কথার জাদুকর আনিস
- রবিউল কমল
লেখালেখি এবং অনর্গল কথা বলা- একের ভেতর দুই আর কাকে বলে! ছোটবেলা থেকে সাহিত্যের প্রতি ছিল ভীষণ ভালোবাসা। এই ভালোবাসার কারণে স্কুলে পড়া অবস্থায় নিয়মিত কবিতা লিখতেন তিনি। তারপর শুরু হলো কথা বলার পালা। বলছিলাম ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমানের কথা। ক্যাম্পাসে তিনি আনিস নামেই বেশি পরিচিত। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। তবে এখন সে স্বপ্নের পরিবর্তন হয়েছে। এখন স্বপ্ন দেখি একজন ভালো মানুষ হওয়ার এবং একই সাথে একজন ভালো সাংবাদিক হওয়ার।
১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার রুদ্রপুর নামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে তার জন্ম। সেখানেই কেটেছে শৈশব এবং কৈশর। প্রকৃতির খুব কাছে থেকে বেড়ে উঠেছেন আনিস। আনিসের বাবা চিংড়ী ব্যাবসায়ি এবং মা গৃহিণী। ভূরুলিয়া নাগবাটি স্কুলে মাধ্যমিক এবং শ্যামনগর সরকারি মহাসিন কলেজ থেকে শেষ করেছেন উচ্চমাধ্যমিক। আর এখন স্কুল ও কলেজের পাঠ শেষ করে পড়ছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। নিজের বর্তমান ক্যাম্পাস নিয়ে আনিস বলেন, এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে এখানে ভর্তি হওয়া। ভর্তি হওয়ার পরে বুঝলাম এটাই আমার জন্য আদর্শ জায়গা। কারণ আমি পড়ার পাশাপাশি নিজের সংস্কৃতি চর্চা অব্যহত রাখতে চাই। আমি এখানে সেই সুযোগ পেয়েছি। আমার কাছে ড্যাফোডিলকে একটি সংস্কৃতিমনা বিশ্ববিদ্যালয় মনে হয়।
তিনি আরো বলেন, এখানকার শিক্ষকরা অনেক আন্তরিক। আমি তাদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শেখার সুযোগ পাচ্ছি। তাছাড়া এখানকার সাংবাদিকতা বিভাগটি বেশ সমৃদ্ধ। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পেড়ে নিজেকে গর্বিত মনে করি।
বেশ কিছু সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংগঠনের সাথে যুক্ত আনিস। তার নিজের জেলার সংগঠন ‘সুন্দরবন স্টুডেন্টস সলিডারিটি টিম’ এর সহ-সভাপতি সে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল ক্লাব, ড্যাফোডিল কমিউনিকেশন ক্লাব, অলস্টার থিয়েটার ক্লাব এবং প্রথম আলো বন্ধুসভার একজন সক্রিয় সদস্য আনিস।
আনিস অনর্গল কথা বলতে পারেন। আর এই কথা বলার জাদু দিয়েই জয় করেছেন সবার মন। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি তার এই কথার জাদু প্রয়োগ করে থাকেন। শুধু নিজের ক্যাম্পাসেই নয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল প্রোগ্রামে ডাক আসে তার। আর এসব উৎসবগুলোতে তার কথার জাদু প্রয়োগ করে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আনিস।
আনিস জানান, তিনি এক মিনিটে মানবদেহের ২০০ রোগের নাম বলতে পারেন। আর মাত্র ২০ সেকেন্ডে বলতে পারেন ৬৪ জেলার নাম। তিনি আরো জানান, ৪১১ টি মেয়ের নাম বলতে তার নাকি ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ড সময় লাগে। ১৯১ টি স্বাধীন দেশের নাম এবং মাইকেল এইচ হার্টের ১০০ মণিষীর নাম বলতে তার সময় লাগে ১ মিনিট বা ১ মিনিট ১০ সেকেন্ড। রবি ঠাকুরের ৯৫টি ছোট গল্পের নাম, সুন্দরবনের ৭৪ প্রজাতির মাছের নাম সহ ২০ আইটেমের ৩৫০০ নাম তার ঠোটস্থ। এই কথার জাদু দিয়েই তিনি ক্যাম্পাসে এখন সবার কাছে শর্ট টাইম আনিস নামে পরিচিত।
লেখাপড়ার চাপ থাকা সত্ত্বেও সংস্কৃতির চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন আনিস। অবসর পেলে নিজে লিখতে বসেন কবিতা। প্রিয় লেখকের মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুকান্ত ভট্রাচার্য।
আনিস বলেন, ‘আমি চাই একজন ভালো সাংবাদিক হতে আর স্বপ্ন দেখি সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে সমাজ বদলের।’