পরিবারের মতো পরিবেশ
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানার ছোট্ট গ্রাম ভাগলপুর। একসময়ের ছায়া ঢাকা, পাখি ডাকা গ্রামটি এখন প্রায় ‘মিনি শহর’ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানালেন, এখানকার জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কেন্দ্র করেই এসেছে এ পরিবর্তন। আশপাশের প্রায় ছয়টি জেলার মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে আসে এই হাসপাতালে।
১৯৮৯ সালে শিল্পপতি জহুরুল ইসলাম তাঁর নিজ গ্রামের মানুষকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে এই হাসপাতাল গড়েছিলেন। মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি এখানে আছে ‘জহুরুল ইসলাম নার্সিং ইনস্টিটিউট’। সেবার ব্রত নিয়ে নার্স হতে ইচ্ছুক যাঁরা, চাইলে এখানে তিন বছরমেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে অংশ নিতে পারেন। সম্প্রতি চার বছরমেয়াদি ‘বিএসসি ইন নার্সিং’ কোর্সও চালু হয়েছে।
১৯৯২ সালের ২৯ আগস্ট ৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয়েছিল জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। এখন প্রতি ব্যাচে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০। এর মধ্যে ৬০ জন দেশি ও ৪০ জন ভিনদেশি শিক্ষার্থী। বিদেশি শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই আসেন ভারতের কাশ্মীর, পাঞ্জাব, কলকাতা আর নেপাল থেকে।
পড়াশোনার পাট চুকিয়ে চিকিৎসাসেবায় মন দিয়েছেন ২০টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসেই আছেন আরও ৫টি ব্যাচের ছাত্রছাত্রী। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভিনদেশেও পৌঁছে গেছে এই কলেজের সুনাম। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সৈয়দ মাহমুদুল আজিজ বলছিলেন, ‘প্রতিবছর দেশের তো বটেই, ভর্তি-ইচ্ছু বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও এত বেশি আবেদন জমা পড়ে যে বাছাই করতে হিমশিম খেতে হয়।’
ভারতের কাশ্মীর থেকে আসা ২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একজন হেনা রশিদ। বিদেশি বলেই তাঁর দিকে প্রশ্ন ছুড়েছিলাম ইংরেজি ভাষায়। চমকে দিয়ে তাঁর ঝটপট উত্তর, ‘আমি বাংলা পারি। বাংলা খুব সহজ ভাষা।’ সাবলীল বাংলায়ই বললেন, এখানে পড়তে এসে পরিবেশের সঙ্গে দ্রুতই খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। দেশের বাইরে আছেন বলে পরিবারের সদস্যদের ‘মিস’ করেন—এ নিয়ে খানিকটা দুঃখবোধ কাজ করে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসজীবনে বেশ আছেন। ক্যাম্পাসের প্রতি ভালো লাগার কথা বললেন একই ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম। বিদেশি বন্ধুর কথার সঙ্গে যোগ করলেন, ‘এখানে আমরা একটা পরিবারের মতো। সবাই সবাইকে চিনি। একে অপরের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসি। শিক্ষকেরাও সব রকম সাহায্য করেন।’
পড়াশোনার বাইরে
খেলাধুলা থেকে শুরু করে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনও হয় এই ক্যাম্পাসে। ফুটবল ও ক্রিকেটের জন্য রয়েছে আলাদা দুটি খেলার মাঠ। বার্ষিক টুর্নামেন্টের আসর বসে তাতে। আছে ছেলেমেয়েদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কমন রুম। ইনডোর গেমসের ব্যবস্থাও সেখানে আছে। শরীরচর্চার জন্য আছে ব্যায়ামাগার।
শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রতিবছর প্রকাশিত হচ্ছে বার্ষিক সাহিত্য ম্যাগাজিন ‘দ্যুতি’। প্রকাশনা উৎসবকে ঘিরে দিনভর থাকে নানান সাংস্কৃতিক আয়োজন। দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় উঠে আসে নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্য! নাচ, গান, ফ্যাশন শো থেকে শুরু করে নাটক—সবই মাতায় মঞ্চে।
আবাসিক সুবিধা
সম্পূর্ণ আবাসিক এই কলেজের ক্যাম্পাসেই রয়েছে পৃথক দুটি হল। ছেলেদের জন্য মাজেদুল ইসলাম হল আর মেয়েদের জন্য ওয়াজেদুল ইসলাম হল। এখানে পড়াকালীন টানা ছয় বছর থাকার সুযোগ-সুবিধা পান প্রত্যেক শিক্ষার্থী।
ছবির মতো ক্যাম্পাস
জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের এত সুন্দর ক্যাম্পাস—দেখে কেউ ‘রিসোর্ট’ ভেবে ভুল করে বসতে পারেন! ‘বাগান বিলাসে’ ঢাকা সাদা বেষ্টনী ঘেরা ক্যাম্পাসে আলাদা হাসপাতাল ভবন, একাডেমিক ভবন, জহুরুল ইসলাম নার্সিং ইনস্টিটিউট ও নার্সিং কলেজ, মিলনায়তন, ক্যানটিন, মসজিদ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে গড়া শহীদ মিনারসহ আরও অনেক কিছু। আছে নয়নাভিরাম টলমলে পানির বিশাল দুটি লেক। লেকপাড়ে আসন গেড়ে বসার জন্য দৃষ্টিনন্দন শণের ছাউনিতে ছাওয়া কটেজ। আর ক্যাম্পাসজুড়ে দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান তো আছেই।
মানসম্পন্ন চিকিৎসক গড়তে চাই
সৈয়দ মাহমুদুল আজিজ
অধ্যক্ষ, জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ
পড়াশোনা থেকে শুরু করে নিয়মশৃঙ্খলার ধরন অন্যান্য মেডিকেল কলেজের চেয়ে এখানে ভিন্ন। প্রথম দুই বছর শিক্ষার্থীরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রাথমিক জ্ঞানে পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে। তৃতীয় বর্ষ থেকেই সুযোগ হয় রোগীর সংস্পর্শে এসে হাতেকলমে শিক্ষা নেওয়ার।
কলেজে শিক্ষার্থীদের ভর্তি-প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি মান নিশ্চিত করা না যায় দেশে দক্ষ চিকিৎসক গড়ে উঠবে না। আমরা ‘সংখ্যায় বেশি’ নয়, বরং মানসম্পন্ন চিকিৎসক গড়তে চাই।