সুঁই-সুতোর গাঁথুনী গেথে অনার্স পড়ছেন রানা
- শাহজাহান নবীন, কুষ্টিয়া
প্রতিবেশী এক শুভাকাঙ্ক্ষীর সেলায় মেশিন ধার করে কাপড় সেলাইয়ের কাজ করে স্নাতক পড়ছেন তিনি। কাপড় কাটা এবং সেলাই করেন নিপূণ হাতে। হাতে কলমে প্রশিক্ষণ না থাকলেও গ্রামের এক দর্জির কাছে গিয়ে দেখে দেখে শিখে নিয়েছেন সেলাইয়ের কাজ। তার কাজে সাহায্য করেন বোন রাণী ও মা রিনা খাতুন। যখন অন্যসব স্নাতক পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা বা পড়ালেখায় ব্যস্ত তখন নিজের পড়াশোনা আর বাবা মায়ের মুখে খাবারের যোগান দিতে সুঁই-সুতোঁর গাঁথুনী এঁকে চলেছেন ‘অদম্য রানা’।
ঝিনাইদহের শৈলকূপার দুঃখী মাহমুদ ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রানা আহমেদ এমনই এক অপ্রতিরোধ্য মেধাবীর নাম। দারিদ্রতা যার কাছে হার মেনেছে, পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ যাকে করেছে আরো সুসংহত ও প্রতিজ্ঞ।
রানা আহমেদের বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী গ্রামে। এক বিকেলে কথা এই হার না মানা মেধাবী তরুণের সঙ্গে। তিনি জানান, তার বাবা আব্দুল হালিম পেশায় গ্রাম পুলিশ। যে টাকা আয় করেন তাতে পরিবারের খোরপোশ মেটাতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। তাই ছেলের রানার স্নাতক পড়ার খরচ যোগাতে অপারগতা জানিয়েছেন অনেক আগেই। তাই নিজের পড়াশোনার খরচ মেটাতে শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ।
তবে পরের সেলাই মেশিন ধার করে নিয়ে যতটুকু কাজ হয় তাতে খুব বেশি আয় করতে পারে না রানা। ফলে বর্তমানে পড়াশোনার খরচ মেটাতে গিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন মেধাবী রানা। তিনি বলেন-‘অন্যের মেশিন দিয়ে সবসময় তো আর কাজ করা যায় না। তবে একটু আধটু সময় পেলেই পাশের বাড়ির চাচির মেশিনে গিয়ে কাজ করি। তাতে যা আয় হয় তা দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালানো খুব কঠিন। এভাবে চললে হয়তো আমার পড়াশুনা আর চালাতে পারবো না।’ কথা গুলো বলতে বলতে রানার মুখে ভেসে উঠে একরাশ বিষণ্নতা।
খানিক সময় বিরতি নিয়ে ফের মৃদু কণ্ঠে জানান, টাকার অভাবে ঠিক মতো কলেজেও যেতে পারি না। নিজের একটি সেলাই মেশিন থাকলে সবকিছু চালিয়ে নিতে পারতাম।’