‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন’
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
দেশে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে কাঙ্খিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য উচ্চ শিক্ষায় বিনিয়োগের কোন বিকল্প নেই। গতকাল শনিবার ঢাকার এশিয়াটিক সোসাইটি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় বিনিয়োগ’ শীর্ষক লেকচারে এই কথা বলেন ডিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান। অনুষ্ঠানের সভাপতি অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগ দরকার, তবে আমরা কীভাবে তার ব্যবহার করব তার জন্যও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বাজেটের ৭১ শতাংশ ব্যবহৃত হয় অপারেশনাল খাতে, গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় হয় মাত্র ৭ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সংগঠন রিডিং ক্লাব ও জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠযৌথ উদ্যোগে এই বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়, এটি ছিল তাদের ১২তম মাসিক পাবলিক লেকচার।
প্রধান বক্তৃতায় সবুর খান বলেন, আসলে এ-দেশে মানবিক, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারে এবং যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক গড়ে তুলতে উচ্চ শিক্ষার বিকল্প নেই। সেজন্য শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগের বিকল্প নেই এবং এক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ যেমন জরুরী, তেমনি বেসরকারি খাত থেকে বিনিয়োগও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়-শিল্প খাতের যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততা বাড়ানো উচিত। যুগের প্রয়োজন, বাজারের চাহিদা, কোন খাতে কি পরিমাণ দক্ষ লোক প্রয়োজন তা নির্ণয় করে উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো উচিত। তিনি আরও বলেন, ব্যাবসায়িক লক্ষ্য নিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় অনেক সমালোচনা হয়েছে, কিন্তু এখন তা সারা পৃথিবীর মডেল। শুধু নির্দিষ্ট একটি পেশাকে লক্ষ্য করে ছাত্রকে গ্রাজুয়েট করা কিন্তু এখনকার লক্ষ্য নয়। ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলাই এখনকার উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য। বর্তমানে উন্নয়নের মডেল চীন, জাপান, ভারতের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিল্প খাতে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। অথচ আমাদের কোন বিশেষায়িত গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় নেই। অন্যদিকে, শিক্ষার বানিজ্যিকিকরন করা হচ্ছে এই অভিযোগ শুনতে হবে বলে বিনিয়োগকারিরা শিক্ষাখাতে বিনিয়গে আগ্রহী হচ্ছেন না। এই অবস্থায় বেসরকারিকরণকে ঢালাওভাবে দোষারোপ না করে আমাদের উচিত পৃথিবীর সেরা মডেলগুলো বিশ্লেষণ করে নিজেদের পরিকল্পনা তৈরি করা।
সভাপতির বক্তৃতায় ড. আতিউর রহমান বলেন, উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগ তো জরুরিই, বরং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও বেসরকারি বিনিয়োগ জরুরিই, যেমন সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে হয়েছে। আমাদের একই সাথে মানবিক বহুমুখি ও কেজো শিক্ষা চাই। সেজন্য শিক্ষাখাতে যোগ্য নেতৃত্ব ও পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, স্বাধীন মানুষ তৈরির যোগ্য হাতিয়ার তৈরির লক্ষ্যেই আমাদের শিক্ষ্যাব্যবস্থার লক্ষ্য হওয়া উচিত।