যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি তরুণদের সাফল্য
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন উটাহর মার্স ডেজার্ট রিসার্চ স্টেশনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ। মঙ্গল গ্রহে রোবটকে আরো ভালোভাবে কাজে লাগানোর উপায় বের করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় সফল হয়েছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দুইটি দল। এতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) টিম ইন্টারপ্লানেটার ৫ম ও ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির রোবটিক ক্রু ৮ম হয়েছে।
মঙ্গল গ্রহে ব্যবহারের জন্য রোবটকে আরো কার্যকর করতে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ। সমপ্রতি ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশের তিনটি দল অংশ নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন উটাহের মার্স ডেজার্ট রিসার্চ স্টেশনে শুরু হয় ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ। প্রাথমিক পর্বে অংশ নেয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ২৮টি দল। মঙ্গলের মাটির মত করে এ পর্বে মাটি তৈরি করা হয়। এ মাটিতে প্রতিটি দলের রোবট ৫ মিনিট বিভিন্ন কাজ করে। রোবটের কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে অ্যারিস ফাইনাল এবং পোবস ফাইনালের জন্য দল গঠন করা হয়।
বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া দল তিনটির মাঝে দুইটি দল পোবস পর্বে লড়ে। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ইন্টারপ্লানেটার ৫ম এবং ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির রোবটিক ক্রু অষ্টম হয়। তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে অংশ নিয়ে এমন সফলতায় উন্নত দেশের প্রতিযোগিরা বিস্মিত হয়। এ প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করায় বিজয়ীরা মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাসহ বড় বড় কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাবে।
প্রতিযোগিতায় ৩০০ নম্বরের মাঝে টিম ইন্টারপ্লানেটার পায় ২১৩ নম্বর এবং রোবটিক ক্রু পায় ১৮৩ দশমিক ২৫ নম্বর। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়েল আন্ডারগ্রাজুয়েট রোভার অ্যাসোসিয়েশন এবং ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির ম্যাকগিল রোবটিকসের মত শক্তিশালী দলও টিম ইন্টারপ্লানেটারের পেছনে ছিল।
টিম ইন্টারপ্লানেটারের সদস্য আবুল আল আরাবী জানান, এ প্রতিযোগিতাটি অত্যন্ত সম্মানজনক একটি প্রতিযোগিতা। উন্নত দেশের প্রতিযোগিরা এ প্রতিযোগিতার পেছনে প্রচুর সময় ব্যয় করে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য প্রচুর অর্থ সহায়তা পেয়ে থাকে। তাদের তুলনায় আমাদের চ্যালেঞ্জ অনেক কঠিন। রোবট বানানো, প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পেছনে প্রায় সব টাকা আমাদের দিতে হয়েছিল। মজার কথা হলো প্রতিযোগিতায় রোভার পরিচালনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দলগুলো একটি অ্যান্টেনার পেছনে যে পরিমাণ টাকা খরচ করেছে, আমরা পুরো রোভারের পেছনে সে পরিমাণ টাকা খরচ করতে পারিনি। আমরা কম খরচে মঙ্গলে চলাচল উপযোগী রোভার বানিয়েছি। উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে হারিয়ে আমাদের টিম ইন্টারপ্লানেটারের ৫ম এবং রোবটিক ক্রু ৮ম হওয়া অনেক বড় ব্যাপার। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, আমাদের কম খরচে বানানো রোভার দিয়েও তাদের হারানো সম্ভব।’
প্রতিযোগিতায় সাফল্য পাওয়া রোভার তৈরির জন্য প্রায় এক বছর ধরে কাজ করেছে দল দুটো। রোবটিক ক্রু দলের ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমান জানান, ‘আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এটি ছিল আমাদের প্রথম প্রতিযোগিতা। কানাডা থেকে মটর ও চীন থেকে মটর ড্রাইভার নিয়ে এসেছিলাম। বাকি যন্ত্রগুলো বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করে রোবট বানিয়েছি। আমরা নিয়মিত পড়াশোনা, প্রতিযোগিতার শর্তানুসারে রোবটের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ডিজাইন, প্রোগ্রামিং করার কাজ করেছি।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ইন্টারপ্লানেটারের দলপতি খালেদ বিন মঈনুদ্দিন জানান, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নাম ছড়িয়ে দিতে চাইলে এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া এবং সাফল্য পাওয়া জরুরি। প্রয়োজন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পৃষ্ঠপোষকতা। তাহলে আগামী কয়েক বছরের মাঝে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ আরো ভালো করবে। আমি মনে করি, আগামী কয়েক বছরের মাঝে আমাদের শিক্ষার্থীদের তৈরি করা রোভার মঙ্গলে বিচরণ করবে।