসম্ভবই বলা যায়।
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন কিংবা করছেন অথচ মান্না দে’র গাওয়া এই গান শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিলই বটে। আর যদি সে হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী তবে তো কোনো কথাই নেই। তবে জাবিতে এই আড্ডাবাজি কিন্তু মান্না দে’র মধুর ক্যান্টিনের মতো শুধু এক জায়গাতেই নির্দিষ্ট হয়ে থাকবে না। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’ কথাটিকে টেক্কা দিতে জাবিতে বারো মাসে কি পরিমাণ পার্বণের হাট যে বসে তার সংখ্যা করাটাও কিন্তু বেশ কঠিন কাজ।