ক্যাম্পাস স্টার ঐশ্বী
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
শাহরীমা জান্নাতের সঙ্গে ফোনালাপের একপর্যায়ে কথাটা বলতেই হলো, ‘আচ্ছা, আপনি কী কী পারেন না, সেটাই বরং বলুন।’ শুনে ওপাশ থেকে হাসলেন তিনি। বললেন, ‘অনেক কিছুই তো পারি না। তবে শেখার চেষ্টা করি। আর নানা রকম অভিজ্ঞতা অর্জনের ভাবনাও মাথায় থাকে।’
তা কী কী অভিজ্ঞতা আছে তাঁর ঝুলিতে? আর কী কী শেখা হলো? সেটাই বিস্তারিত শোনা যাক।
শাহরীমা জান্নাতের ডাকনাম ঐশ্বী। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখেছেন, প্রকৌশলী হবেন। উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে ভর্তি হয়ে গেলেন ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি)। সেই থেকে স্বপ্নগুলো আরও ডালপালা মেলতে শুরু করল। এমআইএসটিতে শাহরীমা পড়ছেন কম্পিউটার কৌশল বিভাগের শেষ বর্ষে। নিজ বিভাগের মেধাতালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানটি আছে তাঁর দখলে। সেই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধিনায়ক’ও। শাহরীমা জানালেন, ‘প্রতি সেমিস্টারে নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ক্যাপ্টেন নির্ধারণ করা হয়। ক্যাপ্টেনের কাজ হলো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করা। বর্তমান সেমিস্টারে আমি ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে আছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে তাঁর অর্জনের গল্প আছে আরও। ইউরোপিয়ান প্লানেট ফেডারেশনের আয়োজনে ২০১৬ সালে এমআইএসটি রোভার দলের হয়ে পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জে অংশ নেন শাহরীমা। তাঁদের তৈরি রোভার এশিয়ার মধ্যে তৃতীয় এবং বিশ্বের মধ্যে ২১ তম স্থান অর্জন করে। ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় হয়েছিলেন রানার আপ। ওদিকে ২০১৬ সালে আন্তবিভাগ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় রবীন্দ্রসংগীতে দখল করেন প্রথম স্থান। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন এমআইএসটি ডিবেট সোসাইটির সেক্রেটারি এবং ড্রামা অ্যান্ড ফিল্ম সোসাইটির সহসভাপতি পদে।
এ বছর ন্যাশনাল ইয়ুথ কাউন্সিলের আয়োজনে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ইয়ুথ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে দশজন তরুণ অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। শাহরীমা সেই দশজনের একজন হয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। বর্তমানে জাপান নিয়ন্ত্রিত (বেজড) আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড’-এর বাংলাদেশি শাখা ‘ইয়ুথ এগেইনস্ট হাঙ্গার’-এর এক্সিকিউটিভ মেম্বারের দায়িত্ব পালন করছেন।
মাত্র চার বছর বয়সে গান, নাচ আর অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল মেধাবী মেয়েটির। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে যেখানেই কোনো প্রতিযোগিতা হয়েছে, সেখানেই হাজির হয়েছেন। শাহরীমা জানান, ‘ছোটবেলা থেকে মা-বাবা সব সময় চাইতেন, আমি যেন শুধু বই নিয়ে বসে না থাকি। তাই যেখানেই কোনো প্রতিযোগিতা হয়েছে, তাদের শতব্যস্ততা থাকলেও আমাকে নিয়ে গিয়েছেন।’ নানা রকম প্রতিযোগিতার পুরস্কারে সেজেছে শাহরীমার ঘর। শুধু নাচ-গান নয়, শিখেছেন ‘তায়কোয়ান্দো’ও। ‘মা সব সময় চাইতেন আমি যেন কারও ওপর নির্ভরশীল না হয়ে থাকি। আত্মরক্ষার কথা ভেবেই তায়কোয়ান্দোতে নাম লিখিয়েছি।’ বলছিলেন তিনি। তবে শুধু নাম লেখানোতেই থেমে থাকেননি শাহরীমা। ২০০৫ সালে জুনিয়র তায়কোয়ান্দো চ্যাম্পিয়নশিপে ‘ফিমেল ক্যাটাগরি’ থেকে চ্যাম্পিয়ন খেতাব অর্জন করেন তিনি।
বাবা মো. শহীদুজ্জামান ও মা সৈয়দা আসিফা আশরাফীর দুই মেয়ের মধ্যে বড় শাহরীমার বেড়ে ওঠা খুলনা শহরে। করোনেশন হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং সরকারি এম এম সিটি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ তো ছিলই। জাতীয় পদার্থবিজ্ঞান অলম্পিয়াড-২০১২ তে নিজ বিভাগে দ্বিতীয় রানার আপ আর জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০১০–এ বিভাগীয় রানার আপ হয়েছিলেন। ২০০৯ ও ২০১০ সালে পর পর দুই বছর আন্তস্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা আর খুলনা বিভাগে ২০০৯ সালে জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন শাহরীমা।
এখন কোন স্বপ্ন পূরণের পথে ছুটছেন? বললেন, ‘গবেষণাধর্মী কাজ করতে চাই। ভিনদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এসে দেশে গবেষণার কাজ এগিয়ে নিতে চাই। সঙ্গে মা-বাবার জন্য আর দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে পারলে মনে করব আমি সার্থক।’