নাচ নিয়ে স্বপ্নের ঠিকানায়
- মেহেদী তারেক
স্বপ্ন মানুষকে সামনে চলতে সাহস যোগায়। বাস্তবতা হলো কঠিন সত্য যা তার প্রকৃত অবস্থার জানান দেয়। আর স্বপ্ন যখন বাস্তবতার সঙ্গী হয় তখন আসে সাফল্য। তেমনি স্বপ্ন বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মাটি সিদ্দিকীর জীবনে।
সাড়ে তিন বছর বয়সে প্রথম স্টেজ শো করা মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে জানতোই না নাচ নিয়ে ক্যারিয়ার গড়া যায়।বাবা ইকবাল সিদ্দিকী আর মা সাজেদা রোজীর একমাত্র মেয়ে মাটি। ছোটবেলা কেটেছে গাজীপুরে। কচিকাঁচা একাডেমি থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করলেও মাঝখানে ২ বছর কাটিয়েছেন ভারতের দার্জিলিংয়ের সেন্ট অগাস্টিন স্কুলে। সেখান থেকে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারী মহিলা কলেজে। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। আর এখানেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ।
তিন বছর বয়স থেকে নাচ শেখা শুরু। মা ছিলেন স্কুলের শিক্ষিকা। সেই সুবাদে স্কুলে ভর্তির আগেই নাচের ক্লাসে ছিল নিয়মিত যাতায়াত। নাচের শিক্ষক ছিলেন পারিবারিক বন্ধু। ‘আমাকে টেবিলে বসিয়ে রেখে নাচের ক্লাস করানো হত। সেখান থেকে নাচের প্রতি ভালবাসার সূচনা। ঢাকার বাইরে থাকায় আগে জানতামই না নাচ নিয়ে ক্যারিয়ার করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর প্রথম বুঝতে পারলাম নাচ নিয়ে আমি এগিয়ে যেতে পারবো স্বপ্নের ঠিকানায়।’ এভাবেই তার শুরুর গল্প বলছিলেন মাটি।
বিটিভিতে একটা নাচের অনুষ্ঠান ছিল।অংশগ্রহণকারী কেউ একজন অনুপস্থিত ছিল। তার পরিবর্তে সেখানে এক বন্ধুর অনুরোধে প্রথম টেলিভিশনে যাত্রার সুযোগ ঘটে। অবশ্য এর আগে ছোটবেলায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ছোটদের নিয়ে করা নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনের অসংখ্য অনুষ্ঠানে।
নাচের পাশাপাশি অভিনয়, গান আর আবৃতিতেও দখল রয়েছে তাঁর। পড়াশোনায়ও শীর্ষে। হয়েছেন আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় নাচ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন। টেলিভিশনে কাজ করেছেন বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে। অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, প্রধানমন্ত্রীর চ্যাম্পিয়ন অফ দ্যা আর্থ উদযাপন অনুষ্ঠানসহ অসংখ্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশনায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নাচের সংগঠন কালবৈশাখীর সঙ্গে আছেন প্রতিষ্ঠার সময় থেকে। আর সর্বশেষ ফখরুল আরেফিন খানের পরিচালনায় ভুবন মাঝি নামে চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে শোবিজ জগতে পা রাখেন।
মাটি তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, ‘ভবিষ্যতে নাচ নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে চাই। পড়তে চাই বিশ্বভারতীতে। নিজের মতো করে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই আর সারা জীবন যুক্ত থাকতে চাই নাচের সঙ্গে।’
মাটির কাছে নাচ নিজেই একটা ভাষা। নাচের মাধ্যমে মানবীয় আবেগগুলো ফুটিয়ে তুলতে চান তিনি।