স্বর্ণপদকজয়ী নাদিয়ার গল্প
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ইউনিভার্সিটিতে প্রথম হয়েছি বলে যে শুধু পড়াশোনাতেই মগ্ন ছিলাম তা কিন্তু নয়। আমার ভার্সিটি লাইফ ছিল অনেক আনন্দময়। দিনভর চায়ের স্টলে আড্ডা, ক্লাস চলাকালে লুকিয়ে লুকিয়ে দুষ্টুমি—বাঁদরামি এবং ধরা খেয়ে ইনোসেন্ট ভাব নেওয়া—এসবই চলত প্রতিদিন। অনেক মজা করেছি, ছোট ছোট আনন্দঘন মুহূর্ত দিয়ে ভরপুর আমার স্মৃতির পাতা। এভাবেই ভার্সিটি লাইফের মধুময় স্মৃতির গল্প শুনাচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির হাতে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত নাদিয়া নাহার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট থেকে অনার্সে সর্বোচ্চ সিজিপিএ (৩.৯৯) ও মাস্টার্সেও সর্বোচ্চ সিজিপিএ (৪.০০) অর্জন করেন।
নাদিয়া নাহার জানান, ছোটবেলা থেকেই মেডিকেলে পড়ার শখ ছিল। নিজেকে কখনও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের লাইনে কল্পনা করেননি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ অর্জন করার পর মেডিকেল কোচিংয়ে ভর্তি হন; কিন্তু শিক্ষকরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাবজেক্টগুলোতে তার দক্ষতা দেখতে পেয়েছিলেন। তাকে বারবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বুয়েটে ভর্তি হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
একটু হেসে নাদিয়া বলেন, ‘খুব জেদি ছিলাম। মেডিকেল ছাড়া অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফরম পর্যন্ত আনতে চাইনি। তবুও বাবা জোরাজুরি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম পূরণ করেন। কে ভাবতে পেরেছিল মেডিকেল পরীক্ষায় অসফল হয়ে কোনো প্রস্তুতি ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তির (আইআইটি) মতো প্রথম সারির সাবজেক্ট পেয়ে বসব।’ আইআইটিতে ভর্তি হওয়ার পর জানতে পারলাম, আমার শিক্ষকরা আমার প্রতিভাকে ঠিক ধরতে পেরেছিলেন। প্রথম বর্ষেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম প্রোগ্রামিং আমি কতটা ভালোবাসি। বিভিন্ন প্রোগ্রামিং কনটেস্ট ও সফটওয়্যার প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশগ্রহণ করাটা একটি আসক্তি হয়ে দাঁড়ায়। সাফল্যেরও দেখা পাই। ২০১১ সালে ন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্টে ষষ্ঠ স্থান, ২০১৩ সালে ডিইউআইটিএস ক্যাম্পাস আইটি ফেস্টে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি।
প্রতিযোগিতাগুলোর পাশাপাশি নিজের পড়াশোনাও ঠিকমতো চালিয়ে গেছি। যার ফলে আমার এ সাফল্য। আমার সাফল্যের পেছনে আমার পরিবার, প্রিয় শিক্ষক আর বন্ধুদের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাদের অনুপ্রেরণা ও ভালোবাসাই আমাকে এত দূর আসতে সাহায্য করেছে। আরও অনেক পথ এখনও বাকি। এখন আমার লক্ষ্য, বাইরে থেকে পিএইচডি করে এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় অবদান রাখা। আমার স্বপ্নের বাংলাদেশকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে দেখতে চাই।