একের ভেতর অনেক
- সুমনা মাহি
ফয়সালকে যদি একবাক্যে পরিচয় করিয়ে দিতে হয় তাহলে কী বলে পরিচয় করিয়ে দেবেন? উত্তর-‘একর ভেতর অনেক’। হ্যাঁ, ফয়সাল এমনই এক তরুণ যিনি সত্ত্বায় ধারণ করেছেন বহুমুখী প্রতিভার বীজ। সেই বীজ ইতিমধ্যে নানা সাফল্যের ফুল ও ফল বয়ে এনেছে। ভবিষ্যতে আরও আনবে তাতে সন্দেহ নেই।
পুরো নাম ফয়সাল বিন আবুল কাসেম। পড়ালেখা করছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারে। তবে এই একাডেমিক পরিচয়কে ছাড়িয়ে তিনি তাঁর পরিচয়কে বিস্তৃত করেছেন নানা দিকে। এই যেমন-তিনি সোশ্যাল বিজিনেস স্টুডেন্টস ফোরাম (এসবিএসফ), ন্যাচার স্টাডি ক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত। এছাড়া তিনি সাইক্লিং করেন। আর ঘুরে বেড়ান দেশ-বিদেশ।
এসব করতে করতে ঝুলিতে ভরেছেন বেশকিছু পুরস্কার ও সম্মাননা। এ বছরই তিনি পেয়েছেন সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কার ডিউক অব এডিনবরা অ্যাওয়ার্ড।‘এটি এমন এক পুরস্কার যেটি ১৪-২৪ বছর বয়সী তরুণদের দেওয়া হয়। মূলত সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাফেল্যের কারণে তরুণ শিক্ষার্থীরা এ পুরস্কার পান। বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশে ডিউক অব এডিনবরার কান্ট্রি চ্যাপ্টার রয়েছে।’ বলছিলেন ফয়সাল।
ইতিমধ্যে এই মেধাবী তরুণ ভ্রমণ করেছেন দুটি দেশ-ভারত ও তুরস্ক। শুধু ভ্রমণ নয়, বলা চলে পড়ালেখা ও ভ্রমণ দুটোই করেছেন তিনি। ফয়সাল বলেন, ‘২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কে এক সেমিস্টার এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের জন্য আমাকে নির্বাচন করে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও দূতাবাস মোকাবেলা করার পর ৬ষ্ট সেমেস্টার পড়ার জন্য অক্টোবর মাসে চলে যাই তুরস্কের কারাবুক ইউনিভার্সিটিতে। আমরা যে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে গিয়েছি সেটা তুরস্ক সরকার কর্তৃক পরিচালিত ‘‘মেভলানা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম”। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় (ড্যাফোডিল) এই প্রথম মেভলানা প্রটোকলে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে এবং আমরা ছিলাম এর আওতায় বাংলাদেশ থেকে প্রথম শিক্ষার্থী।’
এরপর ভারত ভ্রমণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এরকম আরেকটি সুযোগ এসেছিল। সিরডাপ এবং রাজিব গান্ধী ন্যাশনাল ইন্সটিউট অব ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট এর মিলিত আয়োজনে এক সপ্তাহের একটি এক্সপোজার প্রোগ্রাম ছিল ভারতের চেন্নাইয়ে। ড্যাফোডিলের ১১ সদস্যের দলে আমিও জায়গা পেয়ে যাই। ওটা ছিল জীবনের এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।’
স্মরণীয় ঘটনা ফয়সালের জীবনে আরও আছে। তার বয়স যখন মাত্র নয়, তখনই তার হাতে কম্পিউটার তুলে দেন বাবা। তিনি ছিলেন একটি কম্পিউটার চেইন শপের ব্রাঞ্চ ম্যনেজার। এই ঘটনাই কী ফয়সালকে প্রযুক্তির প্রতি বেশি আকৃষ্ট করেছে? ফয়সাল হেসে বলেন, ‘হবে হয়তো!’
তাঁর শৈশব ও বেড়ে ওঠাও কম স্মরণীয় নয়। প্রাথমিক স্কুল শেষ করার পর তার বাবা তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেন হিফজ করার জন্য। হিফজ শেষে কাওমি মদ্রাসায় হাদিস এবং ফিকাহ পড়ার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষাও চালিয়ে যান তিনি। ২০১১ সালে মাদ্রাসার পড়ালেখা শেষ করেন। ২০১৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটে ভর্তি হন।
অবসর খুব একটা মেলে না। তবু যখনই সময় পান বেড়িয়ে পড়েন সাইকেল নিয়ে। তাঁর অন্যতম শখ হচ্ছে সাইক্লিং। একদিনে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার প্যাডেলিং করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। ফয়সাল বলেন, ‘২০১০ সালে ইংল্যান্ড থেকে আসা এক দলের সাথে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত গিয়েছিলাম সাইকেল চালিয়ে দুই দিনে। সেটি ছিল ক্লেমন পানীয়ের পক্ষ থেকে ‘ক্লেমন রাইড ফর গ্রিন’ নামে একটি রাইড। জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে সবাইকে সচেতন করা ছিল এর উদ্দেশ্য। রাইড শেষে এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহনের স্বীকৃতিস্বরূপ সবাইকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।’
এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক সংস্থার সাইকেল র্যালিতেও অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। গত বছর ‘অ্যাকশন-২০১৫’ ক্যাম্পেইনের আওতায় ঢাকা শহরে সাইকেল র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। তিনি জানান, সারা পৃথিবীর ২২০০ সংগঠনের একটি কোয়ালিশন এটি। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে জলবায়ুর পরিবর্তন, দারিদ্র্যতা এবং সামাজিক বৈষম্যের ব্যাপারে সচেতন করাই ছিল এর লক্ষ্য।
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে এই মেধাবী তরুণ বলেন, ‘কম্পিউটার সায়েন্সের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেক্টরটি আমাকে খুব টানে। ভবিষ্যতে এর অন্তর্ভূক্ত কোনো বিষয় নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে।’