উচ্চ শিক্ষায় বৃত্তি দিচ্ছে চীন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে কে না চান? জীবনবৃত্তান্তে বিদেশি ডিগ্রির তকমা যেমন সম্মানের, তেমনি বাজারের সেরা চাকরিগুলোতেও অগ্রাধিকার থাকে তাঁদের। তবে বিভিন্ন প্রতিকূলতা, বিশেষ করে বিশাল অঙ্কের খরচের কথা চিন্তা করে অনেকেই এ স্বপ্নের ইতি টানেন শুরুতেই। কিন্তু বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ যদি দেওয়া হয় সম্পূর্ণ বিনা খরচে? হ্যাঁ, এমন সুযোগটাই দিচ্ছে চীন সরকার। বহির্বিশ্বের সঙ্গে সমঝোতা ও সহযোগিতার সম্পর্ক উন্নয়ন এবং শিক্ষা-সংস্কৃতির আদানপ্রদানের লক্ষ্যে প্রতিবছরই বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে চীন। সে ধারা অব্যাহত রাখতে সম্প্রতি ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবৃত্তির বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাস। এ বৃত্তির আওতায় চীনের ২৭৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশসহ সব দেশের ছাত্র, শিক্ষক এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ দেওয়া হবে।
- কেমন হবে চীনে উচ্চশিক্ষা
চীনের শিক্ষাব্যবস্থা এখন বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। চীন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরিপে দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশের প্রায় চার লাখ শিক্ষার্থী এখন অধ্যয়ন করছে সেখানে। মানসম্মত শিক্ষা ও তুলনামূলক কম খরচের জন্য অনেক শিক্ষার্থীই চীনে উচ্চশিক্ষার দিকে ঝুঁকছেন। আর আপনি যদি চীনা ভাষায় পারদর্শী হন, তাহলে ডিগ্রি পাওয়ার পর সেখানেই খুঁজে নিতে পারেন আপনার পছন্দের চাকরি। হ্যাঁ, দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগের ক্ষেত্রে চীনা নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও সমমূল্যায়ন করে থাকে। এসব ছাড়াও উপরি অর্জন হিসেবে থাকবে চীনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ।
- সরকারি শিক্ষাবৃত্তির আওতা
সাতটি প্রোগ্রামের আওতায় বৃত্তি দিচ্ছে চীন সরকার। এগুলো হলো বাইল্যাট্রাল প্রোগ্রাম, চায়নিজ ইউনিভার্সিটি প্রোগ্রাম, গ্রেট ওয়াল প্রোগ্রাম, ইইউ প্রোগ্রাম, এইউএন প্রোগ্রাম, পিআইএফ প্রোগ্রাম এবং ডব্লিউএমও প্রোগ্রাম। চীন সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউনেসকোর মতো আন্তর্জাতিক জোট ও সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত এ প্রোগ্রামগুলোর অধীনে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, কৃষি, চিকিৎসা, অর্থনীতি, আইন, ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন এবং চারুকলায় উচ্চশিক্ষা দেওয়া হয়। চীনের ২৭৯টি বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়গুলোর ওপরে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ডক্টরাল, জেনারেল স্কলার ও সিনিয়র স্কলার ডিগ্রি দিয়ে থাকে। বিভিন্ন মেয়াদের এ ডিগ্রিগুলোতে থাকে বিষয়ভিত্তিক মূল শিক্ষা ও চায়নিজ ভাষা শিক্ষা। এক থেকে দুই বছর মেয়াদি চায়নিজ ভাষা শিক্ষা সফলভাবে শেষ করার পরই একজন আবেদনকারী মূল শিক্ষার কোর্স শুরু করতে পারবেন। তবে কোনো শিক্ষার্থী আগেই চায়নিজ ভাষায় মাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ে থাকলে কিংবা এইচএসকে সার্টিফিকেটধারী (চায়নিজ ভাষার দক্ষতার সার্টিফিকেট) হলে রেহাই পাবেন ভাষা শিক্ষা কোর্স থেকে।
- কারা আবেদন করতে পারবেন?
চীন ছাড়া পৃথিবীর সব দেশের সুস্থ নাগরিক এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিভিন্ন ডিগ্রি নেওয়ার জন্য লাগবে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স। যেসব শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন, তাঁদের স্নাতক প্রোগ্রামে আবেদনের সুযোগ থাকবে। এ ক্ষেত্রে বয়স অনূর্ধ্ব ২৫ বছর হতে হবে। আর যাঁরা এরই মধ্যেই স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করে ফেলেছেন, তাঁরা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিটা সেরে নিতে পারবেন চীন থেকে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর। শিক্ষাবৃত্তির আওতায় ডক্টরাল (পিএইচডি) ডিগ্রি নিতে গেলে আবেদনকারীকে স্নাতকোত্তর পাস ও বয়স অনূর্ধ্ব ৪০ বছর হতে হবে। বৃত্তির আরেকটি প্রোগ্রাম জেনারেল স্কলারে আবেদনের সুযোগ থাকবে আন্ডারগ্রাজুয়েট বা স্নাতক অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের। এ ক্ষেত্রে যাঁরা কমপক্ষে দুই বছর স্নাতক পড়েছেন এবং বয়স ৪৫ বছর বা এর কম, তাঁরাই আবেদন করতে পারবেন। স্নাতকোত্তর পাস প্রার্থীরা ডক্টরাল ডিগ্রির পাশাপাশি সিনিয়র স্কলার প্রোগ্রামেও আবেদনের সুযোগ নিতে পারবেন। তবে এখানে থাকবে বয়সসীমায় পার্থক্য। সর্বোচ্চ ৫০ বছর বয়সীরা আবেদন করতে পারবেন এ প্রোগ্রামে। সিনিয়র স্কলার প্রোগ্রামে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন সহযোগী অধ্যাপক পদে কর্মরত প্রার্থীরাও।
- আবেদন করতে যা লাগবে
আবেদনের সময় বেশকিছু প্রয়োজনীয় কাগজের অনুলিপি জমা দিতে হবে বৃত্তিপ্রত্যাশী প্রার্থীদের।
আবেদনপত্রে থাকবে :
১. আবেদন ফরম : অনলাইনে পূরণকৃত আবেদন ফরমের দুটি অনুলিপি।
২. নোটারীকৃত সর্বোচ্চ ডিগ্রির সনদ : আবেদনকারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ ডিগ্রির নোটারীকৃত সনদের অনুলিপি আবেদন ফরমের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
৩. পরীক্ষার নম্বরপত্র : সব পরীক্ষার নম্বরপত্রের নোটারীকৃত অনুলিপি আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
৪. শিক্ষা পরিকল্পনা বা গবেষণা প্রস্তাবপত্র : ইংরেজি বা চীনা ভাষায় লিখিত শিক্ষা পরিকল্পনা বা গবেষণা প্রস্তাবপত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এটা স্নাতকদের জন্য ন্যূনতম ২০০ শব্দ এবং স্নাতকোত্তর প্রার্থীদের জন্য ৮০০ শব্দ হতে হবে।
৫. সুপারিশের পত্র : স্নাতকোত্তর ও সিনিয়র স্কলার প্রোগ্রামে আবেদনের জন্য অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপকের দুটি সুপারিশপত্র (রিকমেন্ডেশন লেটার) দিতে হবে।
৬. কাজের নমুনা : মিউজিক স্টাডিজে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী প্রার্থীদের কাজের নমুনাসংবলিত সিডি এবং চারুকলায় (ফাইন আর্টস) আবেদনকারীদের কাজের নমুনা সিডিসহ দুটি স্কেচ, দুটি রঙিন চিত্রকর্ম ও অন্যান্য কাজের দুটি নমুনা আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
৭. বৈধ অভিভাবকের প্রমাণপত্র : কোনো আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের কম হলে চীনে অবস্থানরত তাঁদের বৈধ অভিভাবকের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।
৮. স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ : যাঁরা চীনে ছয় মাসের বেশি অবস্থান করতে চান, তাঁদের স্বীকৃত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ নিতে হবে। কোনো প্রার্থী মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরই মধ্যেই অ্যাডমিশন লেটার পেয়ে থাকলে সেটির অনুলিপিও আবেদনপত্রের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজগুলো যদি অন্য কোনো ভাষায় লিখিত হয়, তাহলে সেগুলো অবশ্যই ইংরেজি অথবা চীনা ভাষায় অনুবাদ করে দিতে হবে।
- যেভাবে আবেদন করবেন
শিক্ষাবৃত্তি গ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন www.csc.edu.cn/laihua অথবা www.campuschina.org ঠিকানায়। ওয়েবসাইটের ‘Application Online for International Students’ অপশনের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীকে অবশ্যই নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করে নিতে হবে।
লগইনের পরবর্তী ধাপে ‘Chinese Government Scholarship’ নির্বাচন করতে হবে। পরের পাতায় প্রার্থীর বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হবে। এখানে এজেন্ট নম্বর (বাংলাদেশের জন্য এজেন্ট নম্বর ০৫০১) ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে আবেদন ফরম সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। সফলভাবে এ ধাপ শেষ করে পরবর্তী ধাপগুলোতে বৃত্তিপ্রত্যাশী প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভর্তিচ্ছু কোর্স ও অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিতে হবে। সবশেষে ‘Confirmation to submit’ অপশনের মাধ্যমে শেষ হবে আবেদন প্রক্রিয়া।
পূরণকৃত ফরমটি ডাউনলোড করে দুটি অনুলিপি অন্যান্য কাগজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (শিক্ষা বিভাগ অথবা ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস) কাছে জমা দিতে হবে। আবেদনের এ প্রক্রিয়া চালু থাকবে ১ এপ্রিল-২০১৬ তারিখ পর্যন্ত। আবেদনের জন্য বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে www.csc.edu.cn/laihua ওয়েবসাইট ঠিকানায়। এ ছাড়া দেখে নিতে পারেন ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসের দেওয়া বিজ্ঞাপন।