পুষ্টিহীনতায় ভুগবে না কেউ
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
শিশুদের পুষ্টিহীনতা দূর করতে ড্যাফোডিলের চার ছাত্রছাত্রী উদ্ভাবন করেছেন একটি সহায়ক শিশুখাদ্য। এবারের সামাজিক ব্যবসা প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ হয়ে এটি জিতে নিয়েছে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রাইজ মানি।
কাজী মেজবাহ-উর রহমান ব্যবসায় প্রশাসনে চতুর্থ বর্ষে পড়েন। আর ভাস্কর সরকার, ফয়সাল বিন আবুল কাশেম ও শামসুন নাহার কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রী। আগে থেকেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল বিজনেস স্টুডেন্ট ফোরাম ও সোশ্যাল বিজনেস রিসার্চ সেন্টারের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। সেখানে তারা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামাজিক ব্যবসার ধারণাটি নিয়ে কাজ করেন। তারা জানেন, এই ধারণার মূল কথা হলো, সমাজ বা রাষ্ট্রের যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবসার মাধ্যমে সে সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি লাভও করতে হয়। তবে মুনাফা পকেটে না নিয়ে লাভের টাকা আবার ব্যবসায় খাটাতে হয়। তারা আমাদের দেশের পুষ্টিহীনতার সমস্যাটি সমাধান করতে চেয়েছিলেন। কারণ ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৪ সালের হিসাবে এ দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সের ৪১ শতাংশ শিশুই ওজনহীনতায় ভোগে। প্রতি পাঁচটি শিশুর দুটিই পুষ্টিহীন। শিশুরা ছয় মাস থেকে তিন বছর বয়সের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হয়, যখন তাদের মেধা বিকাশের সবচেয়ে উত্তম সময়। তারা আরও জেনেছিলেন, এ দেশের বিপুলসংখ্যক মা-বাবার সন্তানদের ভালো খাবার খাওয়ানোর সামর্থ্য থাকে না। আরও একটি তথ্য তাদের এই কাজে উৎসাহিত করেছিল, এ দেশের শূন্য থেকে চার বছর বয়সের শিশুর সংখ্যা মোট দেড় কোটি! এই সমস্যাটির সমাধানই তাদের চারজনকে একসঙ্গে করেছিল। তারা দল গড়ে তুললেন, নাম ‘পেডিকেয়ার’।
এ বছরের মার্চে যখন দলের যাত্রা শুরু হলো, তখনই তারা প্রতিযোগিতার কথা জানলেন। এবারের সোশ্যাল বিজনেস ক্রিয়েশন কম্পিটিশন হবে কানাডায়। যৌথভাবে আয়োজন করছে কানাডার অন্যতম সেরা বিজনেস স্কুল এইচইসি মন্ট্রিয়ল ও জার্মানির গ্রামীণ ক্রিয়েটিভ ল্যাব। সেখানে অংশ নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে আমন্ত্রণ এসেছে। শুরু হলো কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে মূল গবেষণার কাজটি করতে লাগলেন পুষ্টি ও খাদ্যকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. বেল্লাল হোসেন। ল্যাবে খাবারটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ তৈরিতে কাজ করলেন এই বিভাগের ছাত্র মাহতি হাসান। বাকি চারজন ধারণাটি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছেন। এপ্রিল-মে দুই মাস প্রতিযোগিতায় প্রজেক্ট প্রপোজাল অনলাইনে জমা দেওয়া হলো। ফেসবুক ও অনলাইন পিটিশনের মাধ্যমে সামাজিক সমর্থন জোগাড় করা হলো। বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে তারা দেখা করলেন এবং সমর্থন নিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রত্যন্ত এলাকা সুহিলপুরে হাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পুষ্টি পরীক্ষা করলেন, তাদের পুষ্টি বিষয়ে সচেতন করতে নানা পরামর্শ দেওয়া হলো এবং পরে এ বিষয়ে সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযোগিতাও হলো। লেখাপড়া জানা মায়েরা স্বাক্ষর দিলেন।
এভাবে প্রথম রাউন্ডে জেতার পর দ্বিতীয় রাউন্ড হলো জুন-জুলাইয়ে। সেখানে তারা আর্থিক সমর্থনের জন্য প্রচার চালালেন। দলনেতা মেজবাহর মনে আছে, তারা এক ডলার করে মোট চার হাজার ১০১ কানাডিয়ান ডলার সমর্থন পেয়েছিলেন, আমাদের হিসাবে দুই লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এভাবেই বাংলাদেশের একমাত্র দল হিসেবে পেডিকেয়ার ফাইনালে উঠল। তবে ভিসা জটিলতায় সেপ্টেম্বরে কানাডার মূল মঞ্চে তাদের যাওয়া হলো না। সেখানে তাদের হয়ে অন্য দুটি দলের সঙ্গে লড়লেন মার্গট মোলাট দ্যু জরডিন। তিনি ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং পেডিকেয়ারের আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি।
স্কাইপের মাধ্যমে তাকে ভাস্করের নেতৃত্বে সব ধরনের সহযোগিতা দিলেন অন্যরা। মার্গট পেডিকেয়ারের প্রজেক্ট প্রপোজাল ‘পেডিকেয়ার : আ চাইল্ড গ্রোথ সাপ্লিমেন্ট ফর আন্ডারপ্রিভিলাইজড’ উপস্থাপন করলেন এবং পেডিকেয়ার ‘সোশ্যাল বিজনেস ক্রিয়েটিভ কম্পিটিশন ২০১৬’-তে রানার্স আপ হলো। লাভ করল ১৯ হাজার ডলার বা ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রাইজ মানি। প্রতিযোগিতায় এবার এশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের ৩০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ দল অংশ নিয়েছে।