যেভাবে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পেলাম

যেভাবে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পেলাম

  • অহিদুজ্জামান রকি

ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম উদ্যোক্তা হওয়ার। যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি তখন একবার ঈদের সময় দেখলাম, আমাদের পাড়ায় বড় ভাইয়েরা পাঁচ টাকা দামের ঈদকার্ড বিক্রি করছে। দেখে আমারও খুব ইচ্ছে হলো, আহা! আমিও যদি ওদের মতো ঈদকার্ড বিক্রি করতে পারতাম! এর কিছুদিন পর নিউমার্কেটে ঘুরতে গিয়ে দেখি আইডিয়াল প্রোডাক্টস নামের একটা দোকানের মেঝেতে ছড়ানো রয়েছে শতশত ঈদকার্ড। দেখে তো আমার চক্ষু চড়ক গাছ! দোকানীকে জিজ্ঞেস করলাম, ছোট কার্ডগুলোর দাম কত? বললেন, এক টাকা। শুনে তো আবারও চক্ষু চড়ক গাছে উঠল! বলে কি! মাত্র এক টাকা!!

কালবিলম্ব না করে ২০টি কার্ড কিনলাম। তারপর এলাকায় গিয়ে সেসব বিক্রি করলাম পাঁচ টাকা করে। নগদ আশি টাকা লাভ হলো। সেই থেকেই আমার স্বপ্ন উদ্যোক্তা হওয়ার এবং সেই স্বপ্ন নিয়েই একসময় এসএসসি পাশ করলাম, এইচএসসি পাশ করলাম। সময় এলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। আমার তো ইচ্ছে উদ্যোক্তা হওয়ার; তাই উদ্যোক্তা বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ আছে কিনা খোঁজ নিতে শুরু করলাম। অনেক খোঁজাখুজির পর জানলাম বাংলাদেশে শুধু ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতেই এ বিষয়ে স্নাতক পড়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু খরচ দেখে দমে গেলাম। বাবা সামান্য সরকারী চাকুরে, এত টাকার জোগান তিনি কিভাবে দেবেন!

unnamed2
ফুডি ফাইয়ে রয়েছে খাবার গ্রহণের পাশাপাশি আড্ডার ব্যবস্থা।

এরকম মন খারাপ করা সময়েই একদিন ফেসুবকে দেখলাম, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগে পড়ার জন্য বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে! আমার তখন মনে পড়ল আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসে পড়া দুটো লাইন—‘সুযোগ বারবার আসে না, একবারই আসে। সফলরা শুধু সেই সুযোগকে কাজে লাগায়।’

আমি তৎক্ষণাৎ বৃত্তির ব্যাপারে বিস্তারিত পড়ে আবেদন করলাম।

এর কিছুদিন পর আমার ডাক পড়ল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি তো খুশিতে ‘ইয়ায়ায়া হু’ বলে চিৎকার করে উঠলাম এই ভেবে যে বৃত্তিটা বুঝি পেয়েই গেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখি আমার মতো আরো ৩০০ জন বৃত্তিপ্রার্থী শিক্ষার্থী উপস্থিত। সবাই আবেদন করেছে। এর মধ্য থেকে সেরাদের বাছাই করে নেওয়া হবে। চলবে চারদিনের বাছাই পর্ব।

চারদিনের গ্রুমিং সেশনে নানাভাবে নিজের যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হলো। ব্যবসায়িক পরিকল্পনা দেওয়া থেকে শুরু করে আশুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে খাবার সংগ্রহ করা, ফুটপাতে বসে মুচির কাজ করা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিতর্কে অংশ নেওয়া ইত্যাদি নানা পরীক্ষা দিতে গিয়ে একে একে ঝরে পড়তে থাকলো বৃত্তিপ্রার্থীরা। অবশেষে ৩০০ জনের মধ্য থেকে টিকলাম মাত্র পাঁচজন। তিশা রহমান, আব্দুল্লাহ আল মাহদী, জাহিদ ইসলাম, তানজুমুল ইসলাম তারেক ও আমি।

এখন আমি পড়াশোনার পাশাপশি ‘ফুডিফাই’ নামে ফার্স্টফুডের একটি দোকান পরিচালনা করছি। আমার দোকানে ৯ জন কর্মী কাজ করছেন।

দ্বিতীয় বারের মতো আবারও ‘আর ইউ নেক্সট স্টার্টআপ’ শিরোনামে বৃত্তির জন্য দরখাস্ত আহ্বান করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগ। এবার বেশবরেণ্য দশজন পথিকৃৎ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর নামে দেওয়া হচ্ছে বৃত্তি। তারা হলেন, ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ (পিকেএসএফ), লতিফুর রহমান (ট্রান্সকম গ্রুপ),  আলহাজ্জ্ব সুফী মো. মিজানুর রহমান (পিএইচপি গ্রুপ), সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী (এপেক্স গ্রুপ), এম আনিস উদ দৌলা (এসিআই লিমিটেড), এ কে আজাদ (হা-মীম গ্রুপ), গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী (অ্যাডকম লিমিটেড),  রোকেয়া আফজাল রহমান (বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন্স এন্ট্রপ্রেনিউরশীপ) এবং মো. মজিবর রহমান (বিআরবি ক্যাবলস্ লিমিটেড)।

ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসের বৃদ্ধ সান্তিয়াগো দীর্ঘ ৮৪ দিন একটানা সমুদ্রে ভেসে ভেসে কাটিয়েছেন একটা মাছের জন্য। একফোঁটা ঘুমাননি পর্যন্ত। মনকে বলেছেন, ‘সুযোগ বারবার আসে না, একবারই আসে। আমাকে অপেক্ষা করতে হবে সুযোগের জন্য।’ আপনার সামনে হয়তো এবার সুযোগ এসেছে উদ্যোক্তা হওয়ার। এমন সুযোগ জীবনে আর নাও আসতে পারে। অতএব, একবার ঢু মারতে পারেন এই লিংকে: http://next-startup.net/favicon59-4

Sharing is caring!

1 Comment on this Post

Leave a Comment