আনিকার নাসা যাত্রা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
আনিকা নূর। খুব হিসেব করলে মাত্র পাঁচ বছর আগে অভিবাসী হয়ে সপরিবারে পাড়ি জমিয়েছেন আমেরিকায়। এই অল্প সময়ের মধ্যে আনিকা পৌঁছে গেছেন ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে পৃথিবীর সেরা মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পর্যন্ত। একটি রকেটে মহাকাশে পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের পতাকাও।
আনিকা যখন আমেরিকায় গেছেন তখন তার বয়স ১৯। গিয়েই ‘অড জবে’ ঢুকে যান। ভার্সিটির অ্যাডমিশন নিলেন। সঙ্গে ফুলটাইম জব। এরই মধ্যে বিয়ে ঠিক হলো, চলে যেতে হলো নিউইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডায়। এর মধ্যে স্যাট দিলেন। স্কলারশিপ নেই, লোন নিলেন হাই ইন্টারেস্ট রেটে।
কারণ, কমপক্ষে একবছর না হলে সরকার অর্থ সহযোগিতা করে না। এদিকে আনিকার স্বামীর চাকরি হলো অন্য স্টেটে। এবার ফ্লোরিডা থেকে কলোরাডো। মেয়েটা তখন ভয়ংকর সমস্যায়, ফান্ড নেই কিন্তু অনেক টাকা লোন হয়ে গেছে। দেখলেন স্কলারশিপ ম্যানেজ করতে হবে, না হলে পড়াশোনা বন্ধ। কিন্তু আমেরিকার কোন সার্টিফিকেট তার নেই!
এবার ভলান্টারি কাজ করা শুরু করলেন। আমেরিকায় যাদের বৈধভাবে বসবাসের কাগজপত্র নেই, তাদের অংক আর ইংরেজি শেখানো শুরু করলেন। এই কাজ দেখিয়ে আমেরিকার ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন থেকে ১০ হাজার ডলার স্কলারশিপ পেলেন।
একদিন ভার্সিটির নিউজ বোর্ডে নাসার একটি বিজ্ঞপ্তি দেখলেন। একটা প্রজেক্ট বানাতে হবে যেটা মহাকাশে যাবে। এই কাজটাতে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন আনিকা। একটা টিম গঠন করলেন। প্রোগ্রামিং শিখলেন নিজে নিজে।
নাসার সামপ্রতিক গবেষণাগুলো দেখা শুরু করলেন আনিকা। দেখলেন ওরা ‘ফাঙ্গি’ (ফাঙ্গাস) পাঠিয়েছে মহাকাশে- যেটার ৬০ ভাগ সারভাইভ করেছে। আনিকা জানান, ফাঙ্গি নিজের খাবার নিজে বানাতে পারে না। আমরা ভাবলাম, ফটোসিনথেসিস করে, এমন কিছু নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করি। নাসাতে এই প্রস্তাব দিলাম। তারা এটা গ্রহণ করে বড় একটা ফান্ড দিলো। কলেজ থেকে ল্যাবরেটরীতে কাজ করার অনুমতি মিললো, যেখানে প্রফেসররা ছাড়া আর কেউ যায় না। কিন্তু সেখানে আমরা চারজন গিয়ে কাজ করার অনুমতি পেলাম।
আইক্যাব খুবই প্রতিযোগিতামূলক একটা ওয়ার্কশপ। ভবিষ্যতে মহাকাশে কিছু করার জন্য হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এখানে। পুরো আমেরিকা থেকে ৬৮ জনকে নিয়েছে আইক্যাব ওয়ার্কশপে। সেখানে ফ্যাকাল্টি আছে, স্টুডেন্ট আছে, ইঞ্জিনিয়াররা আছে। তবে স্টুডেন্ট হিসেবে চান্স পাওয়া খুব কঠিন। টিমের চারজন থেকে আনিকা একাই চান্স পান সেখানে। নাসার ফ্যাকাল্টিতে রাখা হয় তাদের। তাদের সব কাজ দেখায়। রেঞ্জ কন্ট্রোল থেকে মহাকাশ যান পাঠানো পর্যন্ত। সেখানে নাসার বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের প্রেজেন্টেশন ছিল।
উৎক্ষেপণ করা রকেট আবার ফিরিয়ে আনা হয়। সেখানকার সব ডাটা কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের দেয়া হয়। আনন্দের ব্যাপার হলো, আনিকার দল গবেষণা করে যা যা তৈরি করেছিলেন মহাকাশে তার সবগুলোই কাজ করেছে। আনিকা বলেন, মজার একটা কাজ করেছি। কর্মশালায় কয়েকজনকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত শুনিয়ে দিয়েছি। যথেষ্ট পাগলামি, যথেষ্ট মজা করেছি। বাংলাদেশের নামও শোনেনি এমন কিছু মানুষের কাছে একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে পেরেছি, এটাই আমার জন্য বিশেষ ব্যাপার ছিল।