তিন শিক্ষার্থীর ন্যানো স্যাটেলাইট
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর তৈরি ন্যানো স্যাটেলাইট ‘ব্র্যাক অন্বেষা’, যেটির মাধ্যমে বাংলাদেশ সফলভাবে যাত্রা করতে চলেছে মহাকাশের পথে।
চলতি মাসের শুরুতে জাপানের কিতাকিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (কেআইটি) থেকে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ড. সৈয়দ সাদ আন্দালিব। পরে ন্যানো স্যাটেলাইটটি উেক্ষপণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এটিকে উেক্ষপণ করা এখন কেবলই সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এর আগে, গত বছরের জুন মাসে ন্যানো স্যাটেলাইট নির্মাণ ও মহাকাশে তা উেক্ষপণের জন্য জাপানের ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সঙ্গে চুক্তি করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। স্যাটেলাইটটির নকশা তৈরি, উপকরণ সংগ্রহ থেকে শুরু করে তৈরির সব কাজই করেছেন ব্র্যাকের তিন শিক্ষার্থী রায়হানা শামস ইসলাম অন্তরা, আবদুল্লা হিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মনোয়ার। তারা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল (ইইই) বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে এখন জাপানের কেআইটিতে স্নাতকোত্তর করছেন। তাদের প্রকল্পে প্রধান ইনভেস্টিগেটর হিসেবে রয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খলিলুর রহমান।
ন্যানো স্যাটেলাইট প্রকল্পের উদ্যোক্তারা বলেন, কৃষিকাজ, দুর্যোগ মোকাবিলা, নগরায়নসহ নানা বিষয়ে গবেষণার জন্য উচ্চমানের ছবি তুলে পাঠাবে স্যাটেলাইটটি। মহাকাশ-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করা হবে এর অন্যতম কাজ। এছাড়া বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে স্যাটেলাইটটি জাতীয় সংগীত বাজাবে। ‘অন্বেষা-৩বি’ পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার ওপরে অবস্থান করবে এবং পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করে আসতে এর সময় লাগবে ৯০ মিনিট। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দিনে চার থেকে ছয় বার উড়ে যাবে এটি।
জাপানের অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির মাধ্যমে ন্যানো স্যাটেলাইট উেক্ষপণের কাজ হলেও, ভূমি থেকে এটির নিয়ন্ত্রণের স্টেশন হচ্ছে বাংলাদেশে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক দল শিক্ষার্থী সানন্দ জগতি, বিজয় তালুকদার, মোজাম্মেল হক ও আইনুল হুদা গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন তৈরির কাজে রয়েছেন। এতে সার্বক্ষণিক সহায়তা করছে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থা (স্পারসো)। আর স্টেশনটি থেকে দিনে ছয়বার ব্র্যাক অন্বেষার সংগ্রহ করা তথ্য নামানো যাবে। এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সৈয়দ সাদ আন্দালিব বলেন, ‘ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরি একটি ছোট্ট পদক্ষেপ হলেও এতে অনেক বড় যাত্রার শুরু হলো।’ সহযোগী অধ্যাপক মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘ন্যানো স্যাটেলাইটটির মাধ্যমে আমাদের তৈরি প্রযুক্তি স্থানান্তর হচ্ছে, এতে জাতি হিসেবে আমরা এগিয়ে গেলাম।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার জাপানের কিতাকিউশু থেকে বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাখালী ক্যাম্পাসে ন্যানো স্যাটেলাইট হস্তান্তরের অনুষ্ঠানটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি দেখানো হয়।
ওই অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, জাপান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি তোশিয়ুকি নোগুচি, বুয়েটের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. কায়কোবাদ উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড ন্যাচারাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. জিয়াউদ্দীন আহমেদ। আর অনুষ্ঠানে জাপান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন কিউশুর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইউজি অই, পরিচালক মেংগু চো, প্রকল্পের উদ্যোক্তা তিন শিক্ষার্থী রায়হানা শামস ইসলাম, আবদুল্লা হিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মনোয়ার।
মহাকাশে উেক্ষপণের আগে এটিই ছিল বাংলাদেশে ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ দেখার শেষ সুযোগ।