দেশ সেরা, অতঃপর নাসায় সেরা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে এই গেমসের শুরু। এরপর ২৫ মার্চের ঢাকা, সশস্ত্র প্রতিরোধ, মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই, একে একে পাক সেনাদের লুটিয়ে পড়া—খেলতে খেলতে এভাবেই আমাদের জন্ম ইতিহাস জানবেন গেইমার। এটি ‘মুক্তিযুদ্ধ ৭১’—নামের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম ত্রিমাত্রিক গেমসের গল্প। বানিয়েছেন শাখাওয়াত হোসেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। গেমসটি নিয়ে বললেন, ‘‘এই গেমসে ১১টি সেক্টরের মতো ১১টি ধাপ আছে। বিজয়ী হওয়ার পর গেমসে স্বাধীনতার পতাকা উড়বে। হেরে গেলেও ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’—গানটি তার মধ্যে স্বাধীনতার নতুন বোধ তৈরি করবে।’’
আজ থেকে তিন বছর আগে তিনি গেমসটি বানানো শুরু করেন। তখন তিনি তৃতীয় বর্ষে পড়েন। কিভাবে গেম বানাতে হয়, কিছুই জানতেন না। শুধু বুঝতেন, গেম ইঞ্জিন দিয়ে গেম বানাতে হয়। তখন বন্ধু অঞ্জন মাহমুদসহ অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। শাখাওয়াত বললেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের তথ্য দিয়েছে মৌসুমী চৌধুরী। গেম আর্ট নিয়ে কাজ করেছে জয়িতা শর্মা। এনিমেশন ও কোডিং মাইকেল দাস আর প্রোগ্রামিং এনামুল কবীর করা। বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হানিফ সিদ্দিকী প্রযুক্তিগত সাহায্য করেছেন। বিভাগ থেকে রুম ও দুটি কম্পিউটার ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছি। ফলে কাজটি করা সম্ভব হয়েছে।’
বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়েই প্রথমে কাজ শুরু করেছিলেন শাখাওয়াত। পরে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ‘ইনোভেশন ফান্ড’ থেকে ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ ৭১’। দুই বছর কাজের পর গেমটি তৈরি হয় এবং গেল বছরের ২৬ মার্চ এটি আইসিটি মন্ত্রণালয় উদ্বোধন করে। এখন এই গেমসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও পাশাপাশি একসঙ্গে অনেকের খেলার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন শাখাওয়াত ও তাঁর দল।
তাঁরা একটি অ্যাপসও বানিয়েছেন। এটির নাম ‘মার্শিয়ান ওয়েসিস’। নাসা অ্যাপস চ্যালেঞ্জেও এটি অংশ নিয়েছে। সেই গল্প বলতে গিয়ে শাখাওয়াত জানালেন—“‘মুক্তিযুদ্ধ ৭১’—এর সাফল্যে ভর করে আমরা অ্যাপসটি তৈরি শুরু করি। দলে ছিল চারজন—গেমসের পরিকল্পনায় এনামুল কবীর, কোডিংয়ে মাইকেল দাস, নাসার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে আরিফুজ্জামান আর আমি প্রোগ্রামিংয়ের সমস্যাগুলো সমাধান করেছি।” মঙ্গলকে কিভাবে মানুষের বসবাসের উপযোগী করা যায়, সেটি নিয়েই এই অ্যাপস। তাঁরা এর নাম দিয়েছেন ‘জার্নি টু দ্য মার্স’। ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ’ প্রতিযোগিতাটি ১৬১টি দেশে একসঙ্গে হয়। গেল বছর বাংলাদেশ পর্বে তিনটি জোন—ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে ৮৮৭টি দলের প্রজেক্ট প্রপোজাল জমা পড়ে। সেগুলোর মধ্যে ৪০টি নির্বাচিত হয়। সেখান থেকে বিচারকদের রায়ে দুটি ও দর্শকদের বিচারে একটি প্রজেক্ট ‘পিপলস চয়েজ অ্যাওয়ার্ড’ হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ইন্টারন্যাশনাল শো-কেসিংয়ের জন্য মনোনীত হয়।
এর পরের গল্প আরো সাফল্যের। ‘মার্শিয়ান ওয়েসিস’ নাসার বিচারকদের রায়ে সেরা ২৫টি প্রজেক্টের একটি হিসেবে সেমিফাইনালে ওঠে। তারপর এটি ও জাপানের একটি অ্যাপস এশিয়ার সেরা অ্যাপস হিসেবে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় যায়। সেখানে সারা বিশ্বের সেরা পাঁচটি অ্যাপসের একটি হয় ‘মার্শিয়ান ওয়েসিস’। লাভ করে দর্শকদের শিরোপা ‘পিপলস চয়েজ অ্যাওয়ার্ড’।
এসব সাফল্যের পরও বসে নেই শাখাওয়াতের দল। তাঁরা ‘ব্যাঙ লাফ’ নামের গ্রামীণ খেলার ওপর ভিত্তি করে একটি অ্যাপস বানাচ্ছেন। নাম দিয়েছেন ‘ব্যাঙ লাফ’। কেন এই উদ্যোগ—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘যেন এই খেলাটি বেঁচে থাকে, যেন হারানো শৈশব আমাদের মধ্যে ফিরে আসে।’ এই অ্যাপসেও তাঁর পুরনো দলটিই কাজ করছে। এ বছরের শেষে এটি গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাবে।