আপনি শুনছেন কুয়েট রেডিও
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
বছর কয়েক আগের কথা। মৃণ্ময় তখন নটর ডেম কলেজে পড়তেন। বন্ধুদের সঙ্গে লেখাপড়ার ফাঁকে আড্ডা হতো। তেমনই এক আড্ডায় এক বন্ধু আফসোস করল, ‘আমাদের যদি একটা ক্যাম্পাস রেডিও থাকত, তাহলে দারুণ হতো। আরজে হতাম, কলেজ, ক্যাম্পাস লাইফের গল্পগুলো সবাইকে বলতাম।’ সেই থেকে ক্যাম্পাস রেডিওর কথা মৃণ্ময় মণ্ডল তুষারের মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
পরে ২০১৩ সালে তিনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে [কুয়েট] ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হলেন। শুরু থেকেই আইডিয়াটি বন্ধু-বড় ভাইদের বলতেন। তবে কারো কাছ থেকেই সাড়া পেলেন না। তবে প্রথম সেমিস্টারেই মৃণ্ময় জানলেন, বুয়েটে ইন্টারনেটভিত্তিক ক্যাম্পাস রেডিও চালু হয়েছে। ফলে কুয়েটের প্রথম রেডিও বানানোর স্বপ্নটি তাঁকে আরো পেয়ে বসল। রেডিওর স্বপ্নে এভাবে আরো দুটি বছর কেটে গেল। তাঁর স্বপ্নের প্রথম সঙ্গী হলেন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ১৪ ব্যাচের জয় জেমস কস্তা। সেদিন তাঁরা দুজন ক্যাম্পাসে বেড়াচ্ছিলেন। জয় মৃণ্ময়কে বললেন, ‘দাদা, আপনি শুরু করেন। আমি সঙ্গে আছি।’ সহযাত্রী পাওয়ার খুশিতে কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে রইলেন মৃণ্ময়। এরপর কাজে নেমে পড়লেন দুজন। ইন্টারনেট ঘেঁটে কিভাবে টেলিকাস্ট করতে হয় শিখলেন। তারপর একদিন জয় হলের রুমে টেলিকাস্টও করলেন। এরপর তাঁরা কুয়েটের তখনকার ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের সহকারী পরিচালক ওসমান গনির কাছে অনুমতির জন্য গেলেন। সব শুনে তিনি খুব অনুপ্রাণিত করলেন। তাঁরা লিখিত আবেদন করলেন।
এরপর আরজেদের তালিকা করতে লেগে গেলেন দুজন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে মৃণ্ময় আর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ১২ ব্যাচের সাইদুর মিলে ওয়েবসাইট বানানোর কাজ করতে লাগলেন। এর মধ্যেই তাঁদের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরে ডাক পড়ল। ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. সোবহান মিয়া বললেন, ‘তোমাদের ওয়েবসাইট দেখাও, তাহলে অনুমতি দেব।’ ফিরে এসে সাইট তৈরিতে জোরেশোরে লাগলেন মৃণ্ময়। বন্ধুদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে, জমানো টাকায় ডোমেইন কেনা হলো। সাইট দেখে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক টেস্ট ট্রান্সমিশনের অনুমতি দিলেন। তত দিনে কুয়েট রেডিওর উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়েছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুজিত কুমার শীল ও আলমগীর হোসেন এবং তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশলের প্রভাষক মেহেদী হাসান।
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ বছরের ২১ অক্টোবর রাত ১০টা ১ মিনিটে কুয়েট রেডিওর সম্প্রচার শুরু হলো। এই দিনের কথা মৃণ্ময়ের সারা জীবন মনে থাকবে। তিনি বললেন, ‘প্রথম দিন জয় আরজে ছিল। আর এখন আমাদের আরজে এবং টেকনিক্যাল এক্সপার্ট হিসেবে ৯ জন আছেন।’ তাঁরা হলেন—মৃণ্ময়, জয়, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ১৪ ব্যাচের প্রীতম কুমার সাহা গৌরব, স্টিলেরিয়া, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ১২ ব্যাচের সাঈদুর রহমান, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ১৪ ব্যাচের শিহাব আল মাহমুদ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ১৫ ব্যাচের শীষ মুইজ, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল ১৫ ব্যাচের ফাহিম শাহরিয়ার ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ১৪ ব্যাচের ফাইজা হোসেন অন্বেষা। এঁদের মধ্যে ফাহিম রেডিওর অফিশিয়াল ফটোগ্রাফার।
কুয়েট রেডিওর সব ব্যয় এখন পর্যন্ত এঁরাই বহন করছেন। তাঁরা আশাবাদী, কর্তৃপক্ষ কুয়েটের কণ্ঠস্বরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে।
কুয়েট রেডিও শুনতে পারবেন শুক্র ও শনিবার। শুক্রবার রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আরজে গৌরব ও আরজে শিহাব আছেন ‘গ্যাঞ্জাম’ নিয়ে। রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জয় আছেন ‘নাম নেই’তে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত আরজে স্টিলেরিয়া ও অন্বেষা অনুরোধের গান শোনান। আর রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আরজে মুইজ আছেন ‘ক্যাম্পাসে আমরা’ নিয়ে। সেদিন রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ‘মায়া ফানুস’ নিয়ে আছেন আরজে মৃণ্ময়। এই অনুষ্ঠানগুলোর বিশেষত্ব বললেন মৃণ্ময়—‘একের পর এক বিখ্যাত গান, ক্যাম্পাসের জনপ্রিয় গান এবং ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে শ্রোতাদের অনুরোধ করা গানগুলো আমরা পরিবেশন করি। সেগুলোতে ফাঁকে ফাঁকে আমাদের ক্যাম্পাস নিয়েও আলোচনা হয়।’ কেমন লাগছে এই কাজ—এই প্রশ্নের জবাবে আরজে গৌরব বললেন, ‘নিজের ভার্সিটিকে সবার সামনে তুলে ধরার অনুভূতিটি অসাধারণ। আমাদের সব সময় শিক্ষক-বন্ধু-শ্রোতারা অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন।’ আরজে মুইজ বললেন, ‘ভাবতে ভালো লাগে, সবাই মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোনে। তবে মনে রাখতে হয়, আমার প্রতিটি কথাই মূল্যবান। ফলে হিসাব করে বলতে হয়। এমনটা কখনোই আমি ছিলাম না। আরো প্রাপ্তি হলো—সবাই আমাদের আরজে যোগ করে নাম ধরে ডাকে।’ তবে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে বা সেমিস্টার ফাইনালের সময় কুয়েট রেডিও বন্ধ থাকে। এই রেডিওর ফেসবুক পেজ : www.facebook.com/kuetradio