চার উদ্ভাবকের ভুবন

চার উদ্ভাবকের ভুবন

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

তাঁরা পড়েন আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুটি প্রজেক্ট নিয়ে অনেক প্রতিযোগিতায়ও জিতেছেন। রওশন হাবিব, ফারিয়া জাহান, আনিকা সাদিয়া ও হূদিতা রিদওয়ানা মাহবুব-এর গল্প শুনুন আজ। 


তাঁরা সবাই আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। রওশন হাবিব, ফারিয়া জাহান, আনিকা সাদিয়া ও হূদিতা রিদওয়ানা মাহবুব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রছাত্রী।

তাঁদের ভাবনাগুলোর জন্ম হয়েছে কোনো চায়ের আড্ডায় কিংবা গল্পের আসরে। কখনো আইডিয়া এসেছে রওশনের মাথা থেকে, কখনো হূদিতা বলেছেন। ছোটখাটো প্রায় ৬০টি প্রজেক্ট বানিয়েছেন তাঁরা। তবে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ‘সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড রেসকিউ বোট’ ও ‘অটোমেটেড গার্মেন্টস অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম’।

‘সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড রেসকিউ বোট’ নামে নৌকা বা বোট হলেও এটি আসলে একটি রোবট। রোবটটি পাইপ বা কুয়ার মধ্যে কোনো কিছু পড়ে গেলে সেটি উদ্ধারে এগিয়ে আসবে। দলনেতা রওশন জানালেন, ‘আমাদের এই রোবট আট থেকে ১৬ ইঞ্চি চওড়া পাইপের মধ্যে ঢুকতে পারে। সেখান থেকে সে ৩০ কেজি পর্যন্ত ওজনের যেকোনো কিছু নিয়ে বের হয়ে আসতে পারে।’ কেন এটি বানাতে গেলেন? এই প্রশ্নের জবাবে ফারিয়া বললেন, ‘নানা সময়ে খবরের কাগজে আমরা দেখেছি, শিশুরা কুয়া, ম্যানহোল অথবা খোলা পাইপের মধ্যে পড়ে যায়। তখন তাদের উদ্ধার করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। কখনো কখনো শিশুমৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনাও আমাদের চোখে পড়ে। এসব দুঃখজনক ঘটনার সময় যেন ওদের বাঁচানো যায় সে জন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা।’ আনিকা বললেন, ‘আমাদের এই রোবট কেবল শিশুদের উদ্ধারই করতে পারবে না, গ্যাসের লাইন বা পানির পাইপের অথবা স্যুয়ারেজের  আবর্জনা পরিষ্কার করতেও সহায়তা করবে।’ ছয় মাসের চেষ্টায় তৈরি রোবটটি কিভাবে কাজ করবে তা জানালেন রওশন। বললেন, ‘রোবটটিকে কম্পিউটারের মাধ্যমে চালানো হবে। সাধারণ ল্যাপটপের সঙ্গে একটি তার সংযুক্ত করে সেটি রোবটের শরীরে লাগিয়ে দিলে ল্যাপটপের মাধ্যমে এর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ ছাড়া একে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কন্ট্রোল বক্সও আছে। এটিও কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এ ছাড়া রোবটের সঙ্গে সংযুক্ত আছে একটি ওয়েবক্যাম। ফলে কোনো পাইপের মধ্যে ঢুকে এটি কী করছে সেটি ক্যামেরায় পরিষ্কার দেখা যাবে এবং চাইলে তখন একে প্রয়োজনীয় নিদের্শনাও দেওয়া যাবে।’

চার হাজার টাকায় বানানো এই রোবট বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহার করা সম্ভব। তবে সে ক্ষেত্রে একে আরো উন্নত করতে হবে। এ জন্য ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হবে।

পাইপ রোবট তাঁদের অনেক প্রতিযোগিতায়ও সাফল্য এনে দিয়েছে। এটি নিয়ে তাঁরা প্রথম প্রতিযোগিতায় গিয়েছিলেন এ বছরের ৩০ এপ্রিল। এমআইএসটিতে (মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি) রোবট প্রতিযোগিতায় যৌথ সেরা হয়েছেন। এরপর নিজেদের ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত টেক ফিয়েস্তাতে প্রথম রানার-আপ ও টেকনোম্যানিয়াতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে তাঁরা মেক্সিলারেশন প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছেন। আর ২২ অক্টোবর নর্থ সাউথে ‘টেকনোভ্যানজা ২০১৬’-তে এই রোবট তাঁদের প্রজেক্ট শো-কেসিং বিভাগে চ্যাম্পিয়নের সম্মান এনে দিয়েছে।

তাঁদের আরেকটি উদ্ভাবন হলো ‘অটোমেটেড গার্মেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম’। এখানে তাঁরা এমন এক স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করেছেন, যা কোনো গার্মেন্ট বা টেক্সটাইল মিলের সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে পারবে। এ ছাড়া কিভাবে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে, সেটিও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নির্দেশ করা আছে। যেমন—কোথায় রাসায়নিক দ্রব্য, কোথায় সুতা ও কাপড় রাখলে আগুন লাগার সম্ভাবনা কম, সেটি এই ‘অটোমেটেড গার্মেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম’ বলে দেবে। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিভিন্ন সেন্সরের মাধ্যমে কাজ করবে। মানে কারখানা বা গার্মেন্টের বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের নিরাপত্তা যন্ত্রাংশ সংযুক্ত থাকবে এবং সেগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হবে। এটি নিয়ে বলতে গিয়ে হূদিতা জানালেন, ‘আমরা কয়েকটি বিষয়ের ওপর খেয়াল রেখে এটি তৈরি করেছি। যেমন—যেসব জায়গায় কাপড় বা সুতা রাখা হয়, সেখানেই সাধারণত আগুন ধরে। এই স্থানগুলোয় ফায়ার অ্যালার্ম রেখেছি, যাতে আগুন ধরার সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বেজে ওঠে এবং আগুন ছড়িয়ে পড়তে না পারে।’ তিনি আরো বললেন, ‘আমরা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে চালানো যাবে এমন একটি ভয়েস কন্ট্রোলড ইলেকট্রনিক ডিভাইস যুক্ত করেছি। এর ফলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই কোনো প্রতিষ্ঠানের সব লাইট বা ফ্যান খোলা বা বন্ধ করা যাবে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্যও ডিভাইস আছে। ফলে ফ্যাক্টরির তাপমাত্রা নির্দিষ্ট মাত্রা পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বেজে উঠবে। কোনো বিশেষ স্থানে কার্বন মনোঅক্সাইডের পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য আছে কার্বন মনোঅক্সাইড ডিটেক্টর।’ তিনটি বছরের চেষ্টায় তৈরি এই প্রজেক্ট তাঁরা বিভিন্ন কারখানা ও গার্মেন্টে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। এই উদ্ভাবন নিয়ে তাঁরা একটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ও আরেকটিতে রানার-আপ হয়েছেন। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment