তিন তরুণী প্রোগ্রামারের গল্প
- ক্যাম্পাস ডেস্কঃ
সাদিয়া তাসনিম, নাফিসা নওশিন ও নিশাত তাসনিম আহমেদ—শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) তিন তুখোড় প্রোগ্রামার। গত বছর মেয়েদের জাতীয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তাঁদের দল। এখন আরও বড় মঞ্চে নিজেদের সুনাম পৌঁছে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। সেসব খবর বলছি, তার আগে তাঁদের প্রোগ্রামার হয়ে ওঠার গল্পটা বলা যাক।
প্রোগ্রামিং সাদিয়ার নেশা
সাদিয়া তাসনিম স্কুল-কলেজে পড়াশোনার সময় কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের নামও শোনেননি। তাঁর প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি হয় প্রথম সেমিস্টারে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের ওপর বাধ্যতামূলক একটা কোর্স করতে গিয়ে। প্রথম বর্ষের ওই কোর্সে রেজাল্ট হলো খুব খারাপ। হতাশ হয়ে পড়লেন। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করেন, বিভাগের এমন বড় ভাইবোনেরা ও শিক্ষকেরা চেয়েছিলেন, বিভাগে মেয়েদের একটি ‘প্রোগ্রামিং সংস্কৃতি’ গড়ে উঠুক। তাঁদের অনুপ্রেরণাতেই ধীরে ধীরে প্রোগ্রামিংয়ে আনন্দ পেতে শুরু করলেন। এখন সিএসই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্রীর কাছে প্রোগ্রামিং অনেকটা নেশার মতো।
নাফিসার স্বপ্নের শুরু ছেলেবেলায়
নাফিসা নওশিনের বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়। চিকিৎসক বাবা মোশাররফ হোসেনের চাকরিসূত্রে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের কলোনিতে বড় হয়েছেন। বাবা, বড় ভাই ও আশপাশের সবাই চিকিৎসক। বাড়ির মেয়েটারও চিকিৎসক হওয়াই মানানসই—এমন ধারণা থেকে বের হতে নাফিসা এই গণ্ডির বাইরে কোনো কিছু হতে চেয়েছিলেন। নাফিসা যখন স্কুল-কলেজে পড়তেন, তখন প্রতিবেশী দুই বড় বোন তাঁকে কম্পিউটার প্রকৌশলে পড়ার গল্প এত শুনিয়েছেন যে, ছোট্ট নাফিসার মনে কম্পিউটার প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ডালপালা ছড়াতে শুরু করেছিল। একসময় ভর্তি হলেন শাবিপ্রবির সিএসই বিভাগে। প্রোগ্রামিংয়ের হাতেখড়ি সেখানেই। এখন পড়ছেন দ্বিতীয় বর্ষে।
নিশাত—গণিত থেকে প্রোগ্রামিংয়ে
নিশাত তাসনিম আহমেদের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায়। ভালো ছাত্রী ছিলেন বলে স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা তাঁকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিতেন। বাবা কলিম উদ্দিন আহমেদ ও বড় বোন তাসনুভা তাসনিম আহমেদ তাঁকে প্রকৌশল বিষয়ে পড়তে উৎসাহিত করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে প্রোগ্রামিং বলে কোনো বিষয় আছে, সেটাই জানা ছিল না। তবে গণিত অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন শিক্ষার্থীদের ছবি পত্রিকার পাতায় দেখে ভাবতেন, ‘ইশ্, আমিও যদি চ্যাম্পিয়ন হতাম।’ অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া আর হয়ে ওঠেনি। সিএসই বিভাগে ভর্তির পর প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে পরিচিত হন। দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষ থেকেই প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী।
সাস্ট টুইংকেলস
সাদিয়া, নাফিসা আর নিশাত—তিনজন দল বেঁধে নিবন্ধন করেছিলেন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায়। দলের নাম দিয়েছিলেন সাস্ট টুইংকেলস। তখন কল্পনাও করেননি, চ্যাম্পিয়নের মুকুটটা শেষ পর্যন্ত তাঁদের হবে! মূল প্রতিযোগিতার কয়েক দিন আগে অনলাইনে ‘কোডার্স ওয়ার’ নামে একটি ওয়েবসাইট আয়োজিত প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে তাঁদের দল। বেড়ে যায় আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাস পুঁজি করেই সাস্ট টুইংকেলসই চ্যাম্পিয়ন হয় প্রথম ন্যাশনাল গার্লস প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (এনজিপিসি)-২০১৫-তে।
প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় সাফল্য শাবিপ্রবির সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য এখন নিয়মিত বিষয়। মেয়েদের মধ্যে একটা প্রোগ্রামিং সংস্কৃতি গড়ে ওঠায় উচ্ছ্বসিত শিক্ষকেরাও। শাবিপ্রবির কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. রেজা সেলিম বলেন, ‘এনজিপিসি-২০১৫-তে আমাদের মেয়েদের এই সাফল্যে আমরা খুবই খুশি। আমাদের বিভাগ থেকে আমরা মেয়েদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি, যেন তারা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে চ্যাম্পিয়ন দলটির সদস্যদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। তবে অব্যাহতভাবে প্রোগ্রামিংয়ে লেগে থাকায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। অভিন্ন সুরে তিন প্রোগ্রামার বলেন, ‘এ সাফল্যের পর আমরা বসে থাকতে রাজি নই। এবার আমরা সম্মিলিত (ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে) প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। আর হ্যাঁ, ওয়ার্ল্ড ফাইনালে যাওয়ারও স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নপূরণের লক্ষ্য নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছি।