সাতছড়িতে বর্ণিল দিন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
উঁচু-নিচু টিলার বাঁকে বাঁকে সবুজের সমারোহ। চা বাগানের অভ্যন্তরে শ্রমিকরা দল বেঁধে কাজ করছেন। কেউ চা বাগানের পরিচর্যা করছেন, কেউ চা-পাতা তুলছেন, কেউবা শুকনো ডালপাতা কুড়াচ্ছেন। বনের নিস্তব্ধতায় বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখির কিচির-মিচির শব্দ। বলছি প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ির কথা। দেশের ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি অন্যতম। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভিতর সাতটি ছড়া বা ঝর্ণা আছে বলে এর নামকরণ করা হয়েছে সাতছড়ি।
ঢাকা থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বদিকে এই সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। একদিনেই আবার ঢাকা ফেরা যাবে বলে সিদ্ধান্ত হলো সাতছড়ি দেখতে যাওয়ার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের উদ্যোগে বার্ষিক শিক্ষা অভিযাত্রা।
স্নিগ্ধ সকালে তারুণ্যদীপ্ত প্রাণবন্ত, ভ্রমণপিপাসু আর সৃজনশীল একদল শিক্ষার্থীর ছুটে চলা। এ শিক্ষা অভিযাত্রায় (শিক্ষা সফর) সঙ্গী ছিলেন বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক হেলেনা ফেরদৌসী, আনওয়ারুস সালাম, নিশতার জাহান, বর্ণনা ভৌমিক, মিঠুন, ইব্রাহিম, জাকারিয়া খান স্যার। সাথে ছিলেন খণ্ডকালীন শিক্ষক অজয় দাস গুপ্ত। প্রকৃতি থেকে তখনও বসন্তের আবেশ যায়নি। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক দিয়ে গাড়ি চারটি সাতছড়ির অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে।
সবার মধ্যে তখন দেখা যাচ্ছিল অন্য রকম এক আবেগের উচ্ছ্বাস। কেউবা সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিয়ে ফেসবুকের বন্ধুদের মাঝেও ছড়িয়ে দিচ্ছিল এ আনন্দের দ্যুতি। আবার কেউ কেউ গানে গানে সুর তুলেছিল। অন্যদিকে কয়েকজন ড্যান্স দিয়ে মাতিয়ে রাখছে পুরো বাস। এ অভিযাত্রার ব্যবস্থাপনা প্রধান ছিলেন বিভাগের ইব্রাহিম বিন হারুন স্যার। তাই স্যারের নির্দেশে চলতি পথে গাড়ির মধ্যেই সেরে ফেলা হলো সকালের নাস্তা। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হলো টিপটিপ বৃষ্টি। তখন সবাই গান ধরলো- ‘বৃষ্টিরে বৃষ্টিরে আয় না জোরে/ ফিরে যাব না আজকে ঘরে।’ আনন্দ আর মাস্তি করতে করতে যখন আমরা হবিগঞ্জে প্রবেশ করলাম, তখন আঁকাবাঁকা মেঠোপথে গাড়ি চলছিল আর মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলাম সারি সারি গাছ, চা বাগান, রাস্তার দু’পাশে ছোট ছোট টিলা আর পাহাড়ের দিকে। বিস্তীর্ণ চা বাগানের সবুজাভ মোহনীয়তা সত্যিই অবর্ণনীয়।
বেলা ১২টা বাজতে বাজতে আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। তখন থেকেই ব্যস্ততার শুরু ডিএসএলআর ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া ভাইদের। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আমরা একঘণ্টার ট্রেইলের জন্য প্রবেশ করলাম উদ্যানের ভিতর। সবুজ প্রকৃতি। ঝিরঝির ঠাণ্ডা বাতাসের মধ্যে হেঁটে একটু ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা মিললো বিশাল বড় এক ওয়াচ টাওয়ার। যার উপর দাঁড়ালে মনে হবে যেন পুরো বাংলাদেশকে দেখতে পাচ্ছি। ওয়াচ টাওয়ার থেকে নেমে আবার হাঁটা শুরু করলাম। ছড়ার পথে হাঁটতে হাঁটতে চারদিকে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছিল বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি ও নাম জানা-অজানা অসংখ্য লতাপাতা। রয়েছে উল্লুক, বানর, হনুমানসহ বিভিন্ন জীবজন্তু। উদ্যানের মধ্যদিয়ে সাতটি ছোট খাল বা ছড়া প্রবাহিত হয়েছে। যা বর্ষায় পানি এলেও তা শুকিয়ে যায়। তবে অবাক হওয়ার কথা—ছড়াগুলোর মধ্যে প্রকৃতি তার নিয়মে বিছিয়ে রেখেছে পানিবিহীন দুধের ন্যায় সাদা বালু। দুধ রঙ বালুর উপর যখন হেঁটে যাই তখন মনে হচ্ছিল যেন প্রকৃতির সাদা গালিচার অভ্যর্থনা।
জাতীয় উদ্যান আর বোটানিক্যাল গার্ডেনে একঘণ্টার ট্রেইল শেষে আমরা গেলাম আশেপাশের বিভিন্ন চা বাগান দেখতে। চা বাগানে কাজ করছিল ত্রিপুরা উপজাতি, হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলমানরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। চা বাগান দেখতে দেখতে সূর্যটা ঠিক মাথার উপর থেকে পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়তে শুরু করেছে। তাই আমরা ফিরে এলাম আমাদের স্পটে। বেলা তিনটার দিকে দুপুরের খাবার খেয়ে তার কিছুক্ষণ পরেই শুরু হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তারপর এলো আকর্ষণীয় র্যাফেল ড্র’র পর্ব। মজার ব্যাপার হলো সেখানে ভাগ্যের চাকা ঘুরে আমিও একটা পুরস্কার পেলাম বিভাগের চেয়ারপার্সন ম্যামের কাছ থেকে। যাইহোক, তারপরে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ছিল চেয়ার সিটিং, বেলুন ফাটানোসহ বিভিন্ন খেলা। এরপর পুরস্কার বিতরণী পর্ব। আর সর্বশেষ ছিল সবার অংশগ্রহণে ডিজে ড্যান্স।