কমনওয়েলথ স্বর্ণজয়ী অতসী
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
স্কুলে পাঠদান করাতেন একজন শিক্ষক। একদিন তিনি অবসর নিলেন। কিছুদিন পর তাঁর উপলব্ধি হলো, ‘বিরাট ভুল করে এসেছি। দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেছি। কিন্তু পাঠ্য বইয়ের বাইরে কিছু শেখাইনি। শেখাইনি অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা কিভাবে করতে হয়। কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বিতর্ক করে নিলে যে ভালো ফল মেলে সেটাও জানাইনি। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছিল, সামিরা নামে এক ছাত্রীর জন্য। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্বকারী এক ছাত্রী। ক্লাসের অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে এড়িয়ে চলত। শিক্ষক হিসেবে উচিত ছিল মেয়েটি সম্পর্কে অন্যদের ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়া। ক্লাসের বৈচিত্র্যের জন্য কেন সে গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরা। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে এ সময় ব্যয় করিনি। শিক্ষার্থীরা যদি স্কুলে থাকা অবস্থায় অপরকে মেনে নিতে না পারে, সহ্য করতে না পারে, তাহলে বড় হয়ে কিভাবে পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেবে।’ ওই শিক্ষক আরো অনুধাবন করেন, তিনি যদি আরেকটি সুযোগ পান, তাহলে এ ভুলগুলো করবেন না। শিক্ষক হিসেবে সহিষ্ণু পৃথিবী গড়ে তুলবেন।
‘সহিষ্ণু পৃথিবী কি গড়ে তোলা সম্ভব?’ এ বিষয়ে লেখা রচনায় ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী অতসী ইমদাদ এভাবেই এক শিক্ষকের দৃষ্টিকোণ তুলে ধরে। রচনাটি লিখেছে একটি চিঠির মতো করে। কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতায় এই চিঠি জিতেছে স্বর্ণসনদ।
প্রতিবছর ব্রিটেনের রয়েল কমনওয়েলথ সোসাইটি দ্য কুইনস কমনওয়েলথ অ্যাসে কমপিটিশন আয়োজন করে। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিতে পারে। প্রতিযোগিতাটি হয় দুই ভাগে। অনুর্ধ্ব ১৪ বছর পর্যন্ত জুনিয়র ক্যাটাগরি এবং ১৮ বছর পর্যন্ত সিনিয়র ক্যাটাগরি। প্রতিযোগীরা রচনা, কবিতা ও চিঠির মতো করে লিখতে পারে।
এ রচনা প্রতিযোগিতা সম্পর্কে অতসী প্রথম জানে গত বছর। সে বছর এসএসসি পরীক্ষার জন্য অংশ নিতে পারেনি। অপেক্ষায় ছিল চলতি বছরের। চারটি বিষয়ে রচনা আহ্বান করা হয়। অতসী অংশ নেয় সহিষ্ণু পৃথিবী বিষয়ে। লিখতে হবে ইংরেজিতে। সহিষ্ণু পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা নিতে ইন্টারনেটের সাহায্য নেয় অতসী। তার চিন্তা, অনেকেই ইন্টারনেটে ঢুঁ মারবে। ভালো করতে হলে দরকার ভিন্নতা। এ কারণেই ঠিক করল চিঠির মতো লিখবে।
এ বছর ৪ মে ছিল রচনা জমা দেওয়ার শেষ দিন। যথেষ্ট পরিশ্রম করে লিখলেও পুরস্কার জিতবেই—এমন চিন্তা ছিল না অতসীর। তাই ১৫ আগস্ট ওয়েবসাইট খুলে তার চক্ষু চড়কগাছ। রৌপ্য বা ব্রোঞ্জ নয়, স্বর্ণসনদ!
‘আমি জিতব কল্পনাও করিনি। অথচ জিতেছি স্বর্ণসনদ। রানির নামে এ প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতে আমি খুব খুশি।’
কমনওয়েলথের এ প্রতিযোগিতার যাবতীয় তথ্য জানা যাবে thercs.org ওয়েবসাইটে। আগামী বছরের রচনা প্রতিযোগিতার ঘোষণা, সময়সীমা ও বিষয় জানানো হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে ব্যবসা প্রশাসক হতে চায় অতসী ইমদাদ।