অন্য রকম প্রতিযোগিতায় সেরা বাংলাদেশ
- বুশরা বেহরোজ
দল বেঁধে প্রতিযোগিতা অনেক করেছি। তবে এই প্রতিযোগিতা ছিল অন্য সব কটি থেকে আলাদা। কেন আলাদা? ছয় মাস আগে থেকে শুরু হয়েছিল এই গ্রুপভিত্তিক প্রতিযোগিতার কার্যক্রম। তার চেয়েও বড় কথা, আমার দলের সদস্যরা ছিল সম্পূর্ণ অচেনা-অজানা ছয় দেশের ছয়জন শিক্ষার্থী। কখনো দেখা না হওয়া, কথা না বলা ভিনদেশি ছয় শিক্ষার্থীর সঙ্গেই ছয় মাস ধরে চলেছে ‘গ্রুপ ডিসকাশন’। কখনো ফেসবুকে, কখনো মেইলে। তবে একেবারে ‘চ্যাম্পিয়ন’ খেতাব জিতে নেওয়াটা আমাদের জন্য বড় বিস্ময়ই ছিল। পেট্রোলিয়াম শিল্পের অন্যতম বড় সম্মেলন ‘ইন্টারন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড টেকনোলজি কনফারেন্স-২০১৬’-এর ‘স্টুডেন্টস উইক কমপিটিশন’-এর অংশ হিসেবে গত ১২ থেকে ১৬ নভেম্বর থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সম্মেলনের দশম আসর বসেছিল ব্যাংকক কনভেনশন সেন্টারে, সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা মোট তিনজন অংশ নেওয়ার সুযোগ পাই। আমি বুশরা বেহরোজ, পড়ছি বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগে। সঙ্গে বাকি দুজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী—সামিহা শাফিনাজ ও আফ্রিদা আফরোজ। আমরা সবাই নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্রী।
অনলাইনে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। বাংলাদেশ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত, নাইজেরিয়াসহ মোট ৪৭টি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন প্রতিযোগিতায়। বিশ্বের নানা দেশের আট হাজারের বেশি পেশাজীবী এবারের সম্মেলনে এসেছিলেন।
আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় তেল ও গ্যাসশিল্পের নানাবিধ সমস্যার অভিনব সমাধান খুঁজে বের করার জন্য ১০টি দলে শিক্ষার্থীদের আলাদা আলাদা প্রকল্পের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল। নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তা ছাড়াও সোসাইটি অব পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার্সের মেন্টরদের তত্ত্বাবধানে আমরা জুতসই সমাধান খুঁজছিলাম। আমার গ্রুপের বিষয়বস্তু ছিল, ‘উচ্চ তাপমাত্রা ও উচ্চ চাপ তেল কূপ থেকে তেল উত্তোলন’। সমাধান হিসেবে আর্টিফিশিয়াল নিউরাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইসো অলেফিন ও সিমেন্টিং তরলের সাহায্যে নতুন ধরনের এক ড্রিলিং কৌশল বিচারকদের সামনে উপস্থাপন করেছিলাম। আর তাতেই পেয়ে গেছি ‘চ্যাম্পিয়ন’ খেতাব! আমার দলে থাকা বাকি ছয়জন হলো অস্ট্রেলিয়ার হারিসন ফেরিয়ার, পাকিস্তানের আকাশ লুকমান, পোল্যান্ডের অগলা নসাল, থাইল্যান্ডের কাসিদিস লোসুপারিসাত, মালয়েশিয়ার পল চেন ও ভারতের আনিস আগারওয়াল।
আর হ্যাঁ, বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামিহা শাফিনাজদের প্রকল্প ‘রোবটস ফর ভেসেল ক্লিনিং’ পেয়েছিল দ্বিতীয় পুরস্কার। মনে রাখার মতো একটি দিন ছিল ১৫ তারিখ, যেদিন আমরা থাইল্যান্ডের রাজকন্যা, ‘রয়্যাল হাইনেস’ মাহা চাকরি শিরিন্ধরনের সাক্ষাৎ পাই। সব মিলিয়ে অসাধারণ কেটেছে পাঁচটি দিন।