সামাজিক ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিযোগিতা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
সামাজিক ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়েই প্রতিযোগিতা। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সমাজের কোনো একটি সমস্যাকে ব্যবসায়িক উদ্যোগের মাধ্যমে সমাধানের পথ বাতলে দেন। আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতার নাম গ্লোবাল সোশ্যাল ভেনচার কম্পিটিশন (জিএসভিসি)। আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হাস স্কুল অব বিজনেস’। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের একটি দল। তবে খবর শুধু এটুকুই নয়। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া ‘ব্লাই-আই’ নামে তিন সদস্যের দলটি এরই মধ্যে বাজিমাত করেছে আঞ্চলিক পর্বে বিজয়ী হয়ে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের দলকে হারিয়ে তারা বিজয়ী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে মূল প্রতিযোগিতার টিকিট ছাড়াও পেয়েছে প্রায় নয় লাখ টাকার ‘প্রাইজমানি’।
দলটির তিন সদস্য হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির ও ফিন্যান্স বিভাগের ফজলে রাব্বী এবং সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের রাজু মিয়া। ফজলে রাব্বী বলেন, ‘ব্লাই-আই মূলত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের জন্য একটি ডিভাইস। যন্ত্রের নামেই আমাদের দলের নামকরণ করা হয়েছে।’
এই যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছেন রাজু মিয়া। যন্ত্রটির ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হুমায়ুন কবির ও মো. ফজলে এলাহি। এই দুজনই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ব্যবসার মডেল তুলে ধরছেন।
রাজু তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্র সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের দেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের চলাফেরার জন্য ছড়ি ছাড়া তেমন কোনো ভালো ডিভাইস নেই। তাঁদের এই সমস্যাটি আমরা সমাধানের চেষ্টা করেছি। ইতিমধ্যে নমুনা পণ্য বানিয়েছি।’ পথ চলার সময় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষকে নির্দেশনা দিতে পারে ‘ব্লাই-আই’ নামের যন্ত্রটি। সামনে কোনো বাধা থাকলে সেটা যেমন বলে দেয়, তেমনি কোন দিকে যেতে হবে সে নির্দেশনাও দিয়ে থাকে এই যন্ত্র। যন্ত্রটি ব্যবহার উপযোগী করতে আরও কিছুদিন সময় প্রয়োজন বলে জানালেন রাজু। তিনি আশা করছেন দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে পণ্যটি বাজারে আনতে পারবেন।
গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে থাইল্যান্ডের মিলেনিয়াম হিল্টন হোটেলে। আঞ্চলিক পর্বে বিজয়ী হতে ব্লাই-আই দলটাকে পেরোতে হয়েছে প্রতিযোগিতার কয়েকটি ধাপ। প্রথম পর্যায়ে অনলাইনে হয়েছে এই প্রতিযোগিতা। তাঁরা গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যবসার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন। এরপর যাচাই-বাছাইয়ের পর দক্ষিণ এশিয়ার ১২টি দল আঞ্চলিক পর্যায়ে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এখানেই বিজয়ী হয় ব্লাই-আই। ফজলে রাব্বী বলেন, ‘থাইল্যান্ডে প্রথম দিন সবাইকে এক মিনিট পণ্য সম্পর্কে উপস্থাপনার (এলিভেটর পিচ) সুযোগ দেওয়া হয়। এ পর্বে আমরা সেরা হয়ে এক হাজার ডলার পুরস্কার পাই।’
আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিল থাইল্যান্ডের দ্য ইনোভেশন-ড্রাইভেন এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ (আইডিই) সেন্টার। প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের ব্লাই-আই ছাড়াও বিজয়ী হয়েছে পাকিস্তানের আরও একটি দল।
আঞ্চলিক পর্বে উতরানো ‘ব্লাই-আই’ দলটির সদস্যদের নজর এখন জিএসভিসির চূড়ান্ত পর্বের দিকে। আঞ্চলিক পর্যায়ে বিজয়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দলগুলো নিয়ে ৬-৭ এপ্রিল বসবে মূল প্রতিযোগিতার আসর। তাই আটঘাট বেঁধেই বিশ্ববিজয়ী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটির সদস্যরা।