প্রজ্ঞার নাচের ভুবন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
প্রজ্ঞা পারমিতা কুণ্ডু ছোটবেলা থেকেই নাচেন। চ্যানেল আইয়ের সেরা নাচিয়ে প্রতিযোগিতায় ছিলেন প্রথম ১২-তে। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের বিভিন্ন অয়োজনেও তিনি পরিচিত মুখ।
নাচের সঙ্গে তাঁর মিতালি সেই চার বছর বয়সে। তখনো স্কুলে ভর্তি হননি প্রজ্ঞা। তাঁর পুরো নাম প্রজ্ঞা পারমিতা কুণ্ডু। তখন তাঁরা থাকতেন খুলনায়। শহরের উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর স্কুলে ভর্তি হলেন তিনি। ছোট্ট মেয়েটি মায়ের হাত ধরে নাচের পোশাক পরে নাচ শিখতে যেতেন। সেই থেকে নাচের প্রতি ভালোবাসা তাঁর।
বাবার বদলির চাকরি বলে নানা জায়গায় থেকেছেন তাঁরা। কখনো গিয়েছেন যশোরের মনিরামপুরে, কখনো আবার এই জেলার কেশবপুরেও থেকেছেন। তবে কোনো দিনই নাচে ছেদ পড়েনি। নাচের স্কুলগুলোয় শিখেছেন ক্লাসিক্যাল, লোক নৃত্য ও সাধারণ নৃত্য। তবে তিনি ভালোবাসেন সাধারণ নৃত্য। হাসতে হাসতে প্রজ্ঞা বললেন, ‘এতেই আমি সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য, ভালোও লাগে।’
প্রতিযোগিতায় যাচ্ছেন তিনি সেই ছোটবেলা থেকে। যখন যেখানে থেকেছেন, সেই শহরের সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলোয়ও অংশ নিয়েছেন। উল্লেখযোগ্য সাফল্যের শুরু তাঁর এইটে ওঠে। সে বছরই ‘পদ্মকুড়ি’ নামের একটি প্রতিযোগিতায় সারা দেশের মধ্যে দলীয় নৃত্যে প্রথম হলেন। ফলে আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে গেল। তিনি ছিলেন তাঁর নাচের দলের দলনেতা। সেটি ২০০৭ সালের ঘটনা। সে বছরই বাংলাদেশ শিশু একাডেমির জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় খ (হাইস্কুল) বিভাগে সারা দেশের সব প্রতিযোগীর মধ্যে লোকনৃত্যে তৃতীয় হন তিনি। তবে স্কুলের এমন সাফল্য কলেজে উঠে ধরে রাখতে পারেননি প্রজ্ঞা। কারণ লেখাপড়ার চাপে আর সেদিকে মন দিতে পারেননি। তবে বাড়িতে চর্চা থেমে থাকেনি।
২০১০ সালে প্রজ্ঞা ভর্তি হলেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে। কলেজের তেমন কেউ-ই জানতেন না, তিনি ভালো নৃত্যশিল্পী। প্রথম বর্ষে পড়ার সময় কলেজে সরস্বতী পূজা হলো। সেখানে নাচলেন।
সেই থেকে পুরো কলেজ জেনে গেল, তাঁদের মধ্যে একজন ভালো নৃত্যশিল্পী আছেন। সেবারের পহেলা বৈশাখেও টাউন হলের অনুষ্ঠানে প্রজ্ঞার নাচ দেখে মুগ্ধ হলো দর্শকরা। প্রজ্ঞাও আরো বেশি করে নাচের জীবনে ঢুকে গেলেন।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের নবীনবরণ থেকে শুরু করে পহেলা বৈশাখ বা পহেলা ফাল্গুন—যেকোনো আয়োজনে প্রজ্ঞার নাচ থাকেই।
তিনি এখন তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বৃত্ত পরিবার’-এর সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আছেন। সেখানে তাঁরা নানা দিবস ও কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ-গান করেন। এই জীবনের গল্প বলতে গিয়ে প্রজ্ঞা বললেন, ‘শুরু থেকেই আমাকে বন্ধু-শিক্ষকরা উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। এমনও হয়েছে, পড়ালেখার চাপে কোনো অনুষ্ঠানে পারফর্ম করব না বলে ঠিক করেছি, বন্ধুরা সেটি মানতে নারাজ। তারা আমাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়া বুঝিয়ে দিয়েছে। তারপর সেখানে নাচার জন্য রাজি করিয়েছে। শিক্ষকরাও নাচি বলে আমাকে আলাদা চোখে দেখেন। এগুলোই আমার অনুপ্রেরণা।’
তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্যটি এসেছে চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে প্রতিযোগিতায়। সেখানে তিনি সারা দেশের সব নবীন নৃত্যশিল্পীর মধ্যে সেরা ১২ জনের একজন ছিলেন। অথচ প্রজ্ঞা বললেন, ‘জানেন, আমার তো এখানে অংশ নেওয়ারই কথা ছিল না। নিজের ইচ্ছা ছিল না বলে প্রতিযোগিতা নিয়ে কোনো গরজ দেখাইনি। তবে খালার জোরাজুরিতে অডিশনে নাম লেখালাম। কলেজ বন্ধ বলে হাতে সময় ছিল, তাই কয়েক দিন প্র্যাকটিসও হলো।’ এরপর চলে এলেন সেরা একুশে। তাঁদের নিয়ে ক্যাম্প শুরু হলো। সেখানে তিনটি মাস থাকতে হলো।
২০১৩ সালে শুরু হয়ে পরের বছর শেষ হওয়া এক বছরের এই প্রতিযোগিতা থেকে প্রজ্ঞা নিয়মানুবর্তিতা থেকে শুরু করে দলগত পারফরম্যান্স, বড় আসরে চাপ সামলে মনোযোগ ধরে রাখা, সবই শিখেছেন। পেয়েছেন মুনমুন আহমেদের মতো নৃত্যশিল্পীর সান্নিধ্য।
তবে প্রতিযোগিতায় গিয়ে তিনি পড়ালেখায় পিছিয়ে গেলেন। তখন বন্ধুরা, শিক্ষকরা তাঁর জন্য অনেক করেছেন। তাঁদের সেই সহযোগিতা ভোলার নয়, জানালেন তিনি। বন্ধুরা নিজেরা এসে তাঁকে পড়া বুঝিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষকরা কেবল তাঁর জন্যই অন্য সময়ে পরীক্ষা নিয়েছেন। এমনকি তাঁকে আলাদাভাবে ক্লাসও করিয়েছেন। মা-বাবার অবদানের কথাও জানালেন তিনি।
প্রজ্ঞা এখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। আমাদের দেশের নাচকে সারা দুনিয়ায় পরিচিত করানোর বাসনা তাঁর। সেই সঙ্গে তিনি ভালো ডাক্তারও হতে চান।