শাবিপ্রবির স্বেচ্ছাসেবী দল
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই দেখা গেল এক ঝাঁক ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। অনেকের কাঁধে ব্যাগ। যাদের সঙ্গে ব্যাগ নেই, তাদের হাতে আছে বই-খাতা। বয়সের দিক থেকে কাউকেই বিশ্ববিদ্যালয় তো দূরের কথা, কলেজের শিক্ষার্থীও মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই। হুট করে এমন দৃশ্য আপনাকে একটু দ্বিধায় ফেলতেই পারে। কিন্তু শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের এই দৃশ্যটা চেনা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কিন’-এর কল্যাণে ক্যাম্পাসে এই ছেলেমেয়েদের দলটাকে চোখে পড়ে নিয়মিতই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা অথবা গ্রামের অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে পড়ানোর কাজটা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে কিন স্কুল। প্রতিদিন বিকেলে বসে ক্লাস। ‘এখানকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কোনো না কোনো স্কুলে পড়ে। আমরা অনেকের খরচ বহন করি। এ ছাড়া খাতা-কলম ছাড়া বাকি শিক্ষা-উপকরণ আমরাই দিই’, জানালেন কিনের সভাপতি নিশান খানদানি। শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরাই এই ছেলেমেয়েদের শিক্ষক।
কিন্তু নামটা ‘কিন’ কেন?
‘কিন হচ্ছে একটা নৃতাত্ত্বিক শব্দ। এর অর্থ করলে দাঁড়ায় আত্মীয়। আমরা কিন। আমরা সবার আত্মীয়’, হাসিমুখে নামকরণের রহস্যটা জানালেন নিশান। ‘প্রতিষ্ঠাতা ভাইয়েরা নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছিলেন তো, তাই হয়তো এ নামটা সবার মাথায় এসেছে।’ প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ আসতে জানা গেল, প্রায় ১৪ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন কিনের সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একেকটা ব্যাচ বিদায় নিয়েছে, মুখগুলো বদলেছে, তাই বলে কিনের কার্যক্রমে ভাটা পড়েনি।
কেবল স্কুলই নয়, আরও চারটি ভাগ আছে কিনের: দাতব্য কর্মসূচি, শীতবস্ত্র বিতরণ, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনে রক্ত সংগ্রহ। দাতব্য কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছর বিভিন্ন সময় বইমেলা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
‘আমি প্রথম বর্ষ থেকে কিনের সদস্য। স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমগুলো দেখে আমি কিনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। আর এখানে কাজের চাপ নেই। যার সঙ্গে সময় মিলে যায়, সে কাজ করে। ক্লাসেরও ক্ষতি হয় না।’ নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহাত আহমেদ।
‘রক্ত সংগ্রহ করা আমাদের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে একটি। আমাদের সংগঠনের নম্বর পুরো সিলেটে ছড়িয়ে দেওয়া আছে। আমাদের কাছে আছে রক্তদাতাদের তালিকা। রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী দাতাদের জানানো হয়। তাঁরা গিয়ে রক্ত দিয়ে আসেন,’ নিশান জানালেন। প্রতিবছর শীতকালে গরিবদের জন্য শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণ করেন তাঁরা। এ ছাড়া সমাজের বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে কথা বলে, প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে সামাজিক সচেতনতা বিভাগ।
এত বড় একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালানোর জন্য তো আর্থিক সহায়তাও প্রয়োজন। নিশান জানালেন, তাঁরা কারও কাছ থেকে সরাসরি সাহায্য সাধারণত নেন না। ‘সদস্যদের কাছে মাসিক ১০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে পুরো ক্লাব চলে। কারও কাছে সরাসরি অর্থ সাহায্য আমরা নিই না। তবে কেউ চাইলে স্কুলের শিক্ষার্থীদের বই-খাতা ইত্যাদি কিনে দিতে পারেন।’
ক্লাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশান বলেন, ‘আমাদের সব সময়ই ইচ্ছা ছিল মানুষের জন্য কাজ করার। আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি। সব সদস্যের ওপর দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া আছে। সেভাবেই কাজ চলছে। আমার মনে হয় আমাদের আশপাশে যদি এ রকম আরও অনেক কিন গড়ে তোলা যায়, তাহলে আমাদের সমাজটা আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।’