হাফিজুলের ‘ডি-বট’
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
হ্যান্ডশেক’! শব্দটি হাফিজুল ইমরানের কণ্ঠে উচ্চারিত হতে যতক্ষণ। শব্দ শুনে নড়েচড়ে উঠতে যন্ত্রটি সময় নিল তার চেয়েও কম। এরপর করমর্দনের জন্য আয়েশি ভঙ্গিতে হাত বাড়াল। শুধুই করমর্দন করলে কেমন হয়! রোবটিক সুরে নিজের পরিচয়টাও দিতে থাকল, ‘আই অ্যাম ডি-বট। নাইস টু মিট ইউ!’
হাফিজুল ইমরানের বানানো ‘ডি-বট’ আরও অনেক কাজই করতে পারে। ২ অক্টোবর ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগের গবেষণাগারে বসে সেসবই দেখছিলাম আমরা। রোবটের নাম ডি-বট কেন? হাফিজুল বলেন, ‘ডি’ ও ‘বোট’ শব্দ দুটো আসলে ড্যাফোডিল ও রোবটের সংক্ষিপ্ত রূপ।
এই তরুণ গবেষক মানবাকৃতির রোবটটি বানিয়েছেন ডিআইইউয়ের সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে। শুরুটা কীভাবে? হাফিজুল ইমরান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই রোবটিকস ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তখন থেকেই মানুষকে সাহায্য করতে পারে, এমন একটি রোবট বানানোর চিন্তা।’
২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে মানবাকৃতির রোবটের কাজ শুরু করেন হাফিজুল ইমরান। এরপর রোবট বানানোর কাজটি এগিয়ে নেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগের অধীনে। রোবট তৈরির এই প্রকল্পে তত্তাবধায়ক হিসেবে ছিলেন ওই বিভাগেরই প্রধান ড. তৌহিদ ভূঁইয়া। রোবটটি তৈরির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম তাঁর কাছে, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের রোবট নিয়ে কাজ করতে এবং উচ্চতর গবেষণায় অনুপ্রেরণা দিতেই রোবট বানানো।’
এক বছর ধরে বানানো ডি-বটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে গত ২৫ সেপ্টেম্বর। তবে বছরজুড়েই নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে হাফিজুল ইমরানকে। তারই একটি অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন তিনি। রোবটের কাজ তখন প্রায় শেষ। গবেষণাগারে চালু করার পর হাফিজুল ইমরান বুঝতে পারেন পুরো রোবট বিকল হয়ে গেছে। রোবটের কোনো অঙ্গই নির্দেশনা মেনে কাজ করে না। বেশ ঘাবড়ে গেলেন তিনি। তারপর? ইমরান বলেন, ‘পুরো বডি খুলতে হলো। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পেলাম, শুধু হাতের একটি মোটর অকেজো হয়ে গেছে বলেই এই দশা।’ আবার লেগে পড়েন মেরামতের কাজে। এ রকম এক একটি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই রোবট বানানোর পর শেষ হাসিটি হাসেন হাফিজুল ইমরান।
রোবটের কাঠামো
ডি-বটের মূল কাঠামো তৈরি করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়ামের পাত ব্যবহার করে। ১৩৪ সেন্টিমিটার উচ্চতার রোবটটির দুটি অংশ। কোমর থেকে পা পর্যন্ত অংশটুকু বাদে ওপরের অংশটুকু মূল কাজে ব্যবহার করা হয়। ১৫ কেজি ওজনের রোবটটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৩২ বিটের এআরএম প্রসেসর। মানুষের দেহের মতো আচরণ করতে রোবটটির অঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ৩১টি ছোট আকৃতির মোটর। হাফিজুল ইমরান বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে নাড়াচাড়া করার সুবিধার জন্যই এত বেশি মোটর ব্যবহার করা হয়েছে।’
কী কাজ করবে ডি-বট
বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় নির্দেশনা মেনে কাজ করে এই রোবট। হাফিজুল জানান, রোবটটি শিশুদের গণনা, বর্ণমালা শেখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তা ছাড়া ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। মানুষকে বিনোদন দিতে গান গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারবে। শপিং সেন্টার কিংবা রেস্তোরাঁয় পণ্যের পরিচিতি তুলে ধরার কাজেও একে ব্যবহার করা যাবে।