যেভাবে এমআইটির বৃত্তি পেলেন তাসফিয়া

যেভাবে এমআইটির বৃত্তি পেলেন তাসফিয়া

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তাফসিয়া শিকদার। বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে বাস করেন লন্ডনের নিউহ্যামে। চোখে স্বপ্ন ছিল, অধ্যবসায় ছিল। পরিশ্রম আর মেধার সুসম সমন্বয়ে পেয়েছেন বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে স্কলারশিপসহ পড়ার সুযোগ। লন্ডনে বাংলাদেশি অভিবাসী পরিবারের মেয়ে এই তাফসিয়া বোস্টনভিত্তিক এমআইটিতে প্রকৌশল ও পদার্থবিদ্যায় অধ্যয়ন করবেন।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তাফসিয়া শিকদার নিঃশর্ত শিক্ষাবৃত্তি লাভ করার মধ্য দিয়ে গর্বের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছেন খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে। এই এমআইটিতেই স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করেছেন চাঁদে হাঁটা মানব বাজ অলড্রিন। পড়াশোনায় অনন্য দক্ষতার কারণে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির উইম্যান ইন এসটিইএম সামার স্কুল-এ নির্বাচিত হন তাফসিয়া। প্রাক-বাছাইয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন তিনি। এমআইটির পক্ষ থেকে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে তাফসিয়াকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাছাই প্রক্রিয়ায় ইনস্টিটিউটের ইতিহাসে আপনি সবচেয়ে প্রতিভাবান ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের একজন। আমরা মনে করি, আপনি ও এমআইটির সেতুবন্ধন হবে উৎকৃষ্ট।’

লাখ মার্কিন ডলারের শিক্ষাবৃত্তি

তাফসিয়াকে মোট ২ লাখ মার্কিন ডলারের শিক্ষাবৃত্তি দেবে এমআইটি। টিউশন, বাসস্থান ও বইপত্রের খরচ বাবদ তাকে এ অর্থ দেওয়া হবে। তাফসিয়ার পরিবার স্কলারশিপের সুবাদে লন্ডনের নিউ হ্যাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে বাসা স্থানান্তর করতে যাচ্ছে। তিনি এমআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি অর্জনের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী মানুষজনের সঙ্গে পড়ালেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত।

নিউহ্যাম টু এমআইটি

তাফসিয়া বর্তমানে ‘নিউহ্যাম কলেজিয়েট সিক্সথ ফ্রম সেন্টার’ নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছেন। সেখান থেকেই তিনি এমআইটির স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেন। পরে যুক্তরাজ্যের সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি কফি শপে তার সাক্ষাৎকার নেয় এমআইটির একটি এডমিশন স্কাউট। স্কলারশিপ লাভের পর তাফসিয়া বলেন, এটা শুনতে বেশ গতানুগতিক।bd-pratidin-FS-08-04-17-12তবে আমি অনুমান করে বলতে পারি, আমি চাঁদের ওপর আছি। চাঁদে পা রাখা দ্বিতীয় মানব যেখানে লেখাপড়া করেছেন সেই একই জায়গায় যাচ্ছি, এমনটা জানতে পেরে আমি সত্যিই বিস্মিত। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তাই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকেই মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারে। নিজের মেধা আর পরিশ্রমে সেই স্বপ্ন পূরণও করতে পারে। এমনটাই বিশ্বাস করেন তাফসিয়া। তিনি বলেন, লন্ডনের ইস্ট ইন্ড থেকে কেন কেউ এমআইটিতে যেতে পারবে না? কেন আমাদের বড় বড় স্বপ্ন দেখা উচিত হবে না? বাস্তবে সেখানে যারা গিয়েছে তারা অনন্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রযুক্তির যেসব অগ্রগতি দেখেছি এর কৃতিত্ব তাদেরই। এই স্কলারশিপ তাদের মধ্যে আমাকে বিশেষ সুযোগ করে দেবে।

পরিবার

তাফসিয়ার বাবা মাহমুদ শিকদার (৪৬) একজন আইটি সাপোর্ট শ্রমিক এবং মা লাইলা সুলতানা (৪৩) একজন গৃহিণী। তাফসিয়ার রয়েছে দুই বড় ভাই সাইফ ও ফাহিম এবং এক ছোট ভাই ইউনুস। লন্ডনের ওয়েস্ট হ্যামের তিন বেডরুমের বাসাতে থাকেন স্পরিবারে। ১৯৯০ সালে তার বাবা বাংলাদেশ থেকে পরিবার নিয়ে লন্ডনে পারি জমান। টাওয়ার হ্যামলেটের নিকটস্থ বাসায় ওঠেন। সেখানে কলেজ জীবনেই তাফসিয়া জাপানের নাগোয়া শহরে পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এমআইটি

১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমআইটিকে গণনা করা হয়ে থাকে। র্যাংকিংয়ের দিক থেকে বিশ্বের সেরা ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে এমআইটি। এখানে পড়াশোনা করেছেন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি। এখানকার ছাত্র ছিলেন এমন ৭৬ জন পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান ও চাঁদে প্রথম অবতরণ করা মানুষ বাজ অলড্রিনও এখানেই পড়াশোনা করেছেন। এ বিষয়ে তাফসিয়া শিকদার বলেন, ‘এখানে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি অধ্যয়ন করেছেন। বিখ্যাত এসব ব্যক্তির পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারাই বড় অনুপ্রেরণা। এটা আপনাকে বিশেষ কিছু করার আত্মবিশ্বাস দেবে। ’

 আবেদন, বৃত্তি প্রক্রিয়া

এমআইটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি দীর্ঘসময় ধরে নিতে হয়। অসামান্য মেধাবীরাই এখানে পড়ার সুযোগ পান। পড়ালেখায় ভালো হওয়ার পাশাপাশি এখানে দেখা হয় একজন আবেদনকারী ব্যক্তি মানুষ হিসেবে কেমন, তার আগ্রহের বিষয় কী, সেই আগ্রহ থেকে কোনো আউটপুট এসেছে কিনা অর্থাৎ কোনো বিষয়ে আগ্রহ থাকার ব্যাপারটি শুধু বললেই হবে না, দেখাতে হবে নিজের আবেদনপত্রে বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে, শিক্ষকদের সুপারিশপত্র এবং সাক্ষাৎকারে জীবনের ছোট ছোট গল্পের মধ্য দিয়ে। এমআইটির আবেদনপত্র অনলাইনে পাওয়া যায় প্রতি বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে। জমা দিতে হয় শুরুর শিক্ষা বছরের জানুয়ারি মাসে। আবেদন করার শেষ সময় থাকে প্রতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই স্যাট-১ ও ২ দিয়ে ফেলতে হবে। আবেদন করার পর আপনি এমআইটি কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত বাছাইয়ের তথ্য জানতে পারবেন পরবর্তী মার্চের ভিতরেই। এখানে পড়াশোনার খরচ অনেক বেশি। কিন্তু অসচ্ছল পরিবার থেকে কেউ এলে তার জন্য রয়েছে এমআইটির পক্ষ থেকে বৃত্তি এবং আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা। এর জন্য প্রতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবেদন করতে হয়। মার্চে নির্বাচিতদের নাম জানিয়ে দেওয়া হয়। সবাই তাফসিয়ার মতো পূর্ণ বৃত্তি পান না। তাদের জন্য স্বল্পমেয়াদি চাকরি এবং খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ আছে এখানে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিনfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment