তাঁরা জোভিয়াল গার্লস
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
প্রোগ্রামারদের যে দলটার সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব, তার নাম জোভিয়াল গার্লস। দলের সদস্য উম্মে কুলসুম, ইদা আক্তার, তাহমিনা আক্তার, নুসরাত জাহান, শায়লা হামিদ ও ইসরাত জাহান—সবাই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। দলের নাম জোভিয়াল গার্লস কেন? দলনেতা উম্মে কুলসুম জানালেন, জোভিয়াল শব্দের অর্থ হলো ‘হাসিখুশি’। নামকরণের সার্থকতা প্রমাণ করতেই বোধ হয়, হাসিমুখে নিজেদের গল্প শোনালেন জোভিয়াল গার্লসের সদস্যরা।
দলের শুরুটা হয়েছিল একটানা ৩৬ ঘণ্টার নির্ঘুম পরিশ্রমের প্রতিযোগিতা দিয়ে। বিশাল বড় একটা ব্যাগে উম্মে কুলসুমের মা তাই যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভরে দিয়েছিলেন। ছয় সদস্যের বিশাল দল আর দলের দলনেতার বিশাল ব্যাগ—এ দুটো দিয়ে শুরুতেই তাঁরা অন্য প্রতিযোগীদের নজর কেড়েছিলেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত ‘ন্যাশনাল হ্যাকাথন ফর ওমেন’ নামের সেই আয়োজনের শেষেও অবশ্য নজর কেড়েছিল জোভিয়াল গার্লস। গত ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতার ‘লার্নিং অ্যান্ড এডুকেশন’ ক্যাটাগরিতে উম্মে কুলসুমের দলটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বিজয়ী দলের সদস্যরা ৫০ হাজার টাকাসহ প্রত্যেকে একটি করে স্বর্ণপদক পেয়েছেন।
স্রেফ মজা করতেই নাকি শুরুতে প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিল জোভিয়াল গার্লস। উম্মে কুলসুম যখন বলেছিলেন, ‘দেখো, আমরাই চ্যাম্পিয়ন হব,’ কথাটা তাই অন্যদের কাছে রসিকতা মনে হয়েছিল। তাঁরাই কি না সত্যি সত্যিই শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেন! কিন্তু স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পেছনের রহস্যটা কী? উত্তর এল দলনেতার কাছ থেকে, ‘আমরা এই প্রতিযোগিতায় প্লে অ্যান্ড লার্ন নামের যে অ্যাপটার পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিলাম, সেটা অন্য রকম। এই অ্যাপের মাধ্যমে আমরা কার্টুন অ্যানিমেশন যোগ করে শিশুদের পড়াশোনা সহজ করার উপায় বের করেছি। খেলতে খেলতে শিশুরা বর্ণমালা থেকে শুরু করে কবিতা, সাধারণ জ্ঞান এমনকি নৈতিক আচরণ শিখতে পারবে।’
দলটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও বড়। উচ্চারণ সঠিক করার পরীক্ষা ও ডিজিটাল ক্লাসরুমও যোগ করতে চান তাঁরা। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও অর্থের জোগান হলে তাঁরা বাণিজ্যিকভাবে অ্যাপটা বাজারে আনবেন বলে জানালেন। অ্যাপের একটা অনলাইন ভার্সন তৈরির পরিকল্পনাও আছে তাঁদের।
এমন অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা কীভাবে মাথায় এল? উম্মে কুলসুম জানালেন, ‘পরিবর্তন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন’-এর অধীনে তাঁরা একটি স্কুল পরিচালনা করেন। নাম ‘পরিবর্তন স্কুল’। সাভারে অবস্থিত এই স্কুলে সুবিধাবঞ্চিত ও দুস্থ শিশুদের বিনা মূল্যে পড়ানো হয়। ‘জোভিয়াল গার্লস’ ছাড়াও আরও অনেকে এই দাতব্য সংস্থার সদস্য। তাঁদের জমানো মাসিক চাঁদা থেকেই চলে স্কুলের কার্যক্রম। সেই স্কুলের শিশুদের পড়াতে গিয়েই প্লে অ্যান্ড লার্ন তৈরির কথা ভাবতে শুরু করেছিলেন।
কাজ চলছে আরও একটি প্রকল্পের। সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান বিডি ইনোভেশন আইইউসির আওতাধীন একটি প্রকল্পে নাম লিখিয়েছে জোভিয়াল গার্লস। আর ঈদ সামনে রেখে স্কুল নিয়ে ব্যস্ততা তো আছেই। স্কুলের শিক্ষার্থী শিশুদের জন্য নানা আয়োজনের ব্যবস্থা করতে মাঠে নেমেছে হাসিখুশি মেয়েদের দল।