অবন্তি সিঁথির গানের জাদু
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
চার্লি চ্যাপলিন বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে একজন রূপসী তরুণী, একজন পুলিশ অফিসার আর একটা পার্ক দাও—আমি তোমাদের কমেডি দেব।’ চ্যাপলিনের অনুকরণে একটু ঘুরিয়ে বলতে পারেন অবন্তি সিঁথি। ‘তোমরা আমাকে একটা প্লাস্টিকের কাপ, ফয়েল পেপার আর ধাতব মুদ্রা দাও—আমি তোমাদের গান দেব!’
প্লাস্টিকের কাপ, ফয়েল পেপার আর ধাতব মুদ্রা—একটার সঙ্গে আরেকটার কোনো সম্পর্কই হয়তো চোখে পড়বে না আপনার। এগুলো দিয়েই বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে ফেলেছেন অবন্তি সিঁথি। এই ব্যতিক্রমী বাদ্যযন্ত্রে তাল তুলেই সুর ছড়াচ্ছেন তিনি। তাঁর গাওয়া গানগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অবন্তির গাওয়া ‘কাপ সং’ তরুণদের কাছে এখন দারুণ প্রিয়।
সুরের ফেরিওয়ালা অবন্তি সিঁথি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন রসায়নশাস্ত্রে। প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক সম্পন্ন করে এখন অপেক্ষায় আছেন স্নাতকোত্তরের ফলাফলের জন্য। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার চৌকাঠ পেরোনোর আগেই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যুক্ত হয়েছেন শিক্ষক হিসেবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আনন্দন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অবন্তি। নিয়মিতই গান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।
হঠাৎ এমন ব্যতিক্রমী সংগীতায়োজনে আগ্রহী হলেন কেন? অবন্তি বলেন, ‘ফেসবুকে একটি হিন্দি গানের ভিডিও দেখেছিলাম। সেখানে “কাপ সং” দেখে আমি তো মুগ্ধ। তারপর নিজেই চেষ্টা শুরু করি।’
তাঁর এই চেষ্টার গল্প প্রায় চার মাস আগের। তখনই আটঘাট বেঁধে নামেন অবন্তি সিঁথি। প্রথমে তাঁর ব্যতিক্রমী বাদ্যযন্ত্রের তালে কণ্ঠে তোলেন সোলসের গান—‘কেন এই নিঃসঙ্গতা…’। গানটি গেয়ে ভিডিও করে ফেসবুকে প্রকাশ করেন। দিন গড়াতেই সে গান শেয়ার হতে থাকে বিভিন্ন পেজে। তবে তাঁকে ব্যতিক্রমী বাদ্যযন্ত্রের শিল্পী হিসেবে পরিচিত এনে দেয় কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানটি। ‘গানগুলো সাড়া পাওয়ায় মজা পেয়ে গেলাম। তাই পরপর আরও কয়েকটা গান করার সাহস হলো।’ বলেন অবন্তি।
ফেসবুকে অবন্তির চারটি গান পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলো গাওয়ার সময় তিনি বাদ্যযন্ত্র হিসেবে প্লাস্টিকের শক্ত কাপ, ধাতব মুদ্রা, ফয়েল পেপার ছাড়াও ব্যবহার করেছেন চুলের কাঠি ও নূপুর। এসবের সঙ্গে নিজের কণ্ঠের ক্যারিশমা তো আছেই! অবন্তি বলেন, ‘আসলে বাজানোর মতো সামনে যা পাই তাই দিয়ে সুর তোলার চেষ্টা করি।’
গানের সঙ্গে অবন্তি গাঁটছড়া বেঁধেছেন ছোটবেলা থেকেই। জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও দিগপাইত শামসুল হক ডিগ্রি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী থাকার সময়ই পেয়েছেন ‘গায়িকা’ খ্যাতি। অবন্তি বলেন, ‘গিটার ও হারমোনিয়াম বাজানো ছোটবেলায় শিখেছি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও গান করতাম কলেজে পড়ার সময়।’
স্বীকৃতিও পেয়েছেন গান গেয়ে। বলছিলেন, ‘২০০৩ ও ২০০৪ সালে লোক ও নজরুলসংগীতে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। এ ছাড়া ২০০৫ সালে ক্ল্যাসিক্যাল ও লোকসংগীতেও পেয়েছি ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান স্বর্ণপদক।’
তবে সবচেয়ে বড় তারকাখ্যাতি পেয়েছেন ২০১২ সালে। টেলিভিশনে সংগীতশিল্পী খোঁজার প্রতিযোগিতা ক্লোজআপ ওয়ানে তিনি ছিলেন সেরা দশের একজন।
অবন্তি জানালেন, গান তাঁর প্রাণ। পেশা হিসেবে যে চাকরিতেই যুক্ত হোন না কেন, সুর ছড়াতে চান সারা জীবন।
অবন্তি সিঁথির ‘কাপ সং’ দেখতে পারেন এখানে: goo.gl/Ess6EW
সূত্র: প্রথম আলো