ডিজিটাল যন্ত্রে প্রশ্ন ফাঁস জব্দ
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
বিগত কয়েক বছরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল প্রশ্ন ফাঁস। পরীক্ষার পর যখন শিক্ষার্থীদের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করার কথা, তখন তাঁদের নামতে হয়েছে আন্দোলনে। এ বছর কিন্তু কোথাও প্রশ্ন ফাঁসের খবর পাওয়া যায়নি। সে জন্য মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা ধন্যবাদ দিতে পারেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে সদ্য পাস করা টি এম মনিরুজ্জামান, মীর শাহরুখ ইসলাম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পড়ুয়া যাফির শাফিঈ চৌধুরী, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী কাজী আসিফ ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ইফতেখারুল ইসলামকে। স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় এই তরুণদের গড়া প্রতিষ্ঠান বন্ডস্টাইন তৈরি করেছিল এক জাদুর বাক্স! বাক্সবন্দী প্রশ্ন কিছুতেই দুষ্কৃতকারীদের হাতে পড়েনি।
কীভাবে কাজ করল এই জাদুর বাক্স? বন্ডস্টাইন তৈরি করেছে একটি ‘ডিজিটাল বক্স’ ও ‘সিকিউরিটি সিস্টেম’। পাঁচ সেকেন্ড পরপর যা বাক্সের অবস্থান সম্পর্কে বার্তা পাঠাতে সক্ষম। বোঝা গেল, আমরা জাদুর বাক্স বললেও এই জাদু আসলে প্রযুক্তির। নির্মাতারা তাই নাম দিয়েছেন ‘ডিজিটাল বাক্স’। যার সহায়তায় প্রশ্ন ফাঁস এড়াতে এবার আটঘাট বেঁধেই নেমেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
‘পুরো সিকিউরিটি সিস্টেমটি ডেভেলপ করতে মাত্র সাত দিন সময় পেয়েছিলাম আমরা। মানে আমাদের টিম। যারা কাজ করছি আমাদের গড়া প্রতিষ্ঠান “বন্ডস্টাইন” এর ব্যানারে…’ বলতে শুরু করেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা ইফতেখারুল ইসলাম। ‘ইয়ে…এরপরের বিষয়গুলো একটু টেকনিক্যাল। এটা বোধ হয় শাহরুখ বা সানি (মনিরুজ্জামান) ভালো বলতে পারবে।’ থেমে গেলেন তিনি। পাঠক, প্রতিষ্ঠানের নাম বন্ডস্টাইন হলো কেন, এ প্রশ্নটি মাথায় রাখুন। এ প্রসঙ্গে একটু পর আসছি।
টেকনিক্যাল বিষয় খানিকটা বললেন মনিরুজ্জামান, ‘মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠানো হয় বাক্সে করে। আমরা মূলত এই বাক্সটাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য একটা সিকিউরিটি সিস্টেম ডেভেলপ করেছিলাম।
যেন যে কেউ বাক্সটি খুললে আমাদের কাছে এসএমএস এর মাধ্যমে সংকেত চলে আসে।’ এটুকুই! তাতেই এত বড় সমস্যার সমাধান? ‘তা নয়। প্রশ্নগুলো যেখানে পৌঁছাবে, অর্থাৎ ঢাকার বাইরে কেন্দ্রগুলোও এই সিকিউরিটি সিস্টেমের আওতায় ছিল।’ যুক্ত করেন শাহরুখ। আরও কিছু বলার আগেই বাদ সাধলেন কাজী আসিফ। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে এর বেশি বলা যাবে না। অসাধু লোকদের আমরা কোনো ক্লু দিতে চাই না। তা ছাড়া সামনে এই সিকিউরিটি সিস্টেমটি দিয়ে আমাদের আরও কাজ করতে হবে।’
পরীক্ষার আগে-পরেও ভীষণ ব্যস্ত সময় কেটেছে বন্ডস্টাইনের কর্মীদের। ‘আমরা অধিদপ্তরকে প্রস্তাব দেওয়ার পর সময় পেয়েছিলাম মাত্র সাত দিন। বুঝতেই পারছেন, বেশ খাটতে হয়েছে।’ বলেন আসিফ। পরিশ্রমের কথা বললেন মনিরুজ্জামানও। ‘সিস্টেমটি ডেভেলপ করার পর আসলে মূল কাজটি করতে হয়েছে। সারা দেশের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র যাওয়া-আসার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি পরীক্ষার আগের দিন থেকে পরীক্ষার পর পর্যন্ত আমাদের ২৪ ঘণ্টা টানা কাজ করতে হয়েছে।’
পাঠক, এবার আমরা নিশ্চয় বন্ডস্টাইন নামের রহস্য জানতেই পারি। ‘আসলে আমরা নামের একটা অংশ নিয়েছি হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা, জেমস বন্ড সিরিজ থেকে আর বাকিটা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের নাম থেকে। জেমস বন্ডের “বন্ড” আর আইনস্টাইনের “স্টাইন”—এই দুয়ে মিলে বন্ডস্টাইন। এর পেছনে যুক্তিটা হলো, বন্ডকে যেমন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানিয়ে কাজ করতে হয়, তেমনি আমাদেরও। আর সফটওয়্যার সিস্টেম ডেভেলপের কাজ মানেই তো গাণিতিক ব্যাপার, তাই আলবার্ট আইনস্টাইন।’ বলেন ইফতেখারুল ইসলাম।
জানা গেল, এটা তাঁদের প্রথম বড় সাফল্য নয়। গুগলের ক্যাম্পেইনের জন্য রোবট তৈরির কাজও করেছেন তাঁরা। সেটাও কি এই দলটারই কৃতিত্ব? প্রশ্নের উত্তরে আসিফ জানালেন, তাঁরা ছিলেন স্কুলের বন্ধু। একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে সেই স্কুল থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ফাঁকেই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এখন নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে দেশ সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। মনিরুজ্জামান আশা প্রকাশ করলেন, ‘এখন বাংলাদেশে বসেই বিভিন্ন দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তির বড় প্ল্যাটফর্ম তৈরির সুযোগ আছে বাংলাদেশে।’