রুবেল সফল মোবাইল গেমে

রুবেল সফল মোবাইল গেমে

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

‘অ্যান্ট স্ম্যাশার’ নামক একটি গেম বর্তমানে আইওএস স্টোরে পাজল ক্যাটাগরিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এখন পর্যন্ত গেমটি প্রায় দুই মিলিয়ন সংখ্যক ডাউনলোড করা হয়েছে। গেমটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দুই লাখ ডলার। গেমটির তৈরি করেছে দেশীয় গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হামজা গেমস। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা রুবেল হামজা, পেশায় সফটওয়্যার প্রকৌশলী।

রুবেল জানান, সফটওয়্যার প্রকৌশলী হলেও একসময় তার স্বপ্ন ছিল চিকিত্সক হওয়ার। তবে কোথাও সুযোগ না পাওয়ায় এক বন্ধুর পরামর্শে ভর্তি হলেন ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব আইটি (ডিআইআইটি)’তে। সেখানে পড়াশোনা করার সময় বিভিন্ন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করেন রুবেল। ভর্তির তিনমাসের মাথায় একটি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থানও অর্জন করে ফেললেন রুবেল।

পড়ালেখার পাশাপাশি মুক্ত পেশাজীবী হিসেবে ওডেস্ক (বর্তমানে আপওয়ার্ক), ইল্যান্স প্রভৃতি মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে শুরু করেন রুবেল। সে সময় তার প্রতি মাসে আয় ছিল প্রায় তিন হাজার ডলার যা তাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।

রুবেল বলেন, ‘২০১০ সালে প্রথম আমি অ্যাপ তৈরি করি। একজন বিদেশি গ্রাহকের জন্য ৭০০ ডলারে অ্যাপটি তৈরি করে দিয়েছিলাম।’ এ থেকেই অ্যাপ বানানো শুরু বলেও জানান তিনি।

এরই মধ্যে তার স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা সম্পন্ন হলো। উচ্চশিক্ষার জন্য এরপর তিনি পাড়ি জমালেন যুক্তরাজ্যে। সেখানে মাস্টার্স করার জন্য ভর্তি হলেন গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি পড়ালেখার খরচ যোগাতেন ওডেস্ক এবং ইল্যান্সে কাজ করে। তখন ইল্যান্সের প্রায় দেড় লাখ প্রোগ্রামারের মাঝে তার অবস্থান ছিল ৫০৮তম।

এরই মধ্যে ওডেস্কের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের একটি অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ হয় তার। রুবেল বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি আইফোনের জন্য বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করত। এর মালিক ছিলেন একজন লেবানিজ। তিনি আমার সাথে দেখা করে আমাকে একটি অ্যাপ তৈরি করে দিতে বললেন যা তৈরি করার জন্য অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক মাস সময় চেয়েছিল। আমি তাকে মাত্র এক সপ্তাহে কাজটি করে দিয়েছিলাম।’ রুবেলের মতে, এ ঘটনা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে বিস্মিত করে এবং তিনি রুবেলকে তার প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে অনুরোধ জানান। ‘গেম ওডিসি নামের ওই প্রতিষ্ঠানে প্রথমে খণ্ডকালীন কর্মী হিসেবে যোগ দিই আমি। যুক্তরাজ্যসহ মোট তিনটি দেশে ছিল এর কার্যক্রম। আমাকে খুব বেশি অফিসে যেতে হতো না। আমার কাজে মুগ্ধ হয়ে একসময় আমাকে যুক্তরাজ্য শাখার প্রধান প্রোগ্রামার হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।’, গেম ওডিসিতে নিজের সফলতার কথা এভাবেই জানালেন রুবেল।

তিনি আরও জানান, এ সময় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্ট হিসেবে একটি ড্রাগ অ্যান্ড ড্রপ ওয়েবসাইট বিল্ডার তৈরি করতে হয়েছিল। এর মাধ্যমে ড্রাগ অ্যান্ড ড্রপ করে কোনো ফিচার পছন্দ করা হলে সফটওয়্যারটি একটি কোড জেনারেট করে দেয়।

পরবর্তীতে রুবেলের সাথে আরও একটি অ্যাপ ও গেম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের পরিচয় হয়। এ বিষয়ে রুবেল বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি মূলত কিডস বুক এবং অ্যাপ তৈরি করত। আমি তাদের সাথে একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেছিলাম। এ প্রজেক্টটি শেষ হলে আমরা যৌথভাবে একটি আইফোনের অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চালু করি। এ প্রতিষ্ঠানে মূল বিনিয়োগ করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক নিজেই। আর আমি ছিলাম এখানে প্রধান প্রোগ্রামারের দায়িত্বে। তবে মুনাফা উভয়ই সমানভাগে নেওয়ার কথাও ছিল।’ আগামী বড়দিনের আগে এখান থেকে একটি গেম উন্মুক্ত করার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

যুক্তরাজ্যে পড়ালেখা শেষে ২০১২ সালে দেশে ফিরে আসেন রুবেল। দেশে ফিরে আবারও অ্যাপ তৈরিতে মনোনিবেশ শুরু করেন তিনি। আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য বিভিন্ন অ্যাপ ও গেম তৈরি করতে শুরু করেন তখন।

২০১৩ সালে আরও চারজন সহযোগী নিয়ে গড়ে তোলেন নিজের গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘হামজা গেমস’। রুবেল জানান, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত কর্মী সংখ্যা ছয়জন হলেও বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে আছে আরও অনেক চুক্তিভিত্তিক কর্মী। বর্তমানে আইওএস স্টোরে প্রতিষ্ঠানটির ১২০টির বেশি অ্যাপ আছে বলেও জানান রুবেল। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে রুবেল বলেন, ‘আমার যতগুলো অ্যাপ আইওএস স্টোরে রয়েছে, তার সবগুলোরই অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে গুগল প্লে স্টোরে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা না থাকায় আমরা গেমগুলো এখনও প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করতে পারিনি।’

দেশে ফিরে তাকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে বলেও জানান রুবেল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে গুগল প্লে স্টোরে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ নেই। এর ফলে আমরা আমাদের প্রিমিয়াম অ্যাপগুলো অ্যান্ড্রয়েড গ্রাহকদের জন্য বাজারে ছাড়তে পারছি না। দ্বিতীয় সমস্যা হলো বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স এখানকার ব্যাংকে জমা করাটা বেশ ঝামেলার ব্যাপার। বিভিন্ন ধাপে ভেরিফিকেশন শেষে টাকা জমা হতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাসখানেক সময় লাগে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিভিন্ন সমস্যার কারণে পাঠানো অর্থ ব্যাংকে জমা না হয়ে আবার ফেরত যায়। এ সমস্যার সমধান খুবই জরুরী।’ অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে সম্ভাবনার কেমন, জানতে চাইলে রুবেল বলেন, ‘প্রিমিয়াম এবং ফ্রিমিয়াম অ্যাপ ও গেমস থেকে আয়ে অনেক সুযোগ রয়েছে। তবে অ্যান্ড্রয়েডের তুলনায় আইওএস অ্যাপের ক্ষেত্রে আয়ের সুযোগ অনেক বেশি। আইওএস অ্যাপের ডাউনলোড সংখ্যা অ্যান্ড্রয়েডের তুলনায় অনেক কম হলেও আয় কিন্তু অ্যান্ড্রয়েডের থেকে অনেক বেশি।’

তিনি জানান, স্মার্টফোন অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট বেশ সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র। এখানে আয়ের সুযোগ অনেক। মূলত তিন ধরনের অ্যাপ রয়েছে। ফ্রি গেম বা অ্যাপগুলো থেকে কেবল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করা যায়। ফ্রিমিয়াম অ্যাপ ফ্রি ডাউনলোড করার সুযোগ থাকলেও আপগ্রেডের ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। অন্যদিকে প্রিমিয়াম অ্যাপ ডাউনলোডের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়।

যারা অ্যাপ তৈরি শিখতে আগ্রহী, তাদের উদ্দেশ্যে রুবেল বলেন, ‘অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে অনেকের মাঝেই ভুল ধারণা আছে। এর পাশাপাশি অনেক ডেভেলপার বিভিন্ন ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে নতুনদের মাঝে ভীতি করেন। অনেকের মাঝে ভুল ধারণা আছে যে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরির ক্ষেত্রে জাভা এবং আইওএস অ্যাপ তৈরির ক্ষেত্রে অবজেক্টিভ সি জানা আবশ্যক। কিন্তু এই ধারণাটি ভুল। প্রায় সবগুলো প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করেই অ্যাপ তৈরি করা সম্ভব। এর পাশাপাশি সহজে অ্যাপ তৈরি করার জন্য আছে কিছু সফটওয়্যার যেগুলো দিয়ে কোনো প্রোগ্রামিং না জেনেই অ্যাপ তৈরি করা যায়। নতুন যারা এখানে আসতে আগ্রহী, তারা এসব সফটওয়্যার ব্যবহার করেও শুরু করতে পারেন। এর মাধ্যমে খুব ভালো অ্যাপ তৈরি করা না গেলেও আগ্রহ এবং অনুপ্রেরণা পাওয়া যাবে।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment