বিতর্কের ৩ যোদ্ধা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
৬ আগস্ট, দুপুর ১২টা। বাসে বিটিভিতে চলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫০ ছাত্রছাত্রী। বন্ধুদের উৎসাহ দিতে চলেছেন তাঁরা। ২২তম জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১৫-র ফাইনালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুখোমুখি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের। ঢাবির জসীমউদ্দীন হল দলে আছেন—অর্থনীতি মাস্টার্সের ছাত্র শহীদুল ইসলাম, অনার্সের নাহিয়ান বিন খালেদ ও সমাজবিজ্ঞানের মাস্টার্সের ছাত্র জিহাদ আল মেহেদী। তাঁরা বিতর্কের বিষয় ‘শুধু সামাজিক সচেতনতাই পারে জঙ্গিবাদী অপতৎপরতা রোধ করতে’—র পক্ষে বলবেন। ঠিক ৩টায় অডিটরিয়ামের বাতি জ্বলে উঠল। বিচারকরা আসন গ্রহণ করলেন। শুরু হলো যুক্তির লড়াই। শহীদুল পক্ষে বলার পর বিপক্ষের প্রথম বক্তা রোশনী আক্তার তাঁর যুক্তিগুলো এমনভাবে খণ্ডন করলেন যে তাঁরা বেশ ঘাবড়েই গেলেন। তবে দলকে আবার এগিয়ে দিলেন নাহিয়ান। শেষ বক্তা জিহাদের বিতর্কও ভালো হয়েছিল। ফলাফল, চ্যাম্পিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ১৯ মাসের এই প্রতিযোগিতায় সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যালের ৭৮টি দল অংশ নিয়েছে। চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে তাঁরা পেয়েছেন ট্রফি, সোনার মেডেল ও সার্টিফিকেট। আর সেরা প্রতিযোগিতার সেরা বক্তা হয়েছেন জিহাদ আল মেহেদী।
তাঁরা তিনজনই স্কুলবেলা থেকে বিতর্কে জড়িয়ে আছেন। নাহিয়ান মতিঝিল গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুল ও ঢাকা কলেজে বিতর্ক করেছেন, সাংগঠনিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ২০০৯-১০ সেশনে মতিঝিল গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুল ও কলেজে ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। আর কলেজে পড়ার সময় ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটির সহসভাপতি ছিলেন। ২৫টিরও বেশি ট্রফি আছে তাঁর। ২০১০ সালে আইডিয়াল ডিবেটিং ক্লাব বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন। সেবার বারোয়ারিতে শ্রেষ্ঠ বক্তা হয়েছিলেন। সে বছরই ‘জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০১০’-এ সেরা বক্তা ছিলেন। ২০১১ সালে ভিকারুননিসা ডিবেটিং ক্লাব আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন। ২০১৩ সালে ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা’য় তিনি চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন। ১১তম জাতীয় টেলিভিশন স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় এককভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তার পরও এবারের অর্জন তাঁর কাছে অন্য রকম, ‘এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে খুব ভালো লাগছে।’
শহীদুলও স্কুল-কলেজে বিতর্ক করতেন। তবে কিছু শব্দ শুদ্ধভাবে বলতে সমস্যা হতো। তার পরও থেমে যাননি তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে জসীমউদ্দীন হলের হয়ে নিয়মিত বিতর্কে অংশ নিতে লাগলেন। শব্দগুলো খাতায় লিখে বারবার উচ্চারণ করতেন। মোবাইলে রেকর্ড করে শুনতেন। এভাবে সমস্যা দূর করেছেন। তিনি হলের ডিবেটিং ক্লাবের প্রেসিডেন্টও হয়েছেন। এত বড় প্রতিযোগিতায় তাঁর অংশগ্রহণ এই প্রথম। ফলে বেশ টেনশনে ছিলেন। তবে অন্যরা তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন। ফলে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। সে কথাই বললেন তিনি, ‘আমার তীব্র ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের ফসল এই সাফল্য।’
দলনেতা জিহাদও তাঁর সদস্যদের নিয়ে গর্ব করলেন, ‘নাহিয়ান-শহীদুলের সঙ্গে বোঝাপড়া খুব ভালো ছিল। এমন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রতিযোগিতায় এটি খুবই দরকার।’ জিহাদের স্কুল-কলেজ বাগেরহাটে। তখন থেকেই বিতর্ক করেন। ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত রবীন্দ্র বিতর্কে শিরোপা জিতেছেন। দুই বছর পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্কে শ্রেষ্ঠ বক্তা হয়েছেন। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন। পরের বছর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আয়োজিত ডিএমপি ইয়ুথ কার্নিভালে শ্রেষ্ঠ বক্তা হয়েছেন। গেল বছর টেলিভিশন বিতর্কে হলকে রানারআপ করেছেন। তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ বক্তা। এক বছর ক্লাবের সভাপতিও ছিলেন। সনাতন, সংসদীয়, বারোয়ারি বিতর্কে তুখোড় এই বিতার্কিক নানা জায়গায় প্রশিক্ষণও দেন। ইউনিস্যাব, বাঁধনের সক্রিয় কর্মী জিহাদ বললেন, ‘কোনো কিছু পাওয়ার জন্য নয়, আমরা ভালোবেসে বিতর্ক করি।’

 
	                
	                	
	            
 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	