এ বছরও সেরা ইফতি

এ বছরও সেরা ইফতি

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

এ বছর সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় উচ্চ মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয় শাকিল রেজা ইফতি। ২০১৫ সালেও মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন ছিল সে।


দিনাজপুরের জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছিলেন শাকিল রেজা ইফতি। সেখানে পড়ার সময় তাঁর মায়ের কাছে সুখ-দুঃখের গল্প জানানোর জন্য প্রতিবেশী অনেক মহিলা আসতেন। গল্প করতেন। মা বাড়ির উঠোনে বসে তাঁদের কথা শুনতেন। পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসলেও সেসব কথা শোনার জন্য ইফতির কান খাড়া থাকত।

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভর্তি হয়েছিলেন একটি ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবে। বিকেলে অন্য বন্ধুরা যখন ফুটবল বা ক্রিকেট বল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন, তিনি থাকতেন ক্লাবে। অন্যদের সঙ্গে ইংরেজি অনুশীলন করতেন। কথা বলা, শোনা, পড়া—সব কিছুই মনোযোগ দিয়ে করতেন। ক্লাবে আসা ব্যক্তিদের প্রায় সবাই বয়সে তাঁর চেয়ে বেশ বড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, চাকরিপ্রার্থী, গৃহিণী। ক্লাবে তাঁর পারফরম্যান্স নিয়মিতভাবে ভালো হতে থাকলে একসময় ক্লাব মডারেটরের দায়িত্বও পান।

২০১২ সালে একটি সংবাদ সাময়িকীতে দেখেন, বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। বিভাগ হিসেবে থাকছে ভাষা ও সাহিত্য, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ ও মুক্তিযুদ্ধ।   পরের বছর প্রতিযোগিতা শুরু হলে নিজের দিনাজপুর জিলা স্কুলেও এ নোটিশ আসে। বিজ্ঞপ্তি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন, নিজের জন্য ভাষা ও সাহিত্যই বেশি মেলে। এতে মোট ৫০ মার্কের পরীক্ষা হবে। উপস্থিত বক্তৃতা, গল্প বলা নিয়ে মূল আয়োজন। বাংলা ও ইংরেজি দুই বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।

প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেলে ভালো, কিন্তু পেতেই হবে এ কথা কখনো চিন্তা করতেন না। নিজের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। ২০১৩ সালে নিজের স্কুল, উপজেলা, জেলা পেরিয়ে বিভাগ পর্যন্ত আসতে সক্ষম হন। ২০১৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেন। কিন্তু পুরস্কার জেতা সম্ভব হয় না।

২০১৫ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় পুরস্কার জেতেন। তাও এক্কেবারে চ্যাম্পিয়ন। ‘এ আমার অনন্য অনুভূতি। মফস্বল থেকে এসে সারা দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চ্যাম্পিয়ন হই। প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। ’

সৃজনশীল প্রতিযোগিতাকে সৃজনশীল হিসেবেই নিয়েছিলেন তিনি। তাই প্রতিযোগিতা উপলক্ষে আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার হয়নি। ‘আমার বই পড়া, মানুষের গল্প শোনা এবং ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবে অনুশীলন করার মধ্য দিয়েই প্রস্তুতি নিতাম। ’

গত বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় সৃজনশীল প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। ইতিমধ্যে এসএসসি পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। দিনাজপুর জিলা স্কুলের ইফতি উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার জন্য ভর্তি হয়েছেন রাজধানীর সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এ বছর সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে।

‘এবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। কিন্তু ঠিক সেভাবে উত্তেজনা নেই। প্রতিযোগিতার সব রাউন্ড হয়েছিল পাশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অথচ দুই বছর আগে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে হয়েছিল। আসতে হয়েছিল ঢাকায়। ’

২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বিজয়ী দলের সদস্য হিসেবে থাইল্যান্ড গিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। এ বছর যাচ্ছেন মালয়েশিয়ায়।

২০১৫ সালে বিজিবি-বিএসএফ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাম্বাসাডর হয়েছিলেন ইফতি। অবসরে বই পড়তে, ঘুড়ি ওড়াতে, সাইকেল চালাতে রবীন্দ্রসংগীত শুনতে, চিঠি লিখতে, বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ম করে ফেসবুকে-স্কাইপেতে চ্যাট করতে ভালো লাগে তাঁর।

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment