সিনেমা নিয়ে স্বপ্ন দেখি
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
নাঈম আবির, জন্ম লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জে। কলেজের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, যোগ দেন জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারে। ‘সম্রাট জোনস’ ও ‘কীর্তনখোলা’ নাটকে অভিনয় করে জানান দেন নিজের প্রতিভার। ২০১৪ সালে অংশগ্রহণ করেন এটিএন বাংলার রয়েল টাইগার নাট্যযুদ্ধে। প্রথম অংশগ্রহণে রংপুর অঞ্চল থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেন। একই বছর বিটিভির ক্যাম্পাস তারকা প্রতিযোগিতায় পঞ্চম হন। আত্মবিশ্বাসী আবির তৈরি করেন শর্টফিল্ম The Edge of Life। ২০১৫ সালে এশিয়ান ফাউন্ডেশন আয়োজিত ফিল্ম ফেস্টিভালে মোটিভশনাল ক্যাটাগরিতে এটি প্রথম স্থান অধিকার করে। আত্মহত্যা থেকে ফিরে আসার গল্প নিয়ে নির্মিত শর্টফিল্মটি দর্শক মহলে বেশ আলোড়ন তোলে।
এশিয়ান ফাউন্ডেশন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩শর অধিক প্রদর্শনী করে ফিল্মটি। এর পর একে একে তৈরি করেন শর্টফিল্ম বোধ, অথবা অন্যায়, বৃষ্টির কান্না, লিপস্টিক। পরিচয় ঘটে আরেক দুই ফিল্ম স্বপ্নচারী তরুণ মাজহারুল ইসলাম সৈকত ও রিসান আহমেদের সাথে। একসাথে কাজ করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন জাহাঙ্গীরনগর সিনে সোসাইটি। মাথার উপর আশীর্বাদ হয়ে আসেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড.কবিরুল বাশার।
রিসান আহমেদ স্কুল লাইফ থেকে স্বপ্ন সাজিয়েছেন ফিল্ম নিয়ে। কাজ শিখেন নাট্য পরিচালক মাহমুদ দিদারের হাতে। সান্নিধ্য পান আরেক নাট্য পরিচালক মোহাম্মদ আলীর। মাজহারুল ইসলাম সৈকত ছবি তোলার স্বপ্ন থেকে ক্যামেরা কিনলেও ইউটিউবে টিউটরিয়াল দেখতে দেখতে হয়ে উঠছেন সিনেমাটোগ্রাফার। তিন তরুণ এক হয়ে সাহসটা যেন বেড়ে গেলো। হাত দিলেন বড় কাজে, তৈরি করলেন নাটক ‘পাওয়া না পাওয়ার পাওয়া’। ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত নাটকটির সিনেমাটোগ্রাফি, অভিনয়, মিউজিক ভিডিও, লোকেশন সব মিলিয়ে নাটকটির শৈল্পিক গুণ ছিল অনবদ্য। ব্যাপক দর্শক সাড়া পেয়ে নির্মাণ করেন আরেকটি নাটক ‘মায়ামৃত্যু’।
এখন ক্যাম্পাসময় তাদের পরবর্তী নাটকের পোস্টার। নতুন নাটক ‘মনে আছে তো?’ নাটকটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন রিসান আহমেদ, সহকারী ছিলেন সাজেদুল ইসলাম সবুজ। চিত্রধারণে ছিলেন মাজহারুল ইসলাম সৈকত। অভিনয় করেন শিহাব শাওন, নাঈম আবির, অনিক দাস, রেফাত হাসান সৈকত, রাফিউল শাহেদা প্রাপ্তি, তানজিদা ইয়াসমিন ও আরও অনেকে। বোঝায় যাচ্ছে দিন দিন ভারী হচ্ছে এই তরুণদের দল। বাড়ছে দৌড়ানোর গতি। হাতছানি দিচ্ছে নতুন দিনের স্বপ্ন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক অসঙ্গতি, জটিলতা, বাস্তবতা ও প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত নাটকটি গত ৩০ অক্টোবর প্রদর্শিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে। কানায় কানায় পূর্ণ ছিল অডিটোরিয়াম। নাটকের মিউজিক ভিডিও ‘নীল রং ছিল ভীষণ প্রিয়’ প্রদর্শনীর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
নিজেদের শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কাজ করে যাওয়া আবির বলেন, একটি ক্যামেরা, ট্রাইপড ও একটি বুমের জোরে কাজ করছি। তেমন কোনো উন্নত প্রযুক্তি নেই আমাদের। প্রচণ্ড ইচ্ছা শক্তি সত্ত্বে নিজেদের সবটা ঢেলে দিতে পারছি না। ক্যাম্পাসে শুটিং করতে গেলে টাকা দিতে হয়, প্রদর্শনী করতেও টাকা লাগে। নিজের স্বপ্ন নিয়ে রিসান জানান, স্বপ্ন তো ধরা ছোঁয়া যায় না, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই। যা ধরতে পারি তাই আমার স্বপ্ন। সৈকত চায় প্রকৃতির কথা শুনাতে। সে তার ক্যামেরা দিয়ে মানুষের সাথে প্রকৃতির মেলবন্ধন তৈরি করাতে চায়। তরুণরা জেগে উঠলে সব সম্ভব। এভাবে হাজারো তরুণের প্রচেষ্টায় সৃষ্টিশীল কর্মে জেগে উঠবে বাংলাদেশের রুপালি জগত্। নতুনদের হাতে হোক নব দিগন্তের সূচনা।