প্রীতির পথ চলা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি। শিক্ষার্থী, লেখক ও শিল্পী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগে প্রথম বর্ষে পড়ছেন। পাশাপাশি ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটে। যুক্ত আছেন ইয়ং বাংলা, তরুণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিমু পরিবহন ও জাতীয় পাঠাগার আন্দোলনের সঙ্গে।
প্রীতির প্রকাশিত বই চারটি। প্রথম গ্রন্থ শিশুদের জন্য লেখা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই- ‘বাংলাদেশ নামটি যেভাবে হল’। ২০১৬ সালে আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘উনিশ বসন্ত’ একুশে বইমেলার বেস্টসেলার বইগুলির একটি। এছাড়া গল্পগ্রন্থ ‘এইসব উড়ে আসা দিন’ ও শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ ‘পেন্সিলে আঁকা গল্প’র জন্যও বেশ সাড়া পয়েছেন। ‘এইসব উড়ে আসা দিন’ গ্রন্থের ভূমিকায় কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও হামীম কামরুল হক তাদের আলোচনা তুলে ধরেন। শিশুতোষ গ্রন্থ ‘পেন্সিলে আঁকা গল্প’তে ভূমিকা লিখেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বিভিন্ন সময় ‘প্রথম আলো’, ‘সমকাল’, ‘কালের কণ্ঠ’, ‘ইত্তেফাক’, ‘অনন্যা’, ‘সাপ্তাহিক ২০০০’-সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন লিটিলম্যাগসহ দেশে ও দেশের বাইরে বেশকিছু সংকলনে প্রীতির লেখা বেরিয়েছে। ইন্টারনেটে উইমেন চ্যাপ্টার, জাগরণীয়াতে নিয়মিত নারী অধিকার, বৈষম্য, সংগ্রাম, সামাজিক অসঙ্গতি প্রভৃতি নিয়ে লিখছেন।
লেখিকা মূলত ছোটগল্প, প্রবন্ধ ও কবিতা লেখেন। পাশাপাশি চিত্রাংকন, বিতর্ক, আবৃত্তি ও সঙ্গীতের সঙ্গেও যোগ রয়েছে। সাত বছর বয়সে ক্লাস টুতে থাকাকালীন সারাদেশে ‘প্রথম আলো’ গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় সেরা গল্পকারের খেতাব জিতেন। সর্বশেষ ‘উনিশ বসন্ত’র জন্য ‘বিপ্লবী চে গুয়েভেরা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০১৬’ পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার- ২০১৫ সালে সংবাদ প্রতিবেদনের জন্য ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড লাভ, ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডে’ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যের জন্য সমগ্র সাহিত্যকর্মের উপর প্রথম পুরস্কার, ২০১৪ সালে ‘ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ এর সৃজনশীল লেখা শাখার প্রথম পুরস্কার, প্রথম আলো গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় সেরাদের সেরার খেতাব।
২০০৫, ২০০৬, ২০০৮, ২০১০, ২০১১-তে ঐতিহ্য আয়োজিত জাতীয় গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় পাঁচবারের অন্যতম সেরা গল্পকারের সম্মাননা, ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতা ও আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উত্সব আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভসহ চিত্রকলা, আবৃত্তি, বিতর্ক ও সঙ্গীতে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেশকিছু পুরস্কার, যেমন- জাতীয় শিশু পুরস্কার ২০০৩-২০০৫, সার্ফ এক্সেল পেইন্টিং কার্নিভাল ২০০৩ পুরস্কার ‘টপ টোয়েন্টি’, ফেবার ক্যাসল ইন্টারন্যাশনাল এবং ন্যাশনাল পেইন্টিং কম্পিটিশনে ২০০৫-২০০৬ সালে পুরস্কার বিতর্কে বিভাগীয় পর্যায়ে ‘সেরা বিতার্কিক’সহ নানা পুরস্কার ও সম্মানননা পেয়েছেন। পড়াশুনায় কৃতিত্বের জন্য পেয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের সম্মাননা ‘এসো বাংলাদেশ গড়ি’ এর জাতীয় পর্যায়ে ‘কৃতী শিক্ষার্থী অ্যাওয়ার্ড’, বিভাগীয় পর্যায়ে ‘মেয়র পদক’সহ বেশকিছু পুরস্কার।
লেখালেখি প্রসঙ্গে জান্নাতুন নাঈম প্রীতি বলেন, লেখালিখি করতে গিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি, মৌলবাদীদের প্রাণনাশের হুমকি, বাক-স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নানা মহলের হুমকি ছিল এবং আছে। তবে তরুণদের লেখালেখির ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে- রয়্যালিটি এবং প্রকাশক বিড়ম্বনা। বইয়ের ক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা ও রয়্যালিটি সংক্রান্ত নীতিমালা থাকা জরুরি। পাশাপাশি সাহিত্যের মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হওয়াও দরকার। নয়তো সাহিত্যে আগ্রহী লেখক, পাঠকদের সত্যিকার মেলবন্ধন অসম্ভব। দেশের তরুণদের লেখালেখি নিয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী। তাদের ভাবনা বৈচিত্র্যময়, সাহসী ও সম্ভাবনাময়। তরুণদের প্রতি লেখালিখির ক্ষেত্রে একটিই পরামর্শ রয়েছে। আমি নিজেও এটি মেনে চলি। সেটি হচ্ছে- পড়ো, পড়ো এবং পড়ো। লেখালেখিতে পড়াশুনার, অভিজ্ঞতার ও নানারকম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের বিকল্প নেই। বাবা-মা ও চার ভাইবোন, সবার ছোট প্রীতি। বড়ভাই মম আসাদুল্লাহ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, টেলিটক থ্রিজিতে চাকরিরত। এরপর বড় বোন ডক্টর সুলতানা রাজিয়া, বর্তমানে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাচারাল সায়েন্স অনুষদের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। মেজভাই ডক্টর মো. আবদুল্লাহ মাসুম, পেশায় ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।