সামিনার ভাবনায় আস্থা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।তখন গ্লোবাল ইনোভেশন থ্রো সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বা জিস্ট টেক আই প্রতিযোগিতার মূল পর্বে অংশ নেওয়াটাই সামিনার কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। কে জানত, সারা বিশ্বের সহস্রাধিক তরুণের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আইবিএর এই শিক্ষার্থী ফিরবেন প্রথম পুরস্কার নিয়ে! শুধু তা-ই নয়, ঝুলিতে ভরবেন ‘আউটস্ট্যান্ডিং ফিমেল এন্ট্রাপ্রেনিউরের’ পুরস্কারও!
২২ থেকে ২৪ জুন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে গেল সপ্তম গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সামিট। এই সম্মেলনের একটা অংশই হলো জিস্ট টেক আই। এ প্রতিযোগিতায় সারা বিশ্ব থেকে তরুণেরা তাঁদের প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনার কথা জানান। সামিটের শেষ দিনে ধুমধাম করে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়েছে সামিনার হাতে। সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতেই ১৪ জুলাই তিনি এসেছিলেন প্রথম আলোর কার্যালয়ে। শুরুতেই জানতে চাই, ‘এর আগে যখন জিস্ট টেক আইয়ের প্রতিযোগী হিসেবে স্বপ্ন নিয়েতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তখন কি ভাবতে পেরেছিলেন, আপনি প্রথম হবেন?’ শুনে সামিনা হাসেন। বলেন, ‘দর্শকসারিতে বসে যখন শুনেছি, “অ্যান্ড দ্য উইনার ইজ ফ্রম বাংলাদেশ…”, তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না!’
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের তত্ত্বাবধানে দ্য আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স (এএএএস) নামে একটি অলাভজনক সংস্থা ছয় বছর ধরে এই মহাযজ্ঞের আয়োজন করে আসছে। এ বছর এক হাজারেরও বেশি উদ্যোক্তা তাঁদের পরিকল্পনা জমা দিয়েছিলেন। কারও কারও উদ্যোগ ইতিমধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে, কারওটা আছে ‘ভাবনা’ পর্যায়ে। প্রাথমিকভাবে ১০২ জন তরুণকে বাছাই করা হয়েছিল। বিচারকদের নম্বর ও অনলাইন ভোটের ভিত্তিতে এরপর নির্বাচিত হয়েছিলেন ৩০ জন। এঁদের মধ্যে ১৫ জন আইডিয়া স্টেজ বা ভাবনা পর্যায়ের এবং ১৫ জন স্টার্টআপ স্টেজ বা উদ্যোগ পর্যায়ের। তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে আয়োজিত জিস্ট টেক আইয়ের মূল পর্বে। সেখানেই তাঁরা বিচারকদের সামনে চূড়ান্ত প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন।
দুই ক্যাটাগরি থেকেই সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের দুজন প্রতিযোগী—সামিনা সারওয়াত ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র সামিদ রাজ্জাক। খালি হাতে ফেরেননি কেউই। সামিনার অর্জনের কথা আগেই বলেছি। ‘টেন মিনিট স্কুল’ নামের অনলাইন স্কুলের উদ্যোগের জন্য সামিদও পেয়েছেন ‘অনারেবল মেনশন’।
‘আস্থা’র ওপর আস্থা
সামিনা সারওয়াতের প্রস্তাবিত প্রকল্পটির নাম ‘আস্থা পিউরিফায়ার’। পানি আর্সেনিকমুক্ত করতে স্বল্পমূল্যের এই ফিল্টার বাজারজাত করার কথা ভাবছেন তিনি। প্রতিযোগিতায় যাওয়ার অনেক আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু নভো মঞ্জুরের সঙ্গে আর্সেনিক থেকে বাঁচার একটা উপায় বের করার চেষ্টা করছিলেন। ইন্টারনেট ঘেঁটে রীতিমতো গবেষণা করে তাঁরা এই পরিকল্পনা দাঁড় করিয়েছেন। সামিনা জানালেন, ধানের কুঁড়ো ব্যবহার করে ‘আস্থা পিউরিফায়ার’ তৈরি হবে। ৭০০-৮০০ টাকা মূল্যের একটি ফিল্টার কিনে ব্যবহার করলেই আর্সেনিকের ভয়াবহতা থেকে বাঁচবে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ।
আস্থা পিউরিফায়ার পুরোপুরি কার্যকর কি না, জানতে অবশ্য আরও গবেষণার প্রয়োজন। গবেষণা থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ—পুরো প্রকল্পের জন্যই জিস্ট টেক আই কর্তৃপক্ষ আর্থিক সহায়তা দেবে। তবে আর্থিক সহায়তার চেয়েও বড় পুরস্কারের কথা বলছিলেন সামিনা। ‘মূল পর্বে অংশ নেওয়ার আগে দুই দিন ছিল প্রশিক্ষণ পর্ব। প্রায় ১৫-২০ জনের একটা পরামর্শক দল ছিল আমাদের সঙ্গে। এই দলে বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সফল ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, এমনকি হলিউডের প্রযোজকও ছিলেন। পরিকল্পনার প্রতিটা ধাপে তাঁরা ভীষণ সহায়তা করেছেন। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, আগামী তিন মাস যেকোনো সময় আমি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব, পরামর্শ নিতে পারব।’
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তো পরিচয় হয়েছেই। সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগে সামিনা পেয়ে গেছেন দেশ-বিদেশের ২৯ জন বন্ধু। যাঁরা তাঁর মতোই কোনো না কোনো উদ্যোগ নিয়ে ভাবছেন। সামিনা বলছিলেন, ‘সিলিকন ভ্যালিতে এই কয়েকটা দিন আমরা প্রতিযোগীরা সারা দিন একসঙ্গে ছিলাম। একসঙ্গে গোল্ডেন গেট ব্রিজ, সান ফ্রান্সিসকো ঘুরতে গিয়েছি। জর্ডানের তরুণ মাহের আমার আইডিয়া নিয়ে আমার চেয়েও বেশি আগ্রহী ছিল। শুরু থেকেই বলছিল, “আই হোপ ইউ উইন।” কাজাখস্তানের সাবিনা ইসমাইলোরাও ভীষণ সহযোগিতা করেছে। ফেসবুকে আমাদের একটা গ্রুপ আছে। সেখানে সবার সঙ্গে যোগাযোগ হয়।’
পুরস্কার তো পাওয়া হলো। তারপর? সামিনা বলেন, ‘আইবিএ-তে এটা আমার শেষ সেমিস্টার। এখন পড়ালেখাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। ফাঁকে ফাঁকে গবেষণাও চলবে। পড়াশোনা শেষে পুরো উদ্যমে কাজে নামব।’