যেভাবে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পেলাম
- আনিকা শাহজাবিন, শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো, যুক্তরাজ্য
পশ্চিমা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) হিসেবে কাজ করার একধরনের প্রবল আগ্রহ আছে। তাই সেখানে কাজের সুযোগও বেশি। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, গবেষণাগারসহ নানা প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন ও ট্রেইনি হিসেবে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ যেমন দক্ষতা বাড়ায়, তেমনি নেটওয়ার্ক তৈরিতেও সহায়তা করে। এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বহুজাতিক সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়।
আমি এ বছরের শুরুতে শ্যুমান ট্রেইনিশিপ কর্মসূচির মাধ্যমে ইউরোপীয় সংসদে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাই। প্রতিবছর ২০০ শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষণার্থী এই সুযোগ পান। অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী ইউরোপের বিভিন্ন দেশের হলেও অন্যান্য মহাদেশের তরুণদের সুযোগ আছে। প্রতিবছর প্রায় ৩৫ হাজার আগ্রহী তরুণ এই কর্মসূচির জন্য আবেদন করেন। কর্মসূচির আওতায় ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস ও লুক্সেমবার্গসহ বিভিন্ন সদস্য ইউরোপীয় দেশগুলোয় কাজের অভিজ্ঞতা মেলে। এর মাধ্যমে ইউরোপীয় রাজনীতি, সংস্কৃতি ও শিক্ষার নানা দিক সম্পর্কে শিক্ষার্থী ও তরুণেরা খুব কাছ থেকে জানার সুযোগ পান।
আমার অভিজ্ঞতা
ইউরোপীয় সংসদে ট্রেইনিশিপের জন্য নির্বাচিত হই এ বছরের জানুয়ারি মাসে। ঢাকার বেলজিয়াম কনস্যুলেটে ভিসার জন্য আবেদনপত্র জমা দিই। পরে মার্চে ব্রাসেলসে আসি। করোনা মহামারির কারণে কিছুটা সময় লাগলেও ঠিক সময়ে ট্রেইনিশিপ শুরু করি।
আমি অ-ইউরোপীয় হিসেবে ব্রাসেলসের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব এক্সটার্নাল পলিসিতে কাজের সুযোগ পাই। এই অধিদপ্তর অন্যান্য সব ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত প্রতিষ্ঠানের আইনগত বিষয় ও কূটনৈতিক বিভিন্ন দিকের দেখভাল করে। আমি এই অধিদপ্তরের এশিয়া বিভাগে কাজ করেছি। চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে। শিক্ষানবিশ হিসেবে ডিজিটাল গভর্ন্যান্স, পোশাককর্মীদের নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা সমস্যার মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেছি আমি। সক্রিয়ভাবে এশিয়ার জন্য জলবায়ু কৌশল নীতিতে নিজের অবস্থান শক্তভাবে প্রকাশ করতে পেরেছি, যা কিনা পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় জলবায়ু আইনে সংযুক্ত হয়। যেদিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো এই আইনের পক্ষে ভোট দেয়, সেটা আমার জন্য দারুণ একটা দিন ছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সেদিন এখানে হাজির ছিলেন।
শুধু কাজের অভিজ্ঞতাই নয়, ইউরোপের সংস্কৃতি ও মানুষের সঙ্গে দারুণভাবে মেশার সুযোগ পেয়েছি। আমার সঙ্গে যেমন তরুণেরা কাজ করেছেন, তেমনি পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন—এমন মানুষের সঙ্গেও কাজ করেছি। এই পাঁচ মাসের ট্রেইনিশিপ প্রোগ্রামে নানা দেশের মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। সিরিয়ার জ্যাক, ভারতের ইনায়াত, যুক্তরাজ্যের চেরি আর পর্তুগালের মনিকার মতো তরুণদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাই। এতে নিজের দেশের কথা যেমন অন্যদের জানানোর সুযোগ পেয়েছি, তেমনি নিজের অভিজ্ঞতাও বেড়েছে। এ ছাড়া নানা জাদুঘর, বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত এলাকা ও শহর সম্পর্কে জেনেছি। সবচেয়ে বেশি চমকে গিয়েছি বেলজিয়ামের স্ট্রিট আর্ট দেখে। রাস্তা ও দেয়ালে নানা রঙে আঁকা ছবি দেখা দারুণ এক অভিজ্ঞতা। আমি ব্রাসেলসের টিনটিন জাদুঘরেও গিয়েছিলাম। শৈশবের টিনটিন যেন সামনে হেঁটে বেড়াচ্ছিল!
আবেদন প্রক্রিয়া
ইউরোপীয় সংসদে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজের সুযোগের খবর পেয়েছিলাম পেশাদার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইন থেকে। আবেদনের পর দুই ধাপে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হয়। বছরে দুইবার এই সুযোগের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আবেদনের জন্য ইউরোপীয় সিভি ফরম্যাট অনুসরণ করতে হবে। নভেম্বর ও জুন মাসে আবেদন গ্রহণ করা হয়। পড়াশোনা, কাজের অভিজ্ঞতা, ইত্যাদি আমলে নেওয়া হয় নির্বাচন প্রক্রিয়ায়। বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে দারুণভাবে কাজ করে।
আমি মনে করি, বাংলাদেশের তরুণদের আন্তর্জাতিক নানা সংস্থায় ইন্টার্নশিপ, ট্রেইনিশিপের মতো কাজের অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ আছে। এর মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাওয়া যায়। ইউরোপীয় সংসদে কাজের সুযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এই ওয়েবসাইটে।
সূত্র: প্রথম আলো