প্রতিটা দিন একেকটা আশীর্বাদ
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ব্রিটিশ অভিনেতা বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ। বিবিসির টিভি সিরিজ শার্লক থেকে শুরু করে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র ডক্টর স্ট্রেঞ্জ, যেকোনো চরিত্রেই তিনি সপ্রতিভ। দ্য ইমিটেশন গেম ছবিতে অভিনয় করে অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। মঞ্চের অভিনেতা হিসেবেও তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। তাঁর ভাবনার জগৎটা কেমন? পড়ুন এক ভিন্নধর্মী অভিনেতার কথা।
সোনার চামচ মুখে নিয়ে আমার জন্ম হয়নি। মা-বাবা তাঁদের পরিশ্রমের রোজগারের প্রায় সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন আমার পড়াশোনার পেছনে। তাই মা-বাবাকে গর্বিত করব, প্রতিদিন এই লক্ষ্য নিয়েই ঘুম থেকে উঠি।
সব সময় স্রেফ একজন অভিনয়শিল্পী হতে চেয়েছি। তারকা না, নাট্যকর্মী না, টিভি অভিনেতা না, এমনকি শার্লকও না। স্রেফ একজন অভিনয়শিল্পী। এমন একজন শিল্পী, অভিনয়ের সব ক্ষেত্রেই যার বিচরণ আছে। তারকাখ্যাতি ব্যাপারটার সঙ্গে আমি ঠিক অভ্যস্ত নই। শহরের রাস্তায় একজন অচেনা মানুষ হয়ে হাঁটতেই ভালো লাগে।
ম্যারিলিন মনরোকে নিয়ে একটা মজার গল্প আছে। একবার এক বন্ধুকে নিয়ে তিনি নিউইয়র্কের ফিফথ অ্যাভিনিউয়ের রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। এত বড় অভিনেত্রী, অথচ কেউ তাঁর পথ আগলে দাঁড়াচ্ছিল না। বন্ধুটি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী আশ্চর্য, কেউ তোমাকে চিনতে পারছে না কেন?’ ম্যারিলিন বললেন, ‘কারণ, আমি আমার মতো করে হাঁটছি না।’ এরপর তিনি মাথা উঁচু করলেন। কোমর দুলিয়ে তাঁর সেই চিরচেনা মোহনীয় ভঙ্গিতে হাঁটতে শুরু করলেন। ব্যস! যা হওয়ার তা-ই হলো। রাস্তায় যানজট লেগে গেল! লোকজন ‘ম্যারিলিন…!’ বলে ছুটে এল। আমি তো আর এমন কিছু করতে পারব না (হাসি)। নিজেকে চেনাতে হলে শার্লকের মতো ছুটন্ত ক্যাবের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া মনে হয় না আর কোনো উপায় আছে!
তাই বলে তারকাখ্যাতি ভালো লাগে না, তা বলছি না। আমি বিশ্বাস করি, নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার এটা একটা সুযোগ। আমার কাছে প্রতিটা কাজই একেকটা নতুন শুরু। সিনেমা, টিভি, মঞ্চ—যেখানেই হোক না কেন, জীবনের প্রতিটা ধাপেই মানুষ নতুন কিছু শেখে আর নতুন করে শুরু করতে পারে। ব্যাপারটা কখনোই এমন নয়, ‘আহা! যা পাওয়ার পেয়ে গেছি!’ প্রতিটা দিন একেকটা আশীর্বাদ। ছোট হোক বা বড়, কাজ কাজই। প্রতিটাই সমান গুরুত্ব দিয়ে করা উচিত।
নিজেকে আরও পরিণত করতে সুযোগ পেলেই যোগব্যায়াম করি। আশপাশে যে সার্কাস চলছে, এর মাঝখানে শান্ত, বিনীত, বিবেচক হয়ে উঠতে হলে যোগব্যায়াম একটা ভালো উপায়।এই দীক্ষাটা পেয়েছি দার্জিলিং গিয়ে। দার্জিলিং নেপাল সীমান্তের কাছে, পশ্চিমবঙ্গের একটা জায়গা। আমি তখন তরুণ। সে সময় প্রায় এক বছর আমি বৌদ্ধভিক্ষুদের ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছি। সত্যি বলতে, যতটা না তাঁদের শিখিয়েছি, তারচেয়ে বেশি আমি শিখেছি। তারা খুব শান্ত, বুদ্ধিমান ও রসবোধসম্পন্ন। ইংরেজি শেখানোটা যদিও কঠিন ছিল। ৮ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৪০ বছর বয়সী ভিক্ষুরাও ছিলেন আমার ক্লাসের ছাত্র। এই ছাত্রদের কাছেই আমি জেনেছি, মানুষের জীবনটা কত সরল, অথচ কতটা মানবিক হতে পারে।