ভয়েস অব জাহাঙ্গীরনগর
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
“ঘড়িতে এখন ১১টা ১ মিনিট। শুরু হলো ‘ভয়েস অব জাহাঙ্গীরনগর’-এর শুভযাত্রা। প্রিয় শ্রোতা, আপনাদের ভয়েস অব জাহাঙ্গীরনগরের পক্ষ থেকে অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি, ভালো আছেন, ভালো থাকবেন। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অনলাইন রেডিও স্টেশনের যাত্রা শুরু করেছি। অনেক সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে এই যাত্রা আমাদের কাছে কত যে আনন্দের, তা বলে বোঝানোর ভাষা নেই। প্রথম প্রগ্রাম হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই ‘হরর নাইট’। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি রানা রেদোয়ান, অতিথি হিসেবে আছেন সাদ্দাম হোসেন।” এভাবে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শুরু হয়েছিল এই রেডিওর। সেদিন ছিল ৩১ মার্চ, শুক্রবার। প্রথম দিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছে এক ঘণ্টা।
অনলাইন রেডিও তৈরির এই ভাবনাটি প্রথম এসেছিল দুই বন্ধুর মাথায়। তাঁরা দুজনই চতুর্থ বর্ষে পড়েন। সাজ্জাদ আহমেদ ইংরেজি আর রানা রেদোয়ান ভূগোল ও পরিবেশের ছাত্র। তখন তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি অডিও ডকুমেন্টারি বানাচ্ছিলেন। সেটি বানানো শেষ হলে কোনো রেডিওতে পাঠাবেন—এই ছিল পরিকল্পনা। পরে সে ভাবনা আরো বিস্তৃত হয়ে গেল। দুজনে মিলে আরো দুজনের সঙ্গে আলাপ করলেন। ব্যবস্থাপনার সুদীপ্ত সাহা ও পরিসংখ্যানের শহীদুল ইসলাম পরিকল্পনা শুনে বললেন, চলো শুরু করি। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম ব্যাচ বা আবর্তনের ছাত্র। সবাই মিলে কাজ শুরু করলেন। মিক্সলারডটকম (mixlr.com) থেকে ১৪ দিনের জন্য সার্ভার ফ্রি নিলেন সাজ্জাদ। এরপর তাঁরা কাজ ভাগ করে নিলেন। সাজ্জাদ প্রযুক্তিগত বিষয়, রানা আরজে, সুদীপ্ত প্রগ্রাম প্রডিউসার ও গ্রাফিকস ডিজাইনার, শহীদুল সাংস্কৃতিক ক্লাবগুলোর সমন্বয়ক হলেন। তৃতীয় বর্ষের আসিফুর রহমান হলেন প্রমোটার। ‘ভয়েস অব জাহাঙ্গীরনগর’ নামটি দিলেন সাজ্জাদ। প্রথম থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কার্যক্রমের গল্প শোনাতে চেয়েছে এই রেডিও। সে জন্য দ্বিতীয় দিন প্রচারিত হলো ‘সংস্কৃতির কথা’। তাতে ছিল ক্যাম্পাসের নানা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের গল্প। শুরুর দিকে আরো অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল ক্যাম্পাসের তারকাদের নিয়ে ‘তারকা সংলাপ’, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের জন্য সাহায্যের আহ্বান। টানা ১৪ দিন ফ্রি সার্ভার ব্যবহারের পর এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ১৫ ডলার পরের মাসের জন্য পেমেন্ট করা হলো। আস্তে আস্তে শ্রোতাও বাড়তে লাগল। প্রথম মাসেই শ্রোতা পাঁচ হাজারের বেশি হয়ে গেল। ফলে বাড়ি থেকে পড়ার খরচ বেশি বলে, বড় ভাইদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে রেডিওজেইউডটকম (radioju.com) চালু হলো। সেখানে লাইভ অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থাও হলো। এ ছাড়া তৈরি হলো ইউটিউব চ্যানেল—ভয়েস অব জাহাঙ্গীরনগর (voice of jahangirnagar)। এটির ফেসবুক পেজও আছে।
এই রেডিও নিয়ে বলতে গিয়ে অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রানা বললেন, ‘আমাদের একার পক্ষে সপ্তাহের সাত দিন অনুষ্ঠান চালানো সম্ভব নয়। ক্যাম্পাসের বড় ভাই ও প্রশাসন এগিয়ে এলে এই রেডিও আরো ভালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে ধরতে পারবে।’ আরেক প্রতিষ্ঠাতা সাজ্জাদ জানালেন, ‘আমরা এখানে সব ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে তুলে ধরতে চাই। তাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বেগবান হবে। ’ সুদীপ্ত শোনালেন তাঁদের অনুষ্ঠানের গল্প—“সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রেরণা ছড়াতে প্রতি সোমবার সফল ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ‘তারকা সংলাপ’, ক্যাম্পাসে দেখানো নাটক-সিনেমার অভিনেতা, অভিনেত্রী বা পরিচালককে নিয়ে প্রতি শনি ও বুধবার ‘সংস্কৃতির কথা’, ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শ ‘জ্ঞানের কথা’ রবি ও মঙ্গলবার, ভৌতিক গল্পের হরর নাইট শুক্রবার, এ ছাড়া বিভাগ, ব্যাচের বর্ষপূর্তি, পুনর্মিলন, অসুস্থদের সাহায্যের জন্য বিশেষ পর্ব প্রচারিত হয়। ”
এভাবেই ক্যাম্পাসে জনপ্রিয় হয়েছে এই রেডিও। ৩৩ আবর্তনের দেহলভী রেজাউল নামের এক শ্রোতা মেসেজ করেছিলেন—‘প্রতিদিন বাসায় ফেরার সময় এই রেডিওর অনুষ্ঠান শুনে পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে। আগে রান্না করতে বিরক্ত লাগত। কিন্তু এখন রেডিও শুনে শুনে রান্না করি বলে খারাপ লাগে না।’ রেডিও নিয়ে এক হলের নিরাপত্তাকর্মী আরিফ আহমেদ বললেন, ‘রাতে ডিউটির সময় এই রেডিও শুনে সময় কাটে।’ ৪২ আবর্তনের নিলাদ্রি শেখর বললেন, ‘এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা তোমাদের পাশে আছি।’ ৪৪-এর মাজেদুল ইসলাম জানালেন, ‘দিনে যাদের সঙ্গে গল্প হয়, রাতে তাদের কণ্ঠ শুনে খুব ভালো লাগে।’ নানা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতরাও দর্শকদের সাড়া পাচ্ছেন। ‘তারকা আলাপ’ প্রগ্রামে অংশ নেওয়া নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ফকির সাহেব নামে পরিচিত এক ছাত্র বললেন, ‘আমার অনুষ্ঠানের দিন ভারত, কানাডা ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে অনেকে এসএমএস, ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।’ তবে রেডিওটি অনেক সমস্যা নিয়ে চলছে। যন্ত্রপাতি রাখা ও শিল্পীদের বসার জন্য একটি স্টেশনরুম প্রয়োজন। ছেলেদের হলরুম থেকে প্রচারিত হয় বলে মেয়েরা অনুষ্ঠানে আসতে পারেন না। ভালো কনসোল বোর্ড ও মাইক্রোফোন দরকার, ভালো গতির ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন। এগুলোর জন্য লাখখানেক টাকা লাগবে। এসব হয়ে গেলে পূর্ণাঙ্গভাবে চলতে পারবে স্টেশন। প্রশাসন সাহায্য করলে ২০১৩ সালে কমিউনিটি রেডিও চালুর যে উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছিল, সেটি পূর্ণ হবে।