ইমরানের অনুসরণীয় উদ্যোগ
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
আবদুল্লাহ আল ইমরানকে যারা চেনেন তারা জানেন, স্বপ্নবাজ এই তরুণ ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে’ উৎসাহী বরাবরই! বিশেষ করে সেবা ও উন্নয়নমূলক যে কোনো উদ্যোগে সম্পৃক্ত হন সুযোগ পেলেই। সেই সুবাদে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে ভীষণ আগ্রহী ইমরানের হাত ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রথম আইটি সোসাইটি; যে সংগঠনের কল্যাণে ঢাবির টিএসসি ও মধুর ক্যান্টিনে চালু হয়েছে ফ্রি ওয়াইফাই জোন, ৫০০ গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীকে ফ্রি ল্যাপটপ বিতরণের কাজেও জড়িয়ে ছিল তারা। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দিন বদলের স্বপ্ন দেখা ইমরান সম্প্রতি স্থাপন করেছেন আরও এক নজির। নৈমিত্তিক এক নাগরিক বিড়ম্বনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পথ চেনালেন রাজধানীবাসীকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে তার নতুন এই উদ্যোগ এরই মধ্যে পেয়েছে তুমুল প্রশংসা, গড়ে তুলছে গণসচেতনতা।
সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যারা চলাচল করেন, মিটারের চেয়ে বেশি ভাড়া গোনার বিষয়টিকে নিয়তি বলেই যেন মেনে নিয়েছেন তারা! কারণ কয়েক দফা ভাড়া সমন্বয় ও বৃদ্ধির পরও অটোচালকদের মিটারে চলাচলে ব্যাপক অনীহা। তাদের হাতে রীতিমতো জিম্মি রাজধানীবাসী। এ নিয়ে অসন্তোষ আছে সবার, কিন্তু পরিস্থিতি উত্তরণে তেমন কোনো উদ্যোগ কেউ নেয় না সচরাচর। এমনকি চালকদের এমন দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আইনি উপায় সম্পর্কেও নেই সচেতনতা।
গত ২২ সেপ্টেম্বর সকালে হাতিরপুল এলাকায় অটোরিকশা ভাড়া করতে গিয়ে ইমরান সস্ত্রীক বিড়ম্বনায় পড়েন। কোনো চালক মিটারে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না, দাবি করছিলেন দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া। ইমরান মিটারের চেয়ে বিশ টাকা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে চালকদের বিদ্রূপের মুখেই পড়ে গেলেন। স্বাভাবিকভাবেই মাথায় রক্ত উঠে গেলেও বিবাদে না জড়িয়ে সেখানে থাকা অটোরিকশাগুলোর নম্বরপ্লেটের
ছবি তুলে নেন ইমরান। তাকে ছবি তুলতে দেখে চালকদের তামাশা বাড়ে আরও। কারণ, তাদের ধারণা ছিল, মিটারে যেতে রাজি না হলেও কিছু হবে না। অধিকাংশ যাত্রীও এমনটাই ভাবেন। ইমরান হাল ছাড়েননি। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) যোগাযোগ করলে তাকে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন সংস্থাটির এনফোর্সমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক মাসুদ আলম। ইমরান সে অনুযায়ী কাজ করেন এবং ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য তার এ উদ্যোগকে সাধুবাদ না জানিয়ে বেশিরভাগ মানুষ তাকে নিরুৎসাহিত করেন এবং এই অভিযোগ জমা দিয়ে কিছু হবে না বলেও মন্তব্য করেন।
তাতেও দমে যাননি ইমরান। অদম্য উদ্যমের প্রতিক্রিয়া পেতেও দেরি হয়নি। অভিযোগ দেওয়ার ঠিক চারদিন পর জনৈক অটোরিকশা মালিকের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ইমরানের মোবাইল ফোনে এবং তাকে অভিযোগ তুলে নিতে অনুরোধ-উপরোধ জানানো হলেও রাজি হননি তিনি। ২৯ সেপ্টেম্বর ইমরানের ডাক পড়ে বিআরটিএর গণশুনানিতে। সেখানে গিয়ে ইমরান দেখতে পান, তার অভিযোগের ভিত্তিতে সেই অটোরিকশা ও চালকদেরও সেখানে হাজির করা হয়েছে। অটো এবং চালকদের কাগজপত্রও জব্দ করা হয়েছে। শুনানি শেষে শাস্তিও পেয়েছেন তারা। অবশ্য মানবিক কারণবশত ইমরানেরই অনুরোধে লঘু শাস্তি দেওয়া হয় দোষীদের।
অভিযোগ করার মাত্র ৫ দিনের মধ্যে বিচার নিশ্চিতের এ ঘটনাও সেদিনই ফেসবুকে পোস্ট করেন ইমরান। তার এ উদ্যোগকে এরই মধ্যে সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রায় হাজার দশেক ফেসবুক ব্যবহারকারী। প্রায় হাজার তিনেক শেয়ার হয়েছে ইমরানের এ পদক্ষেপের পুরো আপডেটটি। ব্যাপক প্রচারের ফলে বেড়েছে সচেতনতাও। ফেসবুকে এই পোস্ট দেখে কয়েকদিনে আরও অনেকেই বিআরটিএতে অভিযোগও জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিআরটিএর উপপরিচালক মাসুদ আলম জানালেন, ইমরানের মতো সচেতন হয়ে অন্য নাগরিকরাও বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন এবং তাদের সহযোগিতা নেন তবে সিএনজি অটোরিকশায় ভাড়ানৈরাজ্য বন্ধ করা সম্ভব। অভিযোগ ও তার সত্যতা মিললে অবশ্যই দোষী চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও অঙ্গীকার করলেন এই কর্মকর্তা।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ানোর আহ্বান জানালেন আবদুল্লাহ আল ইমরান। তিনি বলেন, নাগরিক সচেতন হলে দুর্বৃত্তায়ন অবশ্যই বন্ধ হবে। এ জন্য অবলম্বন করা চাই সঠিক উপায়।