দশে দশ বেরোবি
- সজীব হোসাইন, রংপুর
দেশে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ূয়া তরুণদের উৎসাহ দিতেই আইডিয়া খোঁজ করছিল বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম। সারা দেশের বিভিন্ন বিভাগের মতো রংপুর বিভাগীয় আসরে জমা পরে প্রায় অর্ধশত আইডিয়া। তাদের মধ্য পাঁচটি ক্যাটাগরিতে পাঁচটি টিমের ১০ জন শিক্ষার্থী অসাধারণ আইডিয়া দিয়ে জিতে নেন পুরস্কার ও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পর্যায়ে রংপুরের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ। তরুণ এই আইডিয়াবাজদের সাথে দ্য- প্রমিনেন্টের একটি আড্ডায় তারা জানিয়েছেন তাদের আইডিয়া ও প্রস্তুতির কথা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সহযোগিতায় দেশব্যাপী এ আয়োজন করা হয়। গত ২৫ মার্চ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিভাগীয় আসর। এই উৎসবে আঞ্চলিক উন্নয়নের রুপকল্প তৈরি করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয়ে আইডিয়া বা ধারণা সৃষ্টি ও সামাজিক ইস্যুগুলোর সমাধানের উপায় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
১. সামাজিক ইস্যু সমাধান ক্যাটাগরিতে ‘রিজিওনাল ইকোনমি ইন ২০২৫ অ্যান্ড কী ড্রাইভার’ এর ওপর তথ্য উপস্থাপন করে পুরস্কৃত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাফি– সৌরভ ও সওদা বিনতে মোস্তফা। তাদের আইডিয়া সম্পর্কে সৌরভ বলেন, রংপুরের মানব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও সম্ভাবনার উপরে তারা জোর দেন । তারা এই অঞ্চলে হাইটেক পার্ক, ইনফরমেশন ও টেকনোলজিক্যাল ইনিস্টিটিউট, শিল্পকারখানা গড়ে তোলার পক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরেন।
২. ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে ‘সার্ভিসিং ক্যাম্পাস’ শিরোনামের আইডিয়া দিয়ে পুরস্কৃত হন পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ আল-সাগর ও আল আমিন ইসলাম। তাদের আইডিয়া সম্পর্কে সাঈদ বলেন, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী যেমন মোবাইল, টেলিভিশন, কম্পিউটার রেফ্রিজেরেটর মেরামত সংক্রান্ত। তিনি বলেন, ‘এ সকল ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী মেরামত সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী শিক্ষা প্রদান করে স্বাবলম্বী করে তোলা।’ অপর সদস্য আল আমিন বলেন, ‘দেশে বিপথে বিদেশ গমনের হার বাড়ছে ফলে যুব সমাজ ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে যুব সমাজকে মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।’
৩. টেকনোলজি ফ্রেশ আইডিয়া ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারুক আহমদ এবং এস এম আল-আরিফ। ফারুখ তাদের আইডিয়া সম্পর্কে বলেন, তারা গতানুগতিক সার্চ ইঞ্জিনের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করে সেগুলো কাটিয়ে উঠার একটি উপায় হিসেবে ‘ইন্টেলিজেন্ট সার্চ অ্যাসিস্টেন্ট’ তৈরির আইডিয়া উপস্থাপন করেন। তারা আশাবাদী এই সিস্টেমের সাহায্যে ব্যবহারকারীরা আগের তুলনায় দ্রুত প্রয়োজনীয় তথ্য খুজে পেতে সক্ষম হবে। এবং তাদের এই সিস্টেমটি স্পাম মুক্ত ওয়েব রিসোর্স পেতে ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা প্রদান করবে।
৪. নারী উদ্যোক্তা ক্যাটেগরিতে ‘Food Van Business by Women in the Campus’ শিরোনামের আইডিয়া দিয়ে পুরস্কৃত হন উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার ষ্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মার্জিনা মাসুদ দ্বীপা এবং মাহাবুব চৌধুরী। তাদের আইডিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে মার্জিনা মাসুদ দ্বীপা বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবিত আইডিয়া ক্যাম্পাস কিচেন হলো নারী কর্তৃক পরিচালিত এমন একটি ব্যবসা যেখানে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী বাঙ্গালী খাবার পরিবেশন করা হবে। যা নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং ঐতিহ্যবাহী বাঙ্গালী খাবার সংরক্ষণে অবদান রাখবে। জাতীয় প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ সম্পর্কে টিমের অন্য সদস্য মাহাবুব চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় পর্যায়ে এই রকম একটি প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করা সত্যিই অনেক বড় প্রাপ্তি। এ রকম একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নারী ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করতে আমাদের আরও অনুপ্রাণিত করবে।’
৫. সামাজিক ইস্যু ক্যাটেগরিতে ‘Stereotype Gender construction through socialization’ শিরোনামের আইডিয়া দিয়ে পুরস্কৃত হন উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার ষ্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোর্শেদ আলী এবং দোলন রায়। তাদের আইডিয়া সম্পর্কে দোলন রায় বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্যের শুরুটাই হয় একটি সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আমাদের ‘Family life education programme and Gender training education in school’ প্রকল্পের মাধ্যমে এই সামাজিকীকরণ প্রকিয়ায় জেন্ডার নিরপেক্ষ ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমতা ভিত্তিক সমাজ বিনির্মান করাই আমাদের লক্ষ্য।
এভাবেই নিজেদের আইডিয়া নিয়ে কথা বলছিলেন তরুণ এই আইডিয়াবাজেরা। দেশব্যাপী সাতটি বিভাগের আইডিয়া নিয়ে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা ‘স্পাইক এশিয়া’ নামক দক্ষিণ এশিয়ায় সৃজনশীলতার বৃহত্তম উৎসবে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন। তাই রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধিদের চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।