আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বুয়েটের শিক্ষার্থীরা চ্যাম্পিয়ন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
‘ওয়েলকাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা একটা কাগজ নিয়ে আমাদের অপেক্ষায় ছিলেন ভারতের ও পি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির পাঁচ শিক্ষার্থী। আমরা মানে আমিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জনের একটি দল। বিশ্বমিল আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশ নিতে ১৩ অক্টোবর দিল্লিতে পা রাখি আমরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ৩৩ জনের একটা দলও উৎসবে অংশ নিয়েছিল।
ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে ৮০ একর জায়গার ওপর বিশাল বড় সবুজ ক্যাম্পাস জিন্দাল ইউনিভার্সিটির। আয়োজকেরা জানালেন, জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। খেলাধুলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে উন্নত এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর আয়োজন করে ‘বিশ্বমিল’ আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসবের। এ বছর তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত এই উৎসবে ভারতের নানা প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ৫৮টি দল অংশগ্রহণ করে।
উৎসব শুরু হয় ১৪ অক্টোবর। তিন দিনের উৎসবে বুয়েট দল নাটক, স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি, ভারতীয় একক গান, ওয়েস্টার্ন একক গান, ওয়েস্টার্ন দলীয় সংগীত, আনপ্লাগড, এয়ার ক্র্যাশ ইত্যাদি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ঢাবি দলের অংশগ্রহণ ছিল স্কাইম, মঞ্চনাটক, মনোলগ, স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি, ভারতীয় একক গান, ওয়েস্টার্ন একক নাচ, কুইজ ইত্যাদি প্রতিযোগিতায়।
লেটার টু দ্য আনর্বন চাইল্ড নামে মঞ্চনাটক উপস্থাপন করে রানার্সআপ পুরস্কার জিতে নেয় বুয়েট দল। আর মূর্ছনা বুয়েটের সদস্যরা আনপ্লাগডে অংশগ্রহণ করে চ্যাম্পিয়ন হয়। মূর্ছনার শিল্পীরা হলেন চয়ন চক্রবর্তী, অরণ্য অনুপম, মির্জা তানজিম শরীফ, আবরার জাহিন, সৌমিত্র দাস, দীপ্ত প্রীতম নাথ ও নুসরাত জাহান। ইন্ডিয়ান সোলোতে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার জিতে নিয়েছেন বুয়েটের মির্জা তানজিম।
অন্যদিকে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার জিতেছে ঢাবি দল। ‘সর্ব রোগের মহা চিকিৎসক’ শিরোনামের মূকাভিনয় প্রযোজনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মূকাভিনয় দল প্রথম হয়। এই প্রযোজনা রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন তরুণ মাইম শিল্পী মীর লোকমান। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরিয়ার শাওন, খায়রুল বাসার, ফরিদ উদ্দীন, কামরুন্নাহার মৌসুমী, মো. রায়হান বাসার ভূঁইয়া, সানোয়ারুল হক, সাইফুল্লাহ সাদেক ও মীর লোকমান। আবহ সংগীতে ছিলেন জুম্মান সাদিক, কারিগরি সহযোগিতায় ছিলেন ইসরাত জাহান, সাইফুল্লাহ মাহফুজ ও জেরিন মারজান আশরাফি।
ইনভিজিবল লাইন শিরোনামের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি তৈরি করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের সদস্য সাইফুল্লাহ মাহফুজ। মনোলগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন অতসী আমিন ও রানারআপ হয়েছেন এস এম জুম্মান সাদিক। ভারতীয় একক গানে রানারআপ হয়েছেন জুম্মান সাদিক। ওয়েস্টার্ন একক নাচে রানারআপ ঢাবির মীর লোকমান।
উৎসবের সমাপনী দিনটা ছিল বাংলাদেশের। চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ—দুটো পুরস্কারই জিতেছে আমাদের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়। চ্যাম্পিয়ন বুয়েট, রানার্সআপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তৃতীয় হয়েছে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়। মূর্ছনা বুয়েটের সভাপতি নাশিয়াত ফাইজা বলছিলেন, ‘ভিসার ব্যবস্থা করতে আমরা সময় পেয়েছি খুব কম। ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা আমাদের খুব সহায়তা করেছেন। দশমীর আগের দিন কয়েকজন রাত নয়টা পর্যন্ত অফিসে থেকে আমাদের ভিসার ব্যবস্থা করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ। কষ্ট করে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াটা বৃথা যায়নি।’ বুয়েট ড্রামা সোসাইটির সভাপতি ফয়সালও উৎসব নিয়ে ভীষণ খুশি। তিনি বলেন, ‘পড়ালেখার চাপের মধ্যে থেকেও এখানে এসে পারফর্ম করলাম, সাফল্য পেলাম। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
সাতটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ছয়টিতেই পুরস্কৃত হওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম অ্যাকশনের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান পরিচালক মূকাভিনেতা মীর লোকমান। তিনি বলেন, ‘ঢাবির ছাত্র হিসেবে আমাদের ওপর মানুষের প্রত্যাশা অনেক। সব চাপ পেছনে ফেলে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কিছু করতে পেরেছি, তাই আনন্দিত।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক দলটির মডারেটর হিসেবে ছিলেন বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ফাদার তপন ডি রোজারিও। বাংলাদেশের এমন সাফল্যে খুব খুশি তিনিও। ফাদার রোজারিও বলেন, ‘আমি মনে করি, ঢাবি ও বুয়েটের এই অর্জন দেশের পুরো সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্যই বড় সাফল্য।’